ঢিলেঢালাভাবে শেষ হলো হরতাল, বাম জোটের দাবি ‘সফল’

নিজস্ব প্রতিবেদক আগস্ট ২৫, ২০২২, ০৩:১৭ পিএম

ঢাকাঃ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য, জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম এবং গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদের মতো গুরুত্বপূর্ণ জনদাবি নিয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোটের ডাকা হরতাল পালন করা হয়েছে অনেকটা ঢিলেঢালাভাবে। হরতালেও যান চলাচল স্বাভাবিক ছিল। রাজধানীর পল্টন মোড়ে বাম সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন। তবে মোড়ের প্রায় সব রাস্তাতেই চলে গাড়ি। আর মাঝখানে বক্তব্য-স্লোগানে হরতাল পালন করেন তারা।

আজ (বৃহস্পতিবার) ভোর ৬টা থেকে শুরু হওয়া হরতাল দুপুর ১২টায় পল্টন মোড়ে বিক্ষোভ সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।

হরতালের শুরুতে বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর শাহবাগ, কাঁটাবন, গুলিস্তান ও পল্টন এলাকায় মিছিল করেন সমর্থকরা। পরে পল্টন মোড়ে জোটের নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়ে মিছিল, স্লোগান ও গান-বাজনা করেন। এ সময় হরতাল সমর্থকদের সঙ্গে গাড়ি চালক, পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের কথা-কাটাকাটি ও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। দুপুর ১২টায় পল্টন মোড়ে জোট নেতারা হরতাল ‘সফল’ হয়েছে জানিয়ে রাস্তা ছেড়ে দেন।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, হরতালের শুরুতে শাহবাগ ও পল্টন এলাকায় মিছিল করেন বাম জোটের নেতারা। এরপর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে জোটের নেতাকর্মীরা পল্টন মোড়ে জড়ো হতে থাকেন। সকাল ৮টার পর পল্টন মোড়ে সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশে ও সবদিকে ব্যারিকেড দিয়ে যান চলাচল বন্ধের চেষ্টা করেন। এতে কিছুটা সফলও হন। তবে, পুলিশের সহযোগিতায় বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও সীমিত আকারে যান চলাচল অব্যাহত থাকে।

এছাড়া পল্টন মোড়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া নিয়ে কয়েক দফা পুলিশ, গাড়ি চালক ও আওয়ামী লীগের এক নেতার সঙ্গে হরতাল সমর্থকদের কথা কাটাকাটি ও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। তবে, আজ রাজধানী থেকে জোটের কোনো নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া যায়নি। এর বাইরে হরতালের সমর্থনে উদীচী শিল্পগোষ্ঠীর উদ্যোগে পল্টন মোড়ে অবস্থান নিয়ে গান-বাজনা করেন নেতাকর্মীরা।

এদিকে বাম জোটের হরতালকে কেন্দ্র করে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সর্তক অবস্থান থাকতে দেখা গেছে। এর মধ্যে পল্টন এলাকায় প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পাশাপাশি পল্টন মোড়ে পুলিশের জল-কামানসহ বিক্ষোভ দমনের কয়েকটি গাড়ি অবস্থান করতে দেখা গেছে।  

বিক্ষোভ সমাবেশে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, বাংলাদেশের অধিকাংশ জনগণ এই হরতালকে সমর্থন করেছে। সরকার দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে জ্বালানির দাম আবার বাড়িয়ে আগুনে ঘি ঢেলে দিলো। কৃষকের উৎপাদনে ধস ডেকে আনলো যাতে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করা যায়। এই সরকার লুটপাট করে এবং লুটেরাদের লুটপাটের সুযোগ করে দিয়ে ক্ষমতায় আছে।

তিনি দেশবাসীকে রাজপথে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আগামীতে আমরা অবরোধের মতো কর্মসূচি দেবো।

বাসদ সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ বলেন, সারাদেশে হরতাল পালন করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা। এতে পুলিশ ও সরকারদলীয় সন্ত্রাসীরা আমাদের নেতাকর্মীদের উপর হামলা করেছে। আমাদের বেশ কয়েকজন নেতা আটক হয়েছেন। জনগণ সমর্থন দিয়েছে আজকের হরতালে। নানা কারণ দেখিয়ে সরকার জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে যখন দাম কমে তখন আমাদের দেশে দাম কমে না। জনগণের টাকা লুট করছে মুনাফালোভীরা।

সিপিবির সভাপতি শাহ আলম বলেন, ৯৫ ভাগের অর্থনীতি এক ধরনের আর ৫ ভাগের অর্থনীতি অন্য ধরনের। সরকার ৫ ভাগের অর্থনীতির পক্ষে। যে নীতিতে অর্থনীতি চলছে তাতে দাম কমবে না। তাই দরিদ্রদের মাঝে রেশনিং পদ্ধতিতে চাল, ডালসহ পণ্য বিতরণ করুন।

সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন সিপিবির সহ-সভাপতি মিহির ঘোষ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদের সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, বাসদ (মার্ক্সবাদী) মাসুদ রানা, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ অব বাংলাদেশের আব্দুস সাত্তার প্রমুখ।

এমবুইউ