ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান দিবস আজ

আগামী নিউজ ডেস্ক জানুয়ারি ২৪, ২০২৩, ১০:০৪ এএম

ঢাকাঃ আজ মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি), ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান দিবস। বাঙালির দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিসংবাদিত নেতৃত্বে এই গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত হয়।

গণঅভ্যুত্থানের মূলে ছিল মুক্তিকামী নিপীড়িত জনগণের পক্ষে জাতির মুক্তি সনদ খ্যাত বঙ্গবন্ধুর দেওয়া ৬ দফা দাবি। যা পরবর্তীকালে ছাত্র সমাজের দেওয়া ১১ দফা কর্মসূচির প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে গণরোষ সৃষ্টি করে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

জাতির পিতার ঘোষিত বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফাভিত্তিক গণআন্দোলনের আদর্শকে ধারণ করে বাঙালির স্বাধিকার অর্জিত হয় মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে। সেই সংগ্রামের পথপরিক্রমায় ১৯৬৯ সালের ৪ জানুয়ারি গঠিত হয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়নসহ প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতারা এই পরিষদ গঠন করে ১১ দফা দাবি ঘোষণা করেন।

এই ১১ দফা দাবির মূল ভিত্তি ছিল বঙ্গবন্ধু ঘোষিত ৬ দফা। ৬ দফাভিত্তিক ১১ দফা দাবিতে ছাত্রসমাজের সমস্যাকেন্দ্রিক দাবি-দাওয়ার পাশাপাশি কৃষক ও শ্রমিকদের স্বার্থ সংক্রান্ত দাবিগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই আন্দোলনের অন্যতম প্রধান দাবি ছিল আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ রাজবন্দিদের মুক্তি।

৬ দফা এবং পরবর্তীতে ১১ দফা কর্মসূচির প্রেক্ষাপটে সংঘটিত হয় ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান। ’৬৯ এর ১৭ জানুয়ারি ছাত্রনেতারা দেশব্যাপী সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘটের ডাক দিলে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনেম খান ছাত্র আন্দোলন দমনের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করেন। সরকারি নিপীড়নের প্রতিবাদে ২০ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় ছাত্রসভা ও প্রতিবাদ মিছিলের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এ মিছিলে পুলিশের গুলিতে ছাত্রনেতা আমানুল্লাহ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান (আসাদ) নিহত হলে আন্দোলন আরও তীব্র হয়ে ওঠে। শহীদ আসাদের আত্মদানের পর ২১, ২২ ও ২৩ জানুয়ারি শোক পালনের মধ্য দিয়ে সর্বস্তরের জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে ২৪ জানুয়ারি অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থানের সৃষ্টি হয়।

পাকিস্তানি সামরিক শাসন উৎখাতের লক্ষ্যে ১৯৬৯ সালের ২৪ জানুয়ারি সংগ্রামী জনতা শাসকগোষ্ঠীর দমন-পীড়ন ও সান্ধ্য আইন ভঙ্গ করে মিছিল বের করে। মিছিলে পুলিশের গুলিবর্ষণে এদিন ঢাকায় সচিবালয়ের সামনের রাজপথে নবকুমার ইনস্টিটিউটের নবম শ্রেণির ছাত্র কিশোর মতিউর রহমান ও রুস্তম শহীদ হন। প্রতিবাদে সংগ্রামী জনতা সেদিন সচিবালয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। বিক্ষুব্ধ জনগণ আইয়ুব-মোনেম চক্রের দালাল, মন্ত্রী, এমপিদের বাড়িতে এবং তাদের মুখপত্র হিসেবে পরিচিত তৎকালীন দৈনিক পাকিস্তান ও পাকিস্তান অবজারভার পত্রিকার অফিসে আগুন লাগিয়ে দেয়। ঢাকার পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

এরপর ১৫ ফেব্রুয়ারি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত সার্জেন্ট জহুরুল হক বন্দি অবস্থায় ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে নিহত হলে প্রতিবাদমুখর হয়ে বাংলার জনগণ। ১৮ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. শামসুজ্জোহা নিহত হলে সান্ধ্য আইন উপেক্ষা করে রাজপথে নেমে আসে ছাত্র-জনতা। গণঅভ্যুত্থানের প্রবল চাপে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবসহ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অভিযুক্তরা এবং নিরাপত্তা আইনে আটক ৩৪ জন নেতাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় স্বৈরশাসক আইয়ুব খান। ২৩ ফেব্রুয়ারি লাখো জনতার উপস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সামরিক স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের পতন ঘটে। সেই থেকে ২৪ জানুয়ারি গণভ্যুত্থান দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।

গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার সকাল ৯টায় বকশীবাজারে নবকুমার ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে শহীদ মতিউর রহমানের স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে আওয়ামী লীগ। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যথাযথভাবে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে সংশ্লিষ্ট সবাইকে কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন।

বুইউ