ব্রাহ্মনবাড়িয়াঃ অবশেষে জীবন যুদ্ধে হেরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলেন আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের সাথী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য সুলতা সাহা।
রোববার (২৫ এপ্রিল) রাত পৌনে ১১টার দিকে ২৫০শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের অর্থোপেডিক ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃস্বাস ত্যাগ করেন।
রাত ১১টায় সুলতা সাহার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন হাসপাতালে জরুরী বিভাগের চিকিৎসক জামাল হোসাইন।
মৃত্যুকালে সুলতা সাহার বয়স হয়েছিল ৫৫ বছর। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার পাইকপাড়া এলাকার কিরণ চন্দ্র সাহার স্ত্রী।
গত ২২ ও ২৩ এপ্রিল আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের কান্ডারী সুলতা সাহার অসুস্থতা নিয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী কার্যলয় থেকে তার অসুস্থতার বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হয়। জেলা আওয়ামিলীগ, মহিলা আওয়ামিলীগ, জেলা ছাত্রলীগ, সাংবাদিক ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীরা সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলা শহরের পাইকপাড়ার বাসিন্দা কিরণ চন্দ্র সাহার স্ত্রী সুলতা সাহা। তিনি ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য।
তাছাড়া তিনি নির্বাচনও করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পৌরসভার সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে। আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রাজনীতির মাঠে ছিলেন সুলতা সাহা। যখন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ কম ছিল, সে সময় বিরোধী দলে থেকেও আন্দোলন সংগ্রামে অংশ নিয়েছেন তিনি।
তিনি একাই নয়, আন্দোলনে নিয়ে আসতেন তার সাথে অন্যান্য নারীদের। তিনি দীর্ঘদিন যাবত নানান রোগে ভুলছিলেন।
গত ১৪ এপ্রিল বাড়ির আঙিনায় হোঁচট খেয়ে পড়ে গিয়ে কোমড়ের হাড় ভেঙ্গে যায় সুলতার। পরে তাকে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সে সময়ও তার ঔষধ কিনে এনে খাওয়ার মতো সাধ্য ছিল না কিরণ চন্দ্র সাহার।
চট্রগ্রাম বিভাগের শ্রেষ্ঠ জয়তী ও নারী নেত্রী তাসলিমা সুলতানা খানম নিশাত ব্যক্তিগত ভাবে তাকে সহায়তা করার চেষ্টা করেন। ওই সময় নিশাত ছাড়া সুলতার পাশে কেউ ছিল না। দিন দিন তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন সুলতা সাহা।
হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, সুলতাকে ঢাকায় নিয়ে উন্নত চিকিৎসা করাতে হবে, কিন্তু সুলতার উন্নত চিকিৎসা করার মত অর্থনৈতিক সামর্থ ছিল না।
সুলতা সাহাকে নিয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে সুলতার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নজরে আসে। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার শাহ আলী ফরহাদ সাংবাদিক আবুল হাসনাত মো. রাফি'র মাধ্যমে সুলতা সাহার শারীরিক অবস্থার খোঁজ খবর নেন।
তিনি সুলতা সাহার উন্নত চিকিৎসার সহায়তার আশ্বাস প্রদান করেন। সুলতার উন্নত চিকিৎসার দিতে আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শেষ হয়েছিল। কিন্তু তার আগেই রোববার রাতে সুলতা সাহা মারা যান।
এছাড়াও সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর-৩ আসনের সাংসদ সদস্য র.আর.ম উবাউদুল মোক্তাদির চৌধুরী ও পৌরসভার মেয়র নায়ার কবীর, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ সাংবাদিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা চিকিৎসার জন্য অর্থনৈতিক সহায়তা করেন।
আগামীনিউজ/জনী