শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাময়িক বরখাস্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ৩, ২০২৩, ০৫:২১ পিএম
ফাইল ছবি

শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় শরীয়তপুরের নড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনিরকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। 

সোমবার (৩ জুলাই) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এতে সই করেছেন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোস্তাফিজুর রহমান।


প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, রাসেল মনির, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, নড়িয়া সার্কেল, শরীয়তপুর-এর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় সরকারি চাকরি আইন ২০১৮ এর ধারা ৩৯(১) এবং সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ এর বিধি ১২(১) অনুযায়ী অভিযুক্তকে সরকারি চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা সমীচীন বিবেচিত হওয়ায় এতদ্বারা তাকে সরকারি চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হলো। 

এতে আরও বলা হয়, তিনি বাংলাদেশ সার্ভিস রুল (বি.এস.আর) পার্ট-১, বিধি-৭১ মোতাবেক খোরপোশ ভাতা প্রাপ্য হবেন; এবং জনস্বার্থে জাকি করা এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।

অভিযোগের বিষয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, উচ্চ আদালত থেকে জামিন পাওয়া কয়েকজন আসামি ও তাদের স্বজনদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে ৭২ লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। নড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনির ও পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করা হয়।


ভুক্তভোগীর বড় ভাই আবু জাফর ঠান্ডু জেলা পুলিশ সুপার বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন। এ ঘটনায় শরীয়তপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) মোহাম্মদ বদিউজ্জামানকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। ঘটনায় অভিযুক্তদের সম্পৃক্ততা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার।

পুলিশ, ভুক্তভোগী ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ২৩ মে দ্রুত বিচার আইনে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় একটি ছিনতাই মামলা হয়। মামলায় শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার নাওডোবা আহম্মেদ চোকদার কান্দি এলাকার সাদ্দাম চোকদার, বকুল চোকদারসহ নয়জনকে আসামি করা হয়। সেই মামলায় ২৯ মে সাদ্দাম, বকুল, সাইদুল উচ্চ আদালত থেকে জামিনে বের হন। জামিনে আসার পর ৩০ মে রাতে তারা এ মামলার আরেক আসামি আনোয়ারকে নিয়ে ঢাকা কেরানীগঞ্জ সাদ্দামের বন্ধু আলমগীর চোকদারের বাসায় যান। ওইদিন রাতে তথ্য পেয়ে সেই বাসায় হাজির হন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনির ও ওসি মোস্তাফিজুর রহমান, জাজিরা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রুবেল বেপারীসহ ১০/১২ পুলিশ সদস্য।

অভিযোগে বলা হয়, এ সময় সাদ্দাম তাদের জামিনের কাগজ দেখালে তা ছিঁড়ে ফেলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। পরে পুলিশ সাদ্দাম ও বকুলকে লাথি, কিল-ঘুষি, চড়-থাপ্পড়সহ পুলিশের লাঠি (ডান্ডা), কাঁঠ, হাতুড়ি দিয়ে বেধড়ক মারধর করে। একপর্যায়ে প্লাস দিয়ে হাত ও পায়ের নখ তুলে ফেলা হয়। সাদ্দাম পানি পান করতে চাইলে ছোট ভাই বকুলকে দাঁড় করিয়ে মুখে প্রস্রাব করতে বলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনির। পরে সাদ্দামের শরীরে প্রস্রাব করেন বকুল। এমন নির্যাতন চলে রাত ১টা থেকে পরদিন ৩১ মে সকাল ৮টা পর্যন্ত।

অভিযোগে আরও বলা হয়, কিছুক্ষণ পর ওই চারজনকে গামছা ও কালো কাপড় দিয়ে চোখ বেঁধে গাড়িতে করে জাজিরা প্রান্তে পদ্মা সেতুর নিচে আনা হয়। পরে সাদ্দাম ও বকুল এবং সাইদুল ও আনোয়ারকে পৃথক দুই স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও ওসি সাদ্দাম-বকুলকে বলেন, ‘সাইদুল-আনোয়ারকে ক্রসফায়ার দিয়ে দিয়েছি। তোরা ৭২ লাখ টাকা দিবি, তা না হলে তোদেরও ক্রসফায়ার দিয়ে দেওয়া হবে’। এভাবে সারাদিন রেখে রাতে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় এনে ৭২ লাখ টাকা চাঁদা চেয়ে বেত ও কাঁঠ, কোদালের বাট, লাঠি দিয়ে আবার বেধড়ক মারা হয় সাদ্দাম ও বকুলকে। সারারাত চলে এ নির্যাতন। এরপর টাকার জন্য বকুলের স্ত্রী সানজিদা, দুই বছরের সন্তান, বাবা রশিদ চোকদার, মা রমেলা ও চাচাতো ভাই আবু জাফর ঠান্ডুকে থানায় এনে সারারাত আটকে রাখা হয় এবং শারীরিক নির্যাতন করা হয়।

পরে আত্মীয়-স্বজনরা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও ওসির কাছে পাঁচটি চেকের মাধ্যমে ৭২ লাখ টাকা দিলে নির্যাতন থেকে মুক্তি মেলে সাদ্দাম ও বকুলের। এ দু-দিন যন্ত্রণায় চিৎকার করলেও তাদের খাবার ও ওষুধ দেয়নি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও ওসি।

এমআইসি