ঢাকাঃ বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বানোয়াট ও সাজানো কাল্পনিক মামলায় গ্রেফতার করে কারান্তরীণ করা ক্ষমতালোভী বর্তমান সরকারের প্রাত্যহিক কর্মসূচি হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গতকাল মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) রাতে বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক সাইফুল ইসলাম টিপু স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সিলেট এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে ছাত্রলীগ কর্তৃক স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষণ ও খাগড়াছড়িতে মানসিক ভারসাম্যহীন উপজাতি নারীকে গণধর্ষণের ঘটনায় অপরাধী মানুষরুপী পশুদের শাস্তির দাবিতে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের কর্মসূচি হিসেবে নোয়াখালী জেলা ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল শেষে সমাবেশের ওপর পুলিশী নগ্ন হামলা এবং নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি এ বিবৃতি দেন।
বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “৩০ ডিসেম্বরের আগের রাতে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে ক্ষমতাসীন আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী দেশ শাসনে নিষ্ঠুর জুলুম অব্যাহত রেখেছে। বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসহ দেশের সকল বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বানোয়াট ও সাজানো কাল্পনিক মামলায় গ্রেফতার করে কারান্তরীণ করা ক্ষমতালোভী বর্তমান সরকারের প্রাত্যহিক কর্মসূচি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সিলেট এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে ছাত্রলীগ কর্তৃক স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে এবং খাগড়াছড়িতে প্রতিবন্ধী উপজাতি নারীকে গণধর্ষণের ঘটনার বিরুদ্ধে নোয়াখালী জেলা ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে ছাত্রদল নেতা নুর হোসেন বাবু, আবুল কালাম, আমিরুল ইসলাম, সজিব রহমানসহ ১৮ জন নেতাকর্মীকে গুরুতর আহত এবং সমাবেশ থেকে ছাত্রদল নেতা রাকিব বিল্লাহ তুষার, রাশেদুল ইসলাম সোহাগ, রনি সারোয়ার, সুজন হাম্মাদীসহ কমপক্ষে ৮ জন নেতাকে গ্রেফতার সেটিরই নিকৃষ্ট উদাহরণ।
ফখরুল বলেন,'বর্তমান সরকার অপরাধ সংঘটনকারীদেরকে শাস্তি দিচ্ছে না বলেই অপরাধীরা অপরাধ করতে আরও বেশী উৎসাহিত হচ্ছে। নারী ও শিশু নির্যাতন এখন চরম মাত্রায় উপনীত হয়েছে। একদিকে বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে দেশবাসী উৎকন্ঠিত, এর ওপর বর্তমান আওয়ামী ভয়াবহ দুঃশাসন দেশের জনগণের জন্য যেন ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জনগণ এই অবৈধ সরকারের জুলুম-নির্যাতন থেকে পরিত্রাণ পেতে চায়। বিশেষভাবে বিএনপি-কে নিশ্চিহ্ন করতে সরকার এখন বেপরোয়া আচরণ শুরু করেছে।
তিনি বলেন,'দেশে যে আইনের শাসন নেই, গণতন্ত্র নেই এবং বিচার বিভাগ যে সম্পূর্ণরুপে সরকারের করায়াত্ত, সেটি আবারও প্রমাণিত হলো-পুলিশ কর্তৃক নোয়াখালীতে ছাত্রদলের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ থেকে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও ন্যাক্কারজনক হামলা চালিয়ে তাদেরকে গুরুতর আহত করার মধ্য দিয়ে। সরকারের এধরণের অমানবিক ও নিষ্ঠুর আচরণে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করছি এবং অবিলম্বে নোয়াখালী জেলা ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ তাদের নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি। পুলিশী হামলায় আহত নেতাকর্মীদের আশু সুস্থতা কামনা করছি।”
এদিকে মঙ্গলবার সন্ধ্যার আগে ঢাকা-৫ জাতীয় সংসদ উপ-নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী সালাহ উদ্দিন আহমেদ এর নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার সময় কদমতলী থানাধীন ৬১ নং ওয়ার্ড কুদারবাজার এলাকায় স্থানীয় আওয়ামী সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হামলার ঘটনাকে সুপরিকল্পিত আখ্যা দিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অপর এক বিবৃতিতে বলেছেন-আসলে বর্তমান সরকার লোক দেখানো নির্বাচন করে, কারণ সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনকে তারা বহু আগেই মাটিচাপা দিয়েছে। তারা সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চায় না এজন্য যে, বাক-ব্যক্তি ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সর্বোপরি বহুদলীয় গণতন্ত্র যাতে এদেশে আর কোনদিন প্রতিষ্ঠা না পায়।
ফখরুল বলেন,'বিএনপিসহ বিরোধী প্রার্থীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করতে সরকারদলীয় সন্ত্রাসীরা নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও তাদের ওপর পৈশাচিক হামলা চালিয়ে তাদেরকে গুরুতর আহত করে। গণবিচ্ছিন্ন সরকারের সন্ত্রাসীরা ছাড়া আওয়ামী লীগের আর কোন অবলম্বন নেই। আজ ঢাকা-৫ আসনে ধানের শীষের প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণায় আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলা সেটিরই প্রমাণ। আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক তানভীর আহমেদ রবিন এবং সাংবাদিক মঞ্জুর মিলন গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলে এখন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। হামলায় নির্বাচনী সেলের সিনিয়র সাংবাদিক মঞ্জুর মিলনসহ ১০ জনের অধিক নেতাকর্মী আহত হওয়ার ঘটনায় আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি করছি।
আগামীনিউজ/জেহিন