ঘুরে আসুন আহসান মঞ্জিল

নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ৭, ২০২০, ১২:০৩ পিএম

ঢাকা : আহসান মঞ্জিল পুরনো ঢাকার ইসলামপুরের কুমারটুলী এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। এটি পূর্বে ছিল ঢাকার নবাবদের আবাসিক প্রাসাদ ও জমিদারীর সদর কাচারি। বর্তমানে এটি জাদুঘর হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এর প্রতিষ্ঠাতা নওয়াব আবদুল গনি। তিনি তার পুত্র খাজা আহসানুল্লাহর নামানুসারে এর নামকরণ করেন। ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে আহসান মঞ্জিলের নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে সমাপ্ত হয়। আহসান মঞ্জিলের রংমহলের ২৩ টি কক্ষে ৪ হাজার ৭৭ নিদর্শন রয়েছে।

এ ভবনের বারান্দা ও মেঝে তৈরি করা হয়েছে মার্বেল পাথর দিয়ে। আহসান মঞ্জিলের প্রতিটি কক্ষ অষ্টকোণ বিশিষ্ট এবং এই ভবনের ছাদ কাঠের তৈরি। প্রাসাদের ভেতরে রয়েছে খাবার ঘর, লাইব্রেরি, জলসাঘর, দরবার হল এবং বিলিয়ার্ড খেলার জায়গা। আর প্রাসাদের দোতলায় রয়েছে অথিতিদের থাকার কক্ষ, বৈঠকখানা, নাচঘর, গ্রন্থাগার এবং আরো কিছু বসবাসের কক্ষ। প্রসাদের ঠিক সামনে রয়েছে চমৎকার ফুলের বাগান ও সবুজ মাঠ। আহসান মঞ্জিলের দ্বিতীয় তলা থেকে একটি বড় সিড়ি সবুজ মাঠে নেমে এসেছে।

আহসান মঞ্জিলকে ঢাকা শহরের প্রথম ইট-পাথরের তৈরি স্থাপত্য নিদর্শন হিসাবে মনে করা হয়। আর তৎকালীন নবাবদের হাতে এই ভবনেই প্রথম বৈদ্যুতিক বাতি জ্বলে উঠে। আহসান মঞ্জিলের স্থাপত্যশৈলী পশ্চিমাদেরও সমানভাবে আকর্ষণ করে, লর্ড কার্জন ঢাকায় আসলে এই ভবনেই থাকতেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়।

আহসান মঞ্জিল কয়েকবার সংস্কার করা হয়েছে। সর্বশেষ সংস্কার করা হয়েছে অতি সম্প্রতি। বর্তমানে আহসান মঞ্জিল বাংলাদেশ সরকারের জাদুঘর হিসেবে সংরক্ষিত আছে। ১৯৯২ সালে এই জাদুঘর জনসাধারণের পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এখন এটি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর কর্তৃক পরিচালিত একটি জাদুঘর।

ইতিহাস : অষ্টাদশ শতাব্দীর শুরুতে জমিদার শেখ ইনায়েতউল্লাহ রংমহল প্রতিষ্ঠা করেন এবং পরবর্তীতে তার ছেলে শেখ মতিউল্লাহ ফরাসি বণিকদের কাছে বিক্রি করে দেন। ১৮৩৫ সালে নবাব আবদুল গনির পিতা খাজা আলীমুল্লাহ এই প্রাসাদটি কিনে বসবাস শুরু করেন। নবাব আবদুল গনি ১৮৭২ সালে নতুন করে এটি নির্মাণ করে তার ছেলের নামানুসারে প্রাসাদটির নাম রাখেন আহসান মঞ্জিল।

টিকেট মূল্য : সাধারণ দর্শনার্থীদের আহসান মঞ্জিল পরিদর্শন করতে জনপ্রতি ২০ টাকা দিয়ে প্রবেশ টিকিট সংগ্রহ করতে হয়। ১২ বছরের নিচে অপ্রাপ্ত শিশুরা জনপ্রতি ১০ টাকায় প্রবেশ করতে পারে। বিদেশীদের আহসান মঞ্জিলে প্রবেশ করতে জনপ্রতি ১০০ টাকা দিতে হয়। প্রতিবন্ধী দর্শনার্থীদের জন্য আহসান মঞ্জিলে কোন টিকিটের প্রয়োজন হয় না। আর আগে থেকে আবেদন করলে ছাত্র-ছাত্রীরাও বিনামূল্যে আহসান মঞ্জিল জাদুঘর দেখতে পারে।

পরিদর্শনের সময় : শনিবার থেকে বুধবার এই পাঁচ দিন সকাল ১০টা ৩০ মিনিট থেকে বিকেল ৫টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত আহসান মঞ্জিল দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে। আর প্রতি শুক্রবার বিকেল ৩ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত আহসান মঞ্জিল পরিদর্শন করা যায়। প্রতি বৃহস্পতিবার এবং অন্যান্য সরকারী ছুটির দিনে আহসান মঞ্জিল জাদুঘর সম্পূর্ন বন্ধ থাকে।

আহসান মঞ্জিল কিভাবে যাবেন : ঢাকার যেকোন জায়গা থেকে গুলিস্তান এসে রিক্সা বা সিএনজি তে করে আহসান মঞ্জিল দেখতে যেতে পারেন। গুলিস্থানের নর্থ সাউথ রোড ধরে নয়াবাজার মোড় হয়ে বাবুবাজার ব্রিজ দিয়ে এগুলে ইসলামপুর পৌঁছে যাবেন। আর ইসলামপুর আসলে আহসান মঞ্জিল যাওয়ার রাস্তা যে কাউকে জিজ্ঞাস করলেই জানতে পারবেন। অথবা সরাসরি পুরান ঢাকার সদরঘাট এলাকায় এসে পায়ে হেঁটে কিংবা অল্প টাকা রিকশা ভাড়ায় আহসান মঞ্জিল যেতে পারবেন।

আগামী নিউজ/সুমন/মিজান