ঢাকাঃ চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমানের কবর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে ‘হাস্যকর’ বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমানের লাশ যে নেই, তা খালেদা জিয়াসহ বিএনপির নেতারাও ভালো করে জানেন-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি মহাসচিব এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট)বিএনপির উদ্যোগে ’২১ আগস্টের চক্রান্তমূলক গ্রেনেড হামলা’ শীর্ষক ‘ইতিহাস কথা কয়’ ব্যানারে এই ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তিনি বলেন, “ আজকেই আওয়ামী লীগের সভানেত্রী যিনি একটা অত্যন্ত নিশিরাতের ভোটের মধ্য দিয়ে নিজেকে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করে্ছেন তিনি আজকেও আবার বিশোষগার করেছেন আমাদের স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের বিরুদ্ধে। তিনি তার মাজার সম্পর্কে কথা বলেছেন, তার একাত্তর সালের যুদ্ধের ভূমিকা নিয়েও কথা বলেছেন। এটা একটা হাস্যকর বক্তব্য তিনি(প্রধানমন্ত্রী) রেখেছেন।”
তিনি বলেন, “এই বক্তব্যগুলো থেকে প্রমাণিত হয় যে, এরা কতটা প্রতিহিংসা পরায়ন যে তারা যিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন তার ন্যুনতম যে স্বীকৃতি সেই স্বীকৃতি দিতেও তারা নারাজ। আজকে এটা ঐতিহাসিকভাবে সত্য, দিবালোকের মতো সত্য যে, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তিনি রনাঙ্গনের থেকেই যুদ্ধ করেছেন, রনাঙ্গনে থেকেই যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন। এটা দিবালোকের মতো সত্য যে আজকে তিনি (জিয়াউর রহমান) যেদিন শাহাদাত বরণ করে সেদিন এদেশের লক্ষ্ লক্ষ্ মানুষ তার জন্য কেঁদেছিলো এবং মানিক মিয়া এভিনিউতে লক্ষ লক্ষ মানুষের তার জানাজায় অংশ গ্রহনের মধ্য দিয়ে তিনি যে কত জনপ্রিয় নেতা ছিলেন সেটা প্রমাণিত হয়েছে।”
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আওয়ামী লীগ সংবিধান লঙ্ঘন করেছে, আওয়ামী লীগ যেখানে সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রদ্রোহিতার কাজ করেছে। তারা গণতন্ত্র হত্যা করেছে, ভোটের অধিকার লুট করেছে, বাংলাদেশকে একটা তাবেদার রাষ্ট্রের পরিণত করেছে। সত্যিকার অর্থে বলতে কি তারা আজকে জনগনের সমস্ত অধিকার ছিনিয়ে নিয়ে এটাকে একটা পুরোপুরি তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করতে চলেছে। আওয়ামী লীগ বেশিদিন ক্ষমতায় থাকলে বাংলাদেশী যে জাতীয়তাবাদ, বাংলাদেশে যে জাতি তার অস্তিত্ব রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে।”
তিনি বলেন, “আজকে আমাদের শপথ নিতে হবে, আজকে ২১ আগস্টের ঘটনাই বলুন, ৩৫ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলার, অসংখ্য যে হত্যা হচ্ছে, খুন হচ্ছে, গুম হচ্ছে- এগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে হলে আজকে জনগনের ঈস্পাত কঠিন ঐক্য দরকার। এর নেতৃত্ব দেবেন আমরা বিশ্বাস করি আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে দেশে সেই গণঐক্য গড়ে উঠবে, জনতার ঐক্য গড়ে উঠবে, সেই ঐক্যের মধ্য আমরা বাধ্য করবো এই ফ্যাসিস্ট গনবিরোধী যে সরকার রয়েছে তাদেরকে পদত্যাগ করিয়ে একটি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ও স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠার করা। এই লক্ষ্যে আমাদেরকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।”
২১ আগস্টের ঘটনার প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “২১ আগস্ট যে একটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তের প্রথম সোপান ছিলো। প্রকৃতপক্ষে ২১ আগস্ট একটি সুদুরপ্রসারী চক্রান্ত বাংলাদেশকে আবার গণতন্ত্রহীন করার জন্য, বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্নগুলোকে ভেঙে চুরমার করে দেয়ার জন্য, বাংলাদেশ যে একটি সত্যিকার অর্থে সুখী-সমৃদ্ধ রাষ্ট্র নির্মিত হবে সেই স্বপ্নকে পুরোপুরি ভেঙে দেয়ার জন্য ২১ আগস্ট।”
তিনি বলেন, “২১ আগস্ট এবং ১/১১ সেজন্য কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ১/১১ ঘটনার জন ২১ আগস্ট ছিলো একটা প্রাথমিক চক্রান্ত। ঝূঁকিটা বড় ছিলো। আমরা এই ধরনের যে ঘটনা বলুন, দুর্ঘটনার বলুন আমরা এর ঘোরতর বিরোধী। বিএনপি সবসময় যেকোনো রকম অন্যায়, হত্যা এবং সংঘাতের বিরুদ্ধে একটি রাজনৈতিক দল। সেজন্য ওই সময়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তিনি যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, মন্ত্রিসভার সদস্যবৃন্দ বিএনপির ওই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন, প্রতিবাদ করেছেন এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ততকালীন বিরোধী দলীয় নেতা(শেখ হাসিনা) বাসায় যেতে চেয়েছিলেন কিন্তু তাকে যেতে দেয়া হয়নি, বাঁধা দেয়া হয়েছিলো।
তিনি বলেন, “আমি শুধু বলতে চাই, ২১ আগস্টের পুরো বিষয়টা ছিলো একটা রাজনৈতিক বিষয়, প্রতিহিংসার রাজনীতি, চক্রান্তের রাজনীতির বিষয়। বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দিতে দেয়া হবে না, বাংলাদেশকে একটা তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করা হবে, বাংলাদেশের মানুষের অধিকারগুলোকে ছিনিয়ে নেয়া হবে এবং সত্যিকার অর্থেই এদেশকে একটা নতজানু দেশ হিসেবে পরিণত করা হবে-সেটাই ছিলো উদ্দেশ্য, তার একটা অংশ ২১ আগস্ট।”
তিনি বলেন, “আমাদের আইনজীবিবৃন্দ, আলোচকবৃন্দ যারা এখানে বক্তব্য রেখেছেন বিশেষ করে আমাদের প্রধান অতিথি তারেক রহমান তিনি যে বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন এটাতে প্রমাণিত হয়েছে যে, ২১ আগস্ট ছিলো সম্পূর্ণভাবে একটা সাজানো নাটক এবং সাজানো নাটকের ফলেই আওয়ামী লীগ আজকে ক্ষমতায় বসে আছে। সেজন্য আমরা খুব পরিস্কার করে বলতে পারি- ওই ঘটনার বেনিফেসিয়ারি হচ্ছে আওয়ামী লীগ। সেই কারণে আজকে তারা এটাকে ভিন্ন ভাবে ব্যাখ্যা জনগনের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে চায়।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘‘২১ আগস্টের ঘটনাটি ছিলো একটা চক্রান্ত। এটা কোনোক্রমে এই ধরনের ঘটনা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল যে দল মধ্যপন্থি গণতান্ত্রিক জাতীয়বাদ ও দেশপ্রেমিকের দল এবং মুক্তিযোদ্ধা স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের দল কখনোই এটাকে সমর্থন করতে পারে না।যে সময় ঘটনা ঘটেছে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আমরা ক্ষমতায় ছিলাম। তিনি সঙ্গে সঙ্গে এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি এ্ই ঘটনার যিনি ভিকটিম আজকের প্রধানমন্ত্রী তাকে সমবেদনা জানানোর জন্য বাসায় যেতে চেয়েছিলো, আমাদের প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ আইভি রহমানকে দেখার জন্য সিএম্এইচএ গিয়েছিলেন। তিনি সঙ্গে সঙ্গে বিচার বিভাগীয় তদন্তের ব্যবস্থা করেছিলেন, তিনি সঙ্গে সঙ্গে তদন্ত যাতে নিরপেক্ষ হয় এবং আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন হয় সেজন্য তিনি এফবিআই ও ইন্টারপোলকে আহবান করেছিলেন, তারা দেশে এসে্ছিলো। কিন্তু যারা ভিকটিম তারা কিন্তু সহযোগিতা করেনি। শেখ হাসিনার যে গাড়িতে গুলি হয়েছিলো সেই গাড়িটিকে কিন্তু এফবিআই ও ইন্টারপোলকে তদন্ত করতে দেয়া হয় নাই, যেতে দেয়া হয় নাই।”
তিনি বলেন, “২১ আগস্টের মামলার ফরমায়েসী বিচার হয়েছে, সুবিচার হয়নি। সুবিচার হওয়ার কথা না আজকে এই স্বৈরাচার সরকারের সময়ে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে- কেনো? এটা একটা চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র। এই চক্রান্ত হচ্ছে জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এবং কারা করেছে? যারা বাংলাদেশের উন্নয়ন চায় না, যারা বাংলাদেশ স্বাধীন-সার্বভৌম থাকুক চায় না, যারা বাংলাদেশ একটা স্বনির্ভর ও উন্নত দেশ হোক চায় না, যারা মাথা উঁচু করে দাঁড়াক চায় না-তাদের ষড়যন্ত্র। এই ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানসহ বিএনপি নেতাদেরকে ষড়যন্ত্র মূলকভাবে ফরমায়েসী রায়ের মাধ্যমে সাজা দিয়েছে।”
বিএনপি মহাসচিবের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরীর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, আইন বিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল, মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান বক্তব্য রাখেন।