ঢাকা : করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পাবার প্রাক - প্রস্তুতি নিতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মঙ্গলবার (১০ মার্চ) সকাল সোয়া এগারোটায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘দেশ আজ করোনাভাইরাসের শিকার। সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী অন্তত ৩ জন নাগরিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়েছেন। গতকালও বিদেশ ফেরত আরো তিনজন বাংলাদেশিকে ভাইরাসে আক্রান্ত অবস্থায় হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আমরা এবং দেশের অনেক বিশেষজ্ঞ ও প্রতিষ্ঠান গত বেশ কিছু দিন ধরে এই সমস্যার সম্ভাবনার কথা বার বার বলার পরেও সরকার শুধু জনগণকে আশ্বস্ত করেছে, কাজের কাজ যে কিছু করেনি তার প্রমাণ হলো’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ইতালি থেকে ঢাকায় ফেরত আসা ২ ভাইয়ের রোগ বিমান বন্দরে শনাক্ত হয়নি। দেশে ফেরার ৪ দিন পর যখন তাদের অবস্থার অবনতি ঘটে তখন তারাই চিকিৎসায় উদ্যোগী হয়েছেন । তখন সরকার তাদের হাসপাতালে স্থানান্তর করেছে। কিন্তু ইতোমধ্যে তাদের একজনের স্ত্রী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পড়ে।
আক্রান্তদের সংস্পর্শে যারা এসেছিল তাদের তৎক্ষনাৎ কোয়ারেন্টাইনে না নেয়া সরকারের আরেকটি ব্যর্থতা।’
তিনি বলেন, ‘৩ দিন পর মাত্র গতকাল এমন ৪০ জনকে কোয়ারেন্টাইনে নেয়ার কথা জানা গেল। যে ফ্লাইটে তারা ঢাকা এসেছেন সেই ফ্লাইটের অন্যান্য যাত্রীরা, বিশেষ করে যারা কাছাকাছি বসেছিলেন, দীর্ঘ ভ্রমনের সময় তাদেরও আক্রান্ত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। করোনাভাইরাসের ব্যাপারে জনসচেতনতা নিশ্চিত করার জন্য মিডিয়াসহ সরকারি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহকে যেমন তরিৎ ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন ছিল সেরকম কিছু নেয়া হয়নি। মুজিববর্ষ পালনের ডামাঢোলে জনস্বার্থ অবহেলা করে সরকার দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন ।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য যে প্রাকপ্রস্তুতি প্রয়োজন ছিল তা নিতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। এমন পরিস্থিতিতে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের প্রয়োজন বাড়বে জানা সত্ত্বেও তা যথেষ্ট পরিমানে আমদানি কিংবা উৎপাদনের কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় গত পরশু সন্ধ্যার মধ্যেই বাজারে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের দাম কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। ৪/৫ টাকার মাস্ক ৫০/৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে এবং সন্ধ্যার পর বাজারে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার পাওয়া যায়নি। ফলে লাখো মানুষ বিনা মাস্কে এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজারে জীবিকার তাগিদে জনবহুল স্থানে গমনাগমন করে ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি নিতে বাধ্য হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সামান্য যে কয়টি হাসপাতালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার কথা বলা হচ্ছে সেগুলোর মান এবং আক্রান্তদের সুচিকিৎসা দেয়ার সামর্থ্য নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন আছে। অন্যদিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা থেকে ঔষধ, যন্ত্রপাতি, ডাক্তার ও নার্সদের প্রশিক্ষণ এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নেয়ার জরুরি দায়িত্ব সরকার পালন করতে পারেনি। ফলে ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাড়লে নিশ্চিত দেশবাসী গণহারে অকাল মৃত্যুর শিকার হতে পারেন। আমরা যত দ্রুত সম্ভব আক্রান্ত রোগী এবং সাম্ভব্য আক্রান্ত রোগীদের সুচিকিৎসা এবং ভাইরাসের প্রকোপ যাতে না বাড়ে তার জন্য সতর্কতা ও প্রতিরোধমূলক যাবতীয় ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি। এ ব্যাপারে সরকারের ব্যর্থতা জনগণ কখনও ক্ষমা করবে না। কারণ, জনগণ ৭৪-এর মত আরেকবার গণমৃত্যুর শিকার হতে চায় না ।’
আাগামীনিউজ/রাফি/হাসি