ঢাকাঃ প্রতিষ্ঠার ২৭ বছরে এসে অভ্যন্তরীণ কোন্দল থেকে ভাঙনের মুখে দল গণফোরাম। দলটির সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়ার সঙ্গে দলটির নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী ও আবু সাইয়িদ এবং কেন্দ্রীয় সদস্য মোস্তফা মহসিন মন্টুর বিরোধের জেরে এ অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে দলটি। বর্তমান নেতৃত্ব গঠনতন্ত্র মেনে দল পরিচালনা করছে না এমন অভিযোগ এনে করণীয় নির্ধারণে ২৬ সেপ্টেম্বর মিটিং ডেকেছেন রেজা কিবরিয়া বিরোধীরা।
গত বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন আভাস পাওয়া গেছে।
শেষ পর্যন্ত নিজের হাতে গড়া গণফোরামকে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করতে পারছেন না দলটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. কামাল হোসেন। গত কয়েক মাস দলটির কেন্দ্রীয় কমিটিতে বহিষ্কার-পাল্টা বহিষ্কারের ঘটনা ঘটে চলছিল। তারাই ধারাবাহিকতায় আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর গণফোরামের বর্ধিত সভা আহ্বান করেছে দলটির ভেঙে দেওয়া কমিটির এবং বহিষ্কৃত নেতারা। আর সেই সভা থেকে গণফোরাম নামে আরেকটি দলের সূচনা হতে যাচ্ছে। এর নেতৃত্বে দেখা যাবে দলটির সাবেক নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টুকে।
আগামী শনিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে গণফোরামের বর্ধিত সভা ডেকেছেন সুব্রত চৌধুরী। এই বর্ধিত সভার সঙ্গে কোনও সংশ্লিষ্টতা না থাকার কথা উল্লেখ করে গত মঙ্গলবার (২২ সেপ্টেম্বর) প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠান গণফোরামের বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সভাপতি কামাল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া।
ড. কামাল হোসেন গণমাধ্যমে বলেন, ‘আমি তো করোনার কারণে দীর্ঘদিন ঘরবন্দি। গণফোরামের কোনও বর্ধিত সভা ডাকা হয়নি। আমি আপনার কাছেই প্রথম সভার কথা শুনেছি। এ বিষয়ে সুব্রত চৌধুরীও কিছু জানায়নি। আমার সঙ্গে তো তার কথা হয়, কিন্তু তিনি তো আমাকে বলেননি।’ তিনি আরও বলেন, আমি কোনও বর্ধিত সভার কথা জানিও না এবং কোনও সভায়ও যাচ্ছি না।
গণফোরামের সাবেক নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী লেন, আমরা তো চলতি মাসের ৫ তারিখে ২৬ সেপ্টেম্বর বর্ধিত সভা করার কথা ঘোষণা করেছি। এই সভার কথা গণফোরামের সারা দেশের জেলা-উপজেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কামাল হোসেনকেও দাওয়াত দেওয়া হবে। তিনি না এলে সভায় উপস্থিত নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে।
গণফোরামের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক লতিফুল বারী হামিম এ বিষয়ে বলেন, ‘গণফোরামের বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া, ভেঙে দেওয়া কমিটির সহ-সভাপতি মহসীন রশীদ, সহ-সভাপতি শফিকউল্লাহ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাককে ছাড়া বাকি সবাইকে ২৬ সেপ্টেম্বর বর্ধিত সভার দাওয়া দেওয়া হয়েছে। ড. কামাল হোসেনের বাড়িতে গিয়ে তার হাতে বর্ধিত সভার চিঠি দিয়ে আসবেন আমাদের সিনিয়র নেতারা।’
জানা গেছে, ২৬ সেপ্টেম্বরের বর্ধিত সভায় রেজা কিবরিয়াকে বাদ দিয়ে ড. কামাল হোসেনকে আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে। তিনি না এলে ভেঙে দেওয়া কমিটির নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, আবু সাইয়িদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু থেকে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক করে আগামী কমিটি করা হবে। তবে সভা থেকে কমিটি ঘোষণা করা হবে না। সেখান থেকে ১ মাসের সময় নিয়ে দলের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা করা হবে। সেই কাউন্সিল থেকে নতুন দলের ঘোষণা দেওয়া হবে।
সুব্রত চৌধুরী আরো বলেন, আমরা কামাল হোসেনকে নিয়ে গণফোরামকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। এখন তিনি যদি রেজা কিবরিয়াকে নিয়ে থাকেন, তাহলে তো আমাদের তাকে ছাড়া কমিটি করে ফেলতে হবে। তখন তো আমাদের কিছু করার নাই। গত ২৭ বছর ধরে তিনিসহ এই গণফোরামকে আগলে রাখলাম, এখন যদি তার কাছে রেজা কিবরিয়া বেশি হয় থাকে তাহলে তো কিছু করার নাই। এই রেজা কিবরিয়া গত এক বছরে দুই-তিন দিন পার্টি অফিসে এসেছেন। কোনও সভা করতে পারেন নাই। অগণতান্ত্রিক এবং গঠনতন্ত্রবহির্ভূত কেন্দ্রীয় কমিটিতে লোক অন্তর্ভুক্ত করেছে। এভাবে একটা দল চলতে পারে না।
তিনি বলেন, ‘কামাল হোসেন এই দেশের সংবিধানের প্রণেতা অথচ তিনি নিজের দলের গঠনতন্ত্র মানেন না। তিনি নিজের একক সিদ্ধান্তে গণফোরামের কমিটি ভেঙে দিতে পারেন না। কমিটি ভাঙতে হলে দলের নির্বাহী কমিটির সভা ডাকতে হয়, অথচ তিনি সেটা না করে কমিটি ভেঙে আবার আহ্বায়ক কমিটিও গঠন করে ফেলেছেন।’
ভেঙে দেওয়া কমিটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা বলেন, ২৬ সেপ্টেম্বরের বর্ধিত সভা থেকে দলের পরবর্তী কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা করা হতে পারে। সেটা সর্বোচ্চ এক মাস সময় নেওয়া হবে। কাউন্সিলের মাধ্যমে সুব্রত, আবু সাইয়িদ, মন্টুর মধ্য থেকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করে গণফোরাম নামে আরেকটি দল গঠন করা হবে। তবে, রেজা কিবরিয়াকে বাদ দিয়ে কামাল হোসেন এলে তখন তাকেই সভাপতি করা হবে।