ঢাকাঃ সংঘাত আর বিভেদ এড়াতে এবার স্থানীয় নির্বাচনে মনোননয়ন ফরম বিতরণে নয়া কৌশল নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। চাইলেই যে কেউ মনোনয়ন ফরম কিনতে পারবেন না। দলীয় ম্যান্ডেট নিতে হলে জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষরিত রেজুলেশনে প্রার্থীর নাম থাকতে হবে। অর্থাৎ দলের সমর্থনের বাইরে কেউ যেনো নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে সেজন্য এই পন্থা অবলম্বন করা হয়েছে বলে জানান আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। তবে তারা জানিয়েছেন, দলের গঠনতন্ত্রে এভাবেই মনোনয়ন ফরম বিতরণের বিধান রয়েছে। অতীতে এই বিধান কার্যকর করা হয়নি। এবার বিষয়টি নিয়ে বেশ কড়কড়ি আরোপ করা হয়েছে। দলের সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে প্রেসিডিয়ামের বৈঠকের পরদিনই এ উদ্যোগ নিয়েছে দলটি।
ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে এ নিয়ে একটি নোটিশ টাঙানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষরিত রেজ্যুলেশনে প্রার্থীর নাম ছাড়া নমিনেশন ফরম বিক্রি হয় না। অর্থাৎ জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ থেকে এসব মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নামের তালিকা পাঠানো হবে তারাই কেবল মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে পারবে। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে অন্তত তিন জনের নামের তালিকা কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডের কাছে পাঠানো যাবে। সমপ্রতি তফসিল ঘোষিত জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে ১৬ই সেপ্টেম্বর থেকে ফরম বিতরণ ও সংগ্রহ শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে থেকে ফরম দেয়া হচ্ছে। চলবে আগামী (২০শে সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া মানবজমিনকে বলেন, দলের গঠনতন্ত্রে যে বিধান রয়েছে, আমরা সে অনুযায়ী মনোনয়ন ফরম বিক্রি করবো। ইউনিয়ন পরিষদে মনোনয়ন পেতে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সমন্বিত স্বাক্ষরে যেসব মনোনয়ন প্রার্থীর নাম থাকবে তারাই ফরম কিনতে পারবেন। তিনি বলেন, এ বিষয়ে দলের গঠনতন্ত্রের ২৬(৩) ধারায় স্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া আছে। সমপ্রতি আওয়ামী লীগ পাঁচটি সংসদীয় আসনে উপনির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে ফরম বিতরণ করে। তাতে আগ্রহী ১৪১ জন ফরম সংগ্রহ করেন।
এর মধ্যে সর্বোচ্চ মনোনয়ন প্রত্যাশী ঢাকা-১৮ আসনে ৫৬ জন। যার সংখ্যক আসনে সংখ্যার বিচারে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চেয়ে বেশি ছিল।
এছাড়া নওগাঁ-৬ আসনে ৩৪, পাবনা-৪ আসনে ২৮, ঢাকা-৫ আসনে ২০ এবং সর্বনিম্ন তিন জন সিরাজগঞ্জ-১ আসনে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। একটি আসনের বিপরীতে এত বেশি ফরম সংগ্রহ আওয়ামী লীগকে খানিকটা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে দেয়। দলের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে থেকেও বিষয়টির কঠোর সমালোচনা হয়। নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্রে জানা গেছে, আগামী বছরের মার্চ থেকে কয়েক ধাপে শুরু হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। স্থানীয় সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও বড় পরিধির ৪ হাজার ১০০টি ইউপি’র নির্বাচন আয়োজনে ইতিমধ্যে প্রাথমিক প্রস্তুতিও শুরু করেছে ইসি। ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে ইসি এই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে পারে। আইন অনুযায়ী, আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই সব ইউপি নির্বাচন সম্পন্ন করতে চায় ইসি। এর আগে আগামী অক্টোবরে মামলার জটে আটকে থাকা দুই শতাধিক ইউপিতে উপনির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। বর্তমানে দেশে ৪ হাজার ৫৭১টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে। ২০১৬ সালের ২২শে মার্চ শুরু হয়ে কয়েক ধাপে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন শেষ হয় ওই বছরের ৪ঠা জুন। আইন অনুযায়ী, কোনো ইউনিয়ন পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনসহ সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদারের লক্ষ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এরই মধ্যে দেশব্যাপী দলের অপূর্ণাঙ্গ কমিটিগুলো পূর্ণাঙ্গ করার উদ্যোগ নিয়েছে। প্রথম পর্যায়ে গত (১৫ই সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল। পরে তা আবার এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়।
আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে যা আছে: ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন প্রসঙ্গে দলের ২৬(৩) ধারায় বলা হয়েছে, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদের জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রার্থী মনোনয়ন দেবে। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নির্বাচন ঘোষণার পর মনোনয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে দেয়া সুনির্দিষ্ট তারিখ ও সময়ের মধ্যে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পর্যায় থেকে সমন্বিতভাবে মনোনয়ন প্রার্থীদের কমপক্ষে তিনজনের একটি প্রার্থী প্যানেল মনোনয়ন বোর্ড বরাবর প্রেরণ করবে। এই প্রার্থী প্যানেল প্রস্তুতে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ প্রাথমিক দায়িত্ব পালন করবে। মনোনয়ন বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত একটি প্রার্থী প্যানেল জমা দেয়ার তারিখ ও সময় বিবেচনায় রেখে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সুনির্দিষ্ট আবেদনপত্রে মনোনয়ন প্রার্থীদের আবেদন জমা দেয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তি দেবে। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সম্ভাব্য প্রার্থীদের একটি প্যানেল তৈরির জন্য কার্যনির্বাহী সংসদ ও সকল ওয়ার্ডের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে বর্ধিত সভা করবে। সভায় আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটি প্যানেল সুপারিশের জন্য তৈরি করবে। এই প্যানেলটি জেলা ও উপজেলা, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের (মোট ৬ জনের) যুক্ত স্বাক্ষরে প্রার্থীদের যোগ্যতা, নেতৃত্বের গুণাবলী, জনপ্রিয়তা ইত্যাদি বিষয় উল্লেখ করে কমপক্ষে তিনজনের সুপারিশ মনোনয়ন বোর্ডের কাছে নির্ধারিত সময় ও তারিখের মধ্যে পাঠাবে। জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে কোনো মতপার্থক্য হলে তা সুপারিশের সঙ্গে উল্লেখ করতে পারবেন। স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড আলাপ আলোচনা সাপেক্ষে একজন প্রার্থীর মনোনয়ন চূড়ান্ত করবে।
আগামীনিউজ/জেহিন