ছেঁড়া দ্বীপ ও সেন্টমার্টিনের অপরূপ সৌন্দর্য্যে

নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ৬, ২০২০, ১১:০৪ এএম

ঢাকা: ছেঁড়া দ্বীপ (Chera Dwip) বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের ভূখন্ড। প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দক্ষিণে ছেঁড়া দ্বীপ অবস্থিত। স্থানীয় মানুষের কাছে দ্বীপটি ‘ছেঁড়াদিয়া’ বা ‘সিরাদিয়া’ নামে পরিচিত।

ছেঁড়া দ্বীপ সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পাথর, প্রবাল এবং নারিকেল গাছে পরিপূর্ণ। জোয়ারের সময় ছেঁড়া দ্বীপের এক-তৃতীয়াংশ সাগরের পানির নিচে তলিয়ে যায়। সাগরের নীল ঢেউ যখন পাথরের গায়ে আঁচড়ে পরে তখন এক মোহনীয় দৃশ্যের অবতারণা হয়।

সুনীল সাগর, আকাশ আর সূর্যাস্তের মিতালী দেখতে প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক ছেঁড়া দ্বীপে বেড়াতে আসে। এছাড়া ছেঁড়া দ্বীপে চাঁদের আলোয় যাদুকরী মুগ্ধতার সৃষ্টি হয়। তাই অনেকে পূর্ণিমার রাতে ক্যাম্পিং করতে আসেন এই অপূর্ব ছেঁড়া দ্বীপে।

কিভাবে ছেঁড়া দ্বীপ যাবেন:

ঢাকা থেকে টেকনাফ : ছেঁড়া দ্বীপ যেতে হলে আপনাকে প্রথমে টেকনাফে আসতে হবে। ঢাকা থেকে বিভিন্ন বাসে করে সরাসরি টেকনাফে যাওয়া যায়। ঢাকার ফকিরাপুল এবং সায়েদাবাদ থেকে টেকনাফ যাওয়ার জন্য বাস পাবেন। বাস ভাড়া সার্ভিসের ধরণভেদে সাধারণত হয়ে থাকে। টেকনাফ পৌঁছাতে ১০ থেকে ১২ ঘন্টা সময় লাগে।

ঢাকা থেকে কক্সবাজার: ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত এসে, সময় সুযোগ মত অন্য বাসে টেকনাফ যেতে পারবেন। ঢাকা অনেক বাস কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এছাড়া ঢাকা থেকে বিমানে করেও কক্সবাজার আসতে পারবেন।

ট্রেনে ঢাকা থেকে কক্সবাজার : ট্রেনে করে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম আসতে নিজের সুবিধামত যাত্রা করতে পারেন। এরপর চট্টগ্রামের বহদ্দার হাট কিংবা নতুন ব্রিজ থেকে চড়ে বসুন কক্সবাজারের গাড়িতে। ভালো সার্ভিস পেতে বাসে ভ্রমণ করতে পারেন।

কক্সবাজার থেকে টেকনাফ : কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যেতে বিভিন্ন লোকাল বাস বা মাইক্রো/জিপ পাবেন। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যেতে সাধারণত অবস্থার উপর নির্ভর করে দেড় থেকে দুই ঘন্টা সময় লাগে।

টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন : টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে প্রতিদিন সকাল থেকে আসা-যাওয়া করে জাহাজ। এছাড়াও এই সমুদ্র রুটে বেশ কিছু ট্রলার ও স্পিডবোট চলাচল করে। জাহাজে করে টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যেতে সময় লাগে দুই ঘণ্টা থেকে আড়াই ঘন্টা। জাহাজের শ্রেণিভেদে ভাড়া হয়ে থাকে। জেটি ঘাট থেকে প্রতিদিন জাহাজগুলো সকাল ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় এবং সেন্টমার্টিন থেকে ফেরত আসে বিকালে। তাই সময়ের আগে জেটি ঘাটে উপস্থিত না হতে পারলে জাহাজ মিস হবার সম্ভাবনা বাড়ে। আর যারা সেন্টমার্টিনে রাত্রিযাপন করেন তারা পরের দিন একটা জাহাজে ফেরার সুযোগ পান যা পূর্বেই টিকিটে উল্লেখ থাকে।

সধারণত নভেম্বর থেকে মার্চ এই পাঁচ মাস জাহাজ চলে। তাই বছরের অন্য সময়ে সেন্টমার্টিন গেলে ট্রলার কিংবা স্পিডবোট ভাড়া করে যেতে হবে। শীত মৌসুম ছাড়া বাকি সময় সাগর উত্তাল থাকে, তাই এই সময়ে ট্রলার কিংবা স্পিডবোট ভ্রমণ নিরাপদ নয়। যদিও আপনি এ্যাডভেঞ্জার প্রিয় হলে উত্তাল সাগরে ট্রলারযোগে ভ্রমণ অভিজ্ঞতা নিতে পারেন।

সেন্টমার্টিন থেকে ছেঁড়া দ্বীপ : সেন্টমার্টিনের জেটি থেকে ছেঁড়া দ্বীপ যাওয়ার স্পীড বোট ও ইঞ্জিন চালিত ট্রলার পাওয়া যায়। ছেঁড়া দ্বীপ যাওয়ার ভাড়া সাধারণত মৌসুমের উপর নির্ভর করে। পর্যটনের মৌসুমভেদে ছেঁড়া দ্বীপ থেকে ঘুরে আসতে পারবেন। আর যদি হাতে পর্যাপ্ত সময় থাকে তবে জোয়ার ভাটার সময় পায়ে হেঁটে কিংবা সাইকেল ভাড়া নিয়ে ছেঁড়া দ্বীপ থেকে বেড়িয়ে আসতে পারেন।

কি খাবেন ও কোথায় খাবেন : দুই-তিনটি চায়ের দোকান ও ডাব, তরমুজ ছাড়া ছেঁড়া দ্বীপে আর তেমন কিছুই নেই। এখানে কিছু খেতে চাইলে আপনাকে সাথে খাবার পরিবহন করতে হবে। এছাড়া সেন্টমার্টিনে ফিরে গিয়ে খাবার খেতে পারেন।

সেন্টমার্টিনে খেতে পারেন কোরাল, সুন্দরী পোয়া, ইলিশ, রূপচাঁদা, লবস্টার, কালাচাঁদা ইত্যাদি নানান ধরনের স্বাদের মাছ। সেন্টমার্টিনে খাবার পেতে বিভিন্ন রেস্তোরাঁ  পাবেন। তবে খাওয়ার আগে অবশ্যই খাবারের মান ও মূল্য একটু যাচাই করে নিন।

থাকবেন কোথায় : সেন্টমার্টিনে রাতে থাকার জন্য বেশ কিছু উন্নতমানের কয়েকটি হোটেল ও কটেজ রয়েছে। এছাড়াও স্থানীয় অনেক বাড়িতে পর্যটকদের জন্য থাকার সুব্যবস্থা আছে। মৌসুম অনুযায়ী হোটেল ভেদে এখানকার ভাড়ার তারতম্য হয়ে থাকে।

আগামীনিউজ/সুমন/হাসি