বিছনাকান্দি হলো সৌন্দর্যের লীলাভূমি

নিজস্ব প্রতিবেদক   মার্চ ১৩, ২০২০, ১০:৪৪ এএম

ঢাকা : বিছানাকান্দি বাংলাদেশের সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তমপুর ইউনিয়নের একটি গ্রামের মধ্যে অবস্থিত। সিলেট শহর থেকে বিছানাকান্দির দূরত্ব প্রায় ৬০ কিলোমিটার। এটি সিলেটের পর্যটন স্বর্গ। দেশের সীমান্তঘেরা পাথরের বিছানা ও মেঘালয় পাহাড় থেকে আসে ঠাণ্ডা পানি। পাশেই পাহাড়ি সবুজের সমারোহ। ছোট বড় পাথরের ওপর দিয়ে ছুটে আসা স্বচ্ছ পানির স্রোতধারা বিছানাকান্দিতে সৃষ্টি করেছে এক মনোরম পরিবেশ।

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে খাসিয়া পাহাড়ের অনেকগুলো ধাপ দুই পাশ থেকে এক বিন্দুতে এসে মিলেছে। পাহাড়ের কাছে রয়েছে সুউচ্চ ঝর্ণা। ভ্রমণবিলাসীদের জন্য এই স্পটের মূল আকর্ষণ হলো পাথরের উপর দিয়ে বয়ে চলা পানিপ্রবাহ। তাছাড়া বর্ষায় থোকা থোকা মেঘ আটকে থাকে পাহাড়ের গায়ে, মনে হতে পারে মেঘেরা পাহাড়ের কোলে বাসা বেঁধেছে।

পূর্ব দিক থেকে পিয়াইন নদীর একটি শাখা পাহাড়ের নীচ দিয়ে চলে গেছে ভোলাগঞ্জের দিকে। সব মিলিয়ে পাহাড়, নদী, ঝর্ণা আর পাথরের এক সম্মিলিত ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি এই বিছনাকান্দি।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এখানকার নদী দেখতে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

বিছনাকান্দি ভ্রমণের উপযুক্ত সময় : বিছনাকান্দি যে কোন সময় ভ্রমণের জন্যে উপযুক্ত। তবে ভ্রমণের উপযুক্ত সময় হলো জুন থেকে সেপ্টেম্বর, বিশেষত বর্ষাকাল বিছানাকান্দি ভ্রমণের জন্য আদর্শ সময়। চারদিকে প্রচুর পানি প্রবাহ থাকার কারণে এ সময় বিছানাকান্দির প্রকৃত সৌন্দর্য্য দেখতে পাওয়া যায়। শুকনো মৌসুম ও শীতকালে ভারী যন্ত্র ব্যবহার করে পাথর উত্তোলন- সেই সাথে পাথরবাহী নৌকা, ট্রাকের উৎপাতের কারণে পর্যটকদের জন্য এসময় উপযুক্ত নয়। কিন্তু বর্ষায় এইসব থাকেনা বলে পাহাড়, নদী, ঝর্ণা, মেঘের সমন্বয়ে বিছনাকান্দি হয়ে উঠে এক অনিন্দ্য সুন্দর গন্তব্য।

বিছনাকান্দি যা দেখবেন : বিছানাকান্দির সারা অঙ্গ জুড়েই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে সাদা স্বচ্ছ পাথর। দেখলে মনে হয়, কেউ হয়তো বিছিয়ে রেখেছে পাথরের বিছানা। এই পাথরের গা ছুঁয়ে জলরাশি ছুটে চলেছে পিয়াইন নদীতে। এই পাথর রাজ্যে ধীরে ধীরে বাড়ছে পর্যটক।

দুই পাশে পাহাড় আর মাঝখানে আপনার নৌকার ছুটে চলা অনেক কষ্ট করে বিছানাকান্দিতে পৌঁছানোর পর এর স্বর্গীয় সৌন্দর্য দেখে নিমিষে পাথরের ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।

দূরের চেরাপুজি আর কাছের মেঘালয় পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝর্ণার পানি ও পাথুরে বিছানাতে পা ফেলে পর্যটকরা বিস্মিত হয়ে যান।

বিছানাকান্দির ওপারে ভারত অংশে উচু-নিচু পাহাড়ের সারি। সবুজ পোশাকের পহাড়গুলি যেন দাঁড়িয়ে থাকে একে অপরের গায়ে হেলান দিয়ে।

বর্ষাকালেই এই অঞ্চলটি মোহনীয় রূপে নিজেকে মেলে ধরে। অবশ্য খরা মৌসুমে ও এই এলাকার ছড়িয়ে থাকা পাথরের রূপে মোহিত হতেই হয়।

কি ভাবে যাবেন বিছানাকান্দি : দেশের যেখানেই থাকেন আপনাকে প্রথমে সিলেট জেলা শহরে আসতে হবে বিছনাকান্দি যাবার জন্যে। তারপর সিলেট থেকে বিছনাকান্দি যেতে হবে।

ঢাকা থেকে সিলেট যাবার উপায়-

ঢাকা থেকে বাসে বা ট্রেনে অথবা বাই প্লেনে আপনি সিলেট যেতে পারবেন। ফকিরাপুল, সায়দাবাদ ও মহাখালী বাস স্টেশন থেকে গ্রীন লাইন, শ্যামলি, সৌদিয়া, এস আলম ও এনা পরিবহনের এসি বাস যাতায়াত করে। এসি বাসের ভারা সাধারণত ৮০০ থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে। এছাড়াও ঢাকা থেকে সিলেট যেতে শ্যামলী, হানিফ, ইউনিক, এনা পরিবহনের নন এসি বাস জনপ্রতি ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা ভাড়ায় পাবেন।ঢাকা থেকে ট্রেনে করে সিলেট যেতে কমলাপুর কিংবা বিমান বন্দর রেলওয়ে স্টেশান হতে উপবন, জয়ন্তিকা, পারাবত অথবা কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনকে বেছে নিতে পারেন আপনার ভ্রমণ সঙ্গী হিসাবে। ট্রেনে যেতে সময় লাগবে সাড়ে ছয় থেকে সাত ঘন্টা।

ঢাকা থেকে সবচেয়ে দ্রুত সময়ে ও সাচ্ছন্দে যেতে আকাশ পথকে বেছে নিতে পারেন। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ, রিজেন্ট এয়ার, ইউনাইটেড এয়ার, নভো এয়ার এবং ইউএস বাংলা এয়ারের বিমান প্রতিদিন সিলেটের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ঢাকা থেকে সিলেট যেতে শ্রেণিভেদে টিকেট মূল্য ৩২০০ থেকে ৭২০০ টাকা।

চট্টগ্রাম থেকে সিলেট যাবার উপায়:  চট্টগ্রাম থেকে বাসে বা ট্রেনে সিলেট যাওয়া যায়। চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনে যেতে চাইলে পাহাড়িকা এবং উদয়ন এক্সপ্রেস নামের দুটি ট্রেন সপ্তাহে ৬ দিন চলাচল করে।

সিলেট থেকে বিছনাকান্দি : বিছনাকান্দি যেতে সিলেটের আম্বরখানার সিএনজি স্টেশন থেকে জনপ্রতি ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায় লোকাল সিএনজিতে চড়ে হাদারপার নামক জায়গায় যেতে হবে। সিএনজি ফুল রিজার্ভ নিলে সাধারণত ভাড়া ১৫০০-২০০০ টাকার মত লাগবে। হাদারপার এসে নৌকা ঘাট থেকে নৌকা ঠিক করে বিছনাকান্দি যেতে হবে। বিছানাকান্দি, পান্থুমাই ও লক্ষণছড়া কাছাকাছি হওয়ায় সব গুলো একসাথে ঘুরে দেখার জন্যেই নৌকা ঠিক করে নিতে পারেন। নৌকা ভাড়া ৮০০-১৫০০ টাকা লাগতে পারে তবে অবশ্যই দামাদামি করে নৌকা ভাড়া ঠিক করে নিবেন। শীতকালে ও বর্ষার আগে নদীতে পানি কম থাকে সেই ক্ষেত্রে আপনি চাইলে হাদারপাড় থেকে হেটেও বিছনাকান্দি যেতে পারবেন। শুকনো সময়ে মটরবাইক চলাচল করে, জনপ্রতি ৫০-৬০ টাকা ভাড়ায় যাওয়া যায়।

যে কোন ভাড়ার জন্যে ভালো মত দরদাম করে নিন। আর সিজন ও পর্যটক উপস্থিতি বেশি থাকলে ভাড়া কম বেশি হতে পারে।

কোথায় থাকবেন : বিছানাকান্দি যাওয়া আসার সময় কম লাগার কারণে থাকার জন্য সিলেট শহরকে বেছে নিতে পারেন। হোটেল হিল টাউন, গুলশান, দরগা গেইট, সুরমা,কায়কোবাদ ইত্যাদি হোটেলে আপনার প্রয়োজন ও সামর্থ অনুযায়ী থাকতে পারবেন। এছাড়া লালা বাজার এলাকায় ও দরগা রোডে কম ভাড়ায় অনেক মানসম্মত রেস্ট হাউস আছে। 

বিছনাকান্দি ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা:
খরচ কমাতে দলগত ভাবে ভ্রমণ করুন।
চাইলে একদিনেই রাতারগুল দেখে বিছনাকান্দি ভ্রমণ করতে পারেবেন।
নৌকা ও সিএনজি ভাড়া করতে ভালো মত দামাদামি করুন।
বিছনাকান্দিতে পানিতে নামার সময় সতর্ক থাকুন।
বর্ষাকালে অল্প পানির স্রোতের গতিও অনেক বেশি থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
কিছু জায়গায় পাথর উত্তোলনের ফলে নিছে গভীর খাঁদ আছে, কোথাও নামার আগে পরামর্শ নিন।
বিছানাকান্দি একটি পাথর কোয়ারী, চারাপাশে পাথর, পানির নিচেও পাথর, তাই হাঁটা চলায় অতিরিক্ত সাবধান থাকুন।
দয়া করে পরিবেশ ও প্রকৃতির ক্ষতি হয় এমন কিছু করবেন না।
স্থানীয়দের সাথে বিনয়ী থাকুন।
সন্ধ্যার আগেই সিলেট শহরে ফিরে আসুন।
এছাড়াও বিছনাকান্দির বিছানা বাংলাদেশ আর ভারত মিলিয়ে। স্বাভাবিক ভাবে সীমানা চিহ্ণিত করা নেই এখানে। জায়গাটিতে তাই সাবধানে বেড়ানো উচিৎ। বাংলাদেশ অংশ ছেড়ে ভারত অংশে চলে যাওয়া মোটেই নিরাপদ নয়। সাঁতার জানা না থাকলে এ ভ্রমণে অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট নেওয়া উচিত।

আগামী নিউজ/সুমন/মিজান