বাগেরহাট-৪ আসনের প্রার্থিতা নিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের ক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক ‌ ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২০, ০৭:৫৩ পিএম

তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামত না নিয়ে কেন্দ্র থেকে প্রার্থী চাপিয়ে দেয়ায় ক্ষুব্ধ বাগেরহাট-৪ আসনের বিএনপির নেতাকর্মীরা। এ আসনের উপনির্বাচনে ধানের শীষ প্রার্থী হিসেবে কাজী খায়রুজ্জামান শিপনের নাম ঘোষণা করেছিল বিএনপি। কিন্তু ব্যাংক ঋণ খেলাপী ও পৌর কর পরিশোধ না করায় তার প্রার্থিতা বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। এতে আরো বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। তার মতো বিতর্কিত প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়ার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।

সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জেলার নেতাকর্মীরা নিজেদের এ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এসময়ে তারা একটি লিখিত অভিযোগও জমা দেন।

বাগেরহাট জেলার শরণখোলা উপজেলার নেতাকর্মীদের নামে জমা দেওয়া অভিযোগে বলা হয়েছে- কাজী খায়রুজ্জামান শিপন কোনো দিন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। অদৃশ্যভাবে সম্পদশালী হওয়ার পর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এ সালামের আশীর্বাদ হয়ে বিএনপির রাজনীতিতে অনুপ্রবেশ করেন। এর আগে কখনো বিএনপি বা এর কোনো অঙ্গ সংগঠনের কর্মী-সমর্থক ছিলেন না। তিনি বিএনপির রাজনীতিতে প্রবেশ করার পর থেকেই স্থানীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। তার বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা না থাকলেও বিগত আন্দোলনে ত্যাগী নেতাকর্মীদেরকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তুলে দিতেন তিনি। রাজনীতিতে তার অবাধ্য হলেই তিনি এ অপকৌশল করে নেতাকর্মীদের শায়েস্তা করতেন।

অভিযোগে বলা হয়েছে, কাজী খায়রুজ্জামান শিপন আলৌকিকভাবে সম্পদশালী হওয়ার কারণে তার নামের আগে ব্যাঙ্গাত্মক বিশেষণও রয়েছে। ওই নামেই তাকে সবাই চিনেন। বিএনপির মতো এতো বড় রাজনৈতিক দলে তার মতো নেতাকে মনোনয়ন দেয়ায় এক দিকে যেমন দলের দুর্নাম হয়েছে তেমনি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন নেতাকর্মীরা।

নেতাকর্মীরা কাজী খায়রুজ্জামান শিপনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগের পাশাপাশি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করার একটি অডিও সিডি জমা দেন। যেখানে তিনি বলেছেন, বাগেরহাট-৪ আসনটি তার নামে লিজ করা। এটা স্বয়ং তারেক রহমানও পরিবর্তন করতে পারবে না।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে উপস্থিত একাধিক নেতাকর্মী  বলেন, গত ২২ ফেব্রুয়ারি বাগেরহাট জেলা বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটির সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাদের এক সাংগঠনিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। জেলার বিএমএ ভবনে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে স্থানীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম মঞ্জু এবং সহ সাংগঠনিক সম্পদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের কাছে কাজী খায়রুজ্জামান শিপনের নানা অপকর্মের ফিরিস্তি তুলে ধরেন। তাকে কিভাবে দলের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে তা নেতাকর্মীরা জানতে চান। এসময়ে নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়ে নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, কেন্দ্র থেকে এ মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। তারা এ বিষয়ে কিছু জানেন না। তাদের কাছে কোনো মতামত জানতে চাওয়া হয়নি।

জেলা বিএনপির একজন নেতা জানান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন প্রভাবশালী সদস্য, দুইজন ভাইস চেয়ারম্যানের প্রভাবে কাজী খায়রুজ্জামান শিপনকে মনোনয়ন দিতে বাধ্য হয়েছেন দলের হাইকমান্ড। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মনোনয়ন বোর্ডে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে উপস্থিত জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আকরাম হোসেন ডালিম উপনির্বাচনে শিপনের প্রার্থিতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে তোপের মুখে পড়েন। এ আসনে আরো মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন কাজী মনিরুজ্জামান, মনিরুল হক ফারাজী, অ্যাডভোকেট ফারহানা জামান নিপা।

মনিরুল হক ফারাজী বলেন, তিনি ১৯৮৭ সালে ছাত্রদলের মাধ্যমে রাজনীতিতে প্রবেশ করেছেন। বিগত আন্দোলনে ৬ মাসের বেশি সময় কারাগারে ছিলেন। এক ডজনের বেশি মামলা রয়েছে। এলাকার নেতাকর্মীদের আকুণ্ঠ সমর্থন থাকলেও কেন্দ্রীয় কতিপয় নেতার অবৈধ হস্তক্ষেপে তাদের মতো নেতাকর্মীর মূল্যায়ন হয় না।

ফারহানা জামান নিপা বলেন, তিনি জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল আলম তালুকদারের মেয়ে। দলের মনোনয়ন বোর্ডে তিনি বলেছেন, দলের প্রার্থী হিসেবে তাকে যোগ্য মনে না করলে স্থানীয় অন্য কোনো যোগ্য নেতাকে মনোনয়ন দেয়া হোক। কিন্তু যাকে দেওয়া হয়েছে তাকে নিয়ে বিএনপির সুনাম বাড়েনি। কিন্তু দল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

আগামীনিউজ/রাফি/নুসরাত