কথাবার্তা বলছেন খালেদা জিয়া, রয়েছেন নিবিড় পর্যবেক্ষণে

নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ১২, ২০২২, ০১:১৮ পিএম

ঢাকাঃ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল আছে। তিনি স্বাভাবিক কথাবার্তাও বলছেন। তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।

তবে তার চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খালেদা জিয়ার হার্টে রিং বসানো হয়েছে যে এখনও ২৪ ঘণ্টা হয়নি। এসব ক্ষেত্রে ৭২ ঘণ্টার আগ পর্যন্ত রোগীর প্রকৃত অবস্থা বোঝা যায় না। তাই ম্যাডামের বর্তমান যে শারীরিক অবস্থা, এতে বলা যায় আপাতত স্থিতিশীল আছেন।

রোববার (১২ জুন) সকালে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সদস্য শায়রুল কবির খান একথা জানিয়েছেন।

শায়রুল বলেন, 'খালেদা জিয়ার অবস্থা স্থিতিশীল আছে। দুশ্চিন্তা করার মতো পরিস্থিতি নেই। তিনি কথা-বার্তা বলতে পারছেন।'

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির একজন চিকিৎসক নেতা বলেন, ম্যাডামের মতো ভিভিআইপি মানুষদের চিকিৎসা করা খুব সহজ কাজ নয়। তাদের মতো মানুষদের অনেকে হার্টে রিং পরাতে অনুমতি দেন না। সেখানে ম্যাডাম তার মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করছেন।

তিনি আরও বলেন, ম্যাডামের মেইন আর্টারিতে ৯৯ শতাংশ ব্লক পাওয়া যায়। সেখানে রিং বসানো হয়েছে। বাকি ব্লকগুলো ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হচ্ছে। কারণ উনার শরীরে অন্য রোগ রয়েছে, এখন দীর্ঘ সময় ধরে অপারেশন করতে গেলে তখন কোনটা কি হয়ে যায় বলা যায় না। যেমন কাল (শনিবার) রিং বসানোর অপারেশনের সময় উনার ডায়াবেটিস অনেক হাই ছিল। তবে ম্যাডামের বর্তমান শারীরিক অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল, এটা বলা যায়।

রোববার (১২ জুন) সকাল সোয়া ৯টার দিকে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ম্যাডামের এনজিওগ্রাম করা হয়েছে, হার্টে রিং বসানো হয়েছে। উনি এখনও সিসিইউতে আছেন। তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা এখন তাকে অবজারভেশনে রাখছেন। এটি শেষে হলে তার চিকিৎসার জন্য পরবর্তী করণীয় কি সেটা মেডিকেল বোর্ডের সদস্যা বসে সিদ্ধান্ত নেবেন। ম্যাডামের অবস্থা সম্পর্কে এর বেশি কিছু বলার নেই।

বিএনপির একটি সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার নিয়মিত খোঁজ রাখছেন পরিবারের সদস্যারা। লন্ডনে অবস্থিত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত  চেয়ারম্যান ও ছেলে তারেক রহমান সরাসরি চিকিৎসকদের কাছ থেকে মায়ের সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। তার স্ত্রী ডা. জুবায়েদা রহমানও চিকিৎসকদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছেন। অন্যদিকে ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দ শর্মিলা রহমান সিঁথি বিএনপির চিকিৎসক ও খালেদা জিয়ার ভাই-বোনদের কাছ থেকে শাশুড়ির শারীরিক অবস্থার খোঁজ রাখছেন। তবে তিনি শাশুড়িকে দেখতে দেশে আসবেন কি না, সেটি এখনও ঠিক হয়নি।

শনিবার (১১ জুন) এক সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, তার মাইল্ড হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। উনার শ্বাসকষ্টও আছে। হার্ট অ্যাটাক পর রিং বসানো হয়েছে। চিকিৎসকরা আশা করছেন, আপাতত হার্টের সমস্যা থেকে ম্যাডাম রিলিফ পেয়েছেন।

খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল।

শুক্রবার দিবাগত রাতে হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েন খালেদা জিয়া। পরে দ্রুত তাতে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। 

গত বছরের ১৩ নভেম্বর থেকে খালেদা জিয়া রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এরপর তার শরীরে কয়েক দফায় অস্ত্রোপচার করা হয়। ২৮ নভেম্বর চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হয়েছেন।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। সেই দিনই তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। পরবর্তী সময়ে সেই সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করেন হাইকোর্ট। পরে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলাতেও তাঁকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে সরকারপ্রধানের নির্বাহী আদেশে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ শর্তসাপেক্ষে দণ্ড স্থগিত করে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে ছয় মাসের জন্য সাময়িকভাবে মুক্তি দেওয়া হয়। এরপর কয়েক দফায় খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

এমবুইউ