প্রধানমন্ত্রীর কাছে বাসস্থান-কর্মসংস্থান চাইলেন ‘জল্লাদ’ শাহজাহান

নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ১৮, ২০২৩, ০১:১৮ পিএম
কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর বেরিয়ে আসছেন শাহজাহান ভূঁইয়া (সাদা প্যান্ট ও শার্ট পরিহিত)

ঢাকাঃ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ছয় আসামিসহ ২৬ জনের ফাঁসির দড়ি টানা আলোচিত ‘জল্লাদ’ শাহজাহান মুক্তি পেয়েছেন। দীর্ঘ ৩২ বছর কারাভোগের পর রোববার (১৮ জুন) বেলা ১১টা ৪৭ মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।

কারাগার থেকে বেরিয়ে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এসময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বাসস্থান ও কর্মসংস্থান চেয়েছেন জল্লাদ শাহজাহান। 

তিনি বলেন, আমি অপরাধ করেছি। সেজন্য জেলে এসেছি, সাজা ভোগ করেছি। আপনারা এখন আমার প্রতি মায়া দেখাচ্ছেন- লোকটা এত বছর জেল খেটেছে। আমার পেছনের দিকটা যদি আপনারা টান দেন। তাহলে আমি অতীতে কেমন ছিলাম। এখন আমি মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার মতো অতীতের সবকিছু ভুলে গেছি। এখন আমি কীভাবে আগামী দিনে চলব, থাকব সেটা হচ্ছে বিষয়।

এ সময় তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আমার বাড়ি, ঘর নেই। এত বছর জেল খাটার পর আমার কিছুই নেই। আমি এখন কারাগার থেকে বেরিয়ে নিজের বাড়িতেও যাচ্ছি না। আমি আরেকজনের বাড়িতে গিয়ে উঠছি এখন। আমি এখন কি করে খাব? কোথায় যাব? কি করব? আমার এখন আর কিছু করারও বয়স নেই।

তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার একটিই আবেদন, আমাকে যেনো বাড়ি-ঘর ও একটি কর্মসংস্থান দিয়ে চলার মতো কিছু করে দেন। এটিই প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন।

এখন আপনি কোথায় যাবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার সঙ্গে কারাগারে একজন আসামি ছিলেন। তিনি খুব ভালো মানুষ। তার বাসা বসুন্ধরাতে। তার বাসাতে যাচ্ছি আমি। আপাতত সেখানেই থাকবো।

২৬ জনের ফাঁসি দেওয়ার পর নিরাপত্তা বোধ করছেন কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ফাঁসি আমার হুকুমে করা হয়নি। রাষ্ট্রের হুকুমে আমি ফাঁসি দিয়েছি।

জল্লাদ শাহজাহানের পুরো নাম শাহজাহান ভূঁইয়া। তিনি নরসিংদী জেলার পলাশ থানার ইছাখালী গ্রামের মৃত হাছেন আলীর ছেলে। ৭৩ বছর বয়সী শাহজাহান ব্যক্তিগত জীবনে অবিবাহিত। কারাগারে তার কয়েদি নম্বর ছিল ২৫৮৯/এ এবং মুক্তির আগ পর্যন্ত তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান জল্লাদ ছিলেন।

কারা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, শাহজাহান ভূইয়া ১৯৯১ সালে গ্রেফতার হন। তাকে মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে রাখা হয়। কারাগারে ভালো কাজ ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ফাঁসির রায় কার্যকর করতে জল্লাদের দায়িত্ব পালনের জন্য তার সাজার মেয়াদ ১০ বছর মওকুফ (রেয়াত) করা হয়।

পাশাপাশি শাহজাহানের পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় আবেদনের প্রেক্ষিতে কারা কর্তৃপক্ষ তার জরিমানার ১০ হাজার টাকা পরিশোধ করে দিয়েছে। ফলে দীর্ঘ ৩১ বছর ছয়মাস দুইদিন কারাগারের চার দেয়ালের মধ্যে বন্দিজীবন কাটানোর পর এখন তিনি মুক্ত।

কারাগারের তথ্যানুযায়ী, শাহজাহান ২০০১ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২৬ জনের ফাঁসির দড়ি টেনেছেন। যার মধ্যে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন ছয়জন। এছাড়া চারজন যুদ্ধাপরাধী, দুজন জেএমবি সদস্য ও অন্যান্য আলোচিত মামলার ১৪ আসামি।

বুইউ