ঢাকাঃ জাতিসংঘের অধীনে একটি জাতীয় সরকার গঠনের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ জনতা পার্টির (বিজেপি) প্রতিষ্ঠাতা মিঠুন চৌধুরী। তিনি আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিশেষ ভূমিকা পালন করার জন্য জাতিসংঘের মহাসচিবকে আহ্বান জানাবেন বলে জানান।
শনিবার (২৯ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতি ও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নতুন ফর্মুলা বিষয়ক’ এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে মিঠুন চৌধুরী বলেন, বিশ্বের সব দেশ ও জাতির কাছে জাতিসংঘ মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পূর্ণ জাতিসংঘের নিয়ন্ত্রণে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের ১০ জন ও অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের পাঁচজন ও সুশীল সমাজের পাঁচজন নিয়ে একটি নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে। সেই সরকারের মেয়াদ থাকবে তিন মাস। এই তিন মাসের মধ্যে নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকার একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেবে। বর্তমান সরকার অবশ্যই তাদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে পার্লামেন্ট ভেঙে দেবে। আর পুরো বিষয়টি সম্পূর্ণ বিশ্বস্ততার সঙ্গে তদারকি করবে জাতিসংঘ।
তিনি বলেন, আমরা রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনতে চাই। বড় দলগুলো সাধারণ জনগণকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলায় ব্যস্ত। সবাইকে মিথ্যা বলা হচ্ছে, উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে দেশ। অথচ নিম্নমানের চালের কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা। এক কেজি পোলট্রি মুরগি ১৮০ টাকা। দুর্নীতি করে সমস্ত টাকা বিদেশে পাচার করা হচ্ছে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় অসহায় সাধারণ মানুষ। অথচ মুখে আমরা বলি সাধারণ মানুষ খুব সুখে আছে।
বিজেপি সভাপতি বলেন, দেশের সার্বিক অবস্থাটা নতুন করে বলার কিছু নেই। আমেরিকা আমাদের প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, তাতেই সরকারের ভাবমূর্তি বোঝা যাচ্ছে।
জাতীয় নির্বাচনে জনগণের উৎকণ্ঠা তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনের আগে সাধারণ মানুষ চরম দুশ্চিন্তায় থাকেন, কখন জানি আমাদের কী হয়। কারণ বাংলাদেশের বড় দলগুলোর কাছে জনগণ একেবারে জিম্মি। তারা কেউ কাউকে ছাড় দেয় না, কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে চায় না। এ থেকে সাধারণ জনগণের মুক্তির উপায় কী?
তিনি বলেন, আমাদের সরকার হবে মানবতার সরকার, আমাদের সরকার হবে জবাবদিহি সরকার৷ সে পরিপ্রেক্ষিতে রাজনীতিতে আমরা কিছু গুণগত পরিবর্তন আনব। তার মধ্যে রয়েছে; দুই বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী নয়, বাংলাদেশের রাজনীতিতে এটি প্রতিষ্ঠা করা হবে৷ রাজনীতিতে কালো শব্দটা পরিহার করা হবে। সংখ্যালঘুদের জন্য পৃথক সুরক্ষা আইন, সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয়, সংখ্যালঘু কমিশন ও বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে নির্যাতিত পরিবারগুলোকে আইনি সহযোগিতা প্রদান করা হবে৷ শুধু ঢাকা কেন্দ্ৰীক প্রশাসন নয়, প্রশাসনকে বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে। প্রত্যেক বিভাগকে প্রাদেশিক সরকারে রূপান্তরিত করা হবে৷
তিনি আরও বলেন, বিজেপি ক্ষমতায় আসলে, দেশের সকল শিক্ষা ব্যবস্থাকে সার্টিফিকেটমুখী না করে কারিগরি শিক্ষাকে প্রাধান্য দেওয়া হবে৷ সে লক্ষ্যে প্রত্যেক উপজেলা ও জেলায় টেকনিক্যাল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হবে৷ বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করা হবে৷ পার্লামেন্টে উচ্চ কক্ষ ও নিম্ন কক্ষ প্রতিষ্ঠা করাসহ ধর্মের ভিত্তিতে নয়, সকল নারীদের অধিকার সমানভাবে প্রতিষ্ঠা করা হবে৷
বর্তমানে দেশে ‘রাজনৈতিক দেউলিয়াপনা’ চলছে দাবি করে মিঠুন চৌধুরী বলেন, ‘এর সমাধান শুধু জাতিসংঘ দায়িত্ব নিলেই সম্ভব। আমরা চাই জাতিসংঘের অধীনে একটি জাতীয় সরকার গঠন হোক। সেই সরকার হবে নির্বাচনকালীন সরকার। সময় থাকবে তিন মাস এবং সেই সরকার একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেবে, সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।’
সংবাদ সম্মেলনে থেকে জানানো হয়, বাংলাদেশ জনতা পার্টি আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থিতা প্রদান করবে এবং এককভাবে নির্বাচন করার লক্ষ্যে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহ হতে সারা দেশে গণসংযোগ ও প্রার্থিতা বাছাই প্রক্রিয়া শুরু করবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দলটির অন্য নেতাকর্মীরা।
আগামীনিউজ/বুরহান