ঢাকাঃ বরিশাল জেলার আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক আবুল হাসানাত আবদুল্লাহকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাত সোয়া ৮টার দিকে হঠাৎ করে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায় তার। এর এক ঘণ্টা পরেই তাকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তিনি হাসপাতালটির আইসিইউতে রয়েছেন।
চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর একান্ত সচিব (পিএস) খায়রুল বাশার বলেন, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ বেশ কিছুদিন ধরে সংসদ ভবন এলাকার সরকারি বাসভবনে অবস্থান করছিলেন।
রাত সোয়া ৮টার দিকে হঠাৎ শ্বাসকষ্ট অনুভব করেন তিনি। শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার অবস্থা গুরুতর হওয়ায় ভর্তির পর চিকিৎসকের পরামর্শে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে দ্রুত লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়।
এরপর জরুরি বিভাগ থেকে তাকে নেয়া হয় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ)। সেখানে ইসিজির রিপোর্টে হৃদযন্ত্রে রক্ত সঞ্চালনে সমস্যা ধরা পড়ে। এরপর সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়।
বরিশালের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলেন, কর্মীদের সন্তানের মতো ভালোবাসেন তিনি। সুখে-দুঃখে, বিপদে-আপদে পাশে থাকেন। আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ শুধু বরিশালের না, গোটা দক্ষিণাঞ্চলের আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক অভিভাবক। দলমত-নির্বিশেষে সবাই তাকে শ্রদ্ধা করেন। তার দ্রুত সুস্থতা কামনা করেছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
প্রসঙ্গত, ৭৫ বছর বয়সের আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ বরিশাল-১ আসনের নির্বাচিত এমপি। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির আহ্বায়কও।
এর আগের সরকারের সময়ে হাসানাত আবদুল্লাহ জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ ছিলেন। তার বড় ছেলে সাদিক আবদুল্লাহ বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
১৯৭৫ সালে ভয়াল কালো রাতে নিহত শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের ছেলে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এবং ওই রাতের প্রত্যক্ষ সাক্ষী তিনি।
চলতি বছরের (৭ জুন) তার স্ত্রী সাহান আরা আবদুল্লাহ ইন্তেকাল করেন। প্রয়াত সাহান আরা বেগম মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য ছিলেন। পাশাপাশি তিনি বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগেরও সহ-সভাপতি ছিলেন। গত (৭ জুন) রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বৃহত্তর বরিশাল অঞ্চলে মুজিব বাহিনীর প্রধান ছিলেন। ১৯৭৩ সালে বরিশালে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি অধুনালুপ্ত বরিশাল পৌরসভারও চেয়ারম্যান ছিলেন।
১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০০ সালের ২৬ জুন তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হন। হাসনাত আবদুল্লাহ ১৯৯৬ থেকে ২০০০ পর্যন্ত জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ ছিলেন।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে হাসনাত আবদুল্লাহ তৃতীয়ও বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালের ১৮ জানুয়ারি তিনি পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক (মন্ত্রী পদমর্যাদা) মনোনীত হন।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরে নির্বাচনে বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসন থেকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে চতুর্থবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ।
আগামীনিউজ/জেহিন