রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ইসির সংলাপ শুরু আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ১৭, ২০২২, ০৯:২৯ এএম

ঢাকাঃ আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ তৈরি করতে ৩৯ নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আজ থেকে রোববার (১৭ জুলাই) সংলাপ শুরু করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আজ প্রথম দিন চারটি রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রতিদিন চারটি করে আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত চলবে এই সংলাপ। প্রতিটি দল থেকে ১০ জন করে প্রতিনিধি এ সংলাপে অংশ নিতে পারবেন। ইতোমধ্যে দলগুলোর সভাপতি/সাধারণ সম্পাদককে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন ভবনে উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে সাংবিধানিক সংস্থাটি।

আজ প্রথম দিনে সংলাপে আমন্ত্রণ পেয়েছে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ, বাংলাদেশ কংগ্রেস ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল)। এই চার দলের মধ্যে বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল) বাদে বাকী তিনটি দল উপস্থিত থাকবে বলে জানিয়েছে ইসির জনসংযোগ বিভাগের সহকারী পরিচালক মো. আসাদুল।

তিনি বলেন, মুসলিম লীগ বাদে বাকি তিনটি দল উপস্থিত থাকবে বলে জানিয়েছে। নির্ধারিত সময়ে সংলাপ শুরু হবে। প্রত্যেকটি দল এক ঘণ্টা করে সংলাপের সুযোগ পাবে। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম), দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ), আড়াইটা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত বাংলাদেশ কংগ্রেসের সঙ্গে বৈঠক করবে ইসি।

ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানিয়েছেন, ১৭ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। প্রায় প্রতিদিনই চারটি করে দলের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। তবে বিএনপির সঙ্গে যেদিন বসবে সেদিন তিনটি দল এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে যেদিন বসবে সেদিন দু’টি দলের সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিটি দল ১০ জন করে সদস্য নিয়ে বৈঠকে অংশ নিতে পারবে।

এদিকে অনুষ্ঠেয় সংলাপে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি-জাপা ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির জন্য দুই ঘণ্টা করে সময় বরাদ্দ রেখেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অন্য ৩৬টি নিবন্ধিত দলের জন্য রাখা হয়েছে ১ ঘণ্টা করে সময়।

এর আগে ইভিএম নিয়ে আয়োজিত মতবিনিময়েও মুসলিম লীগ অংশ নেয়নি। গত ১৯ জুন থেকে তিন ধাপে ২৮ জুন পর্যন্ত ৩৯টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এই মতবিনিময় আয়োজন করেছিল ইসি। ওই মতবিনিময়ে বিএনপিসহ ১১টি দল অংশগ্রহণ করেনি। এই দলগুলো এবারের সংলাপেও অংশ নেবে না বলে মনে করছেন ইসির সংশ্নিষ্ট শাখার কর্মকর্তারা।

সংলাপে অংশ নিতে যাওয়া বাংলাদেশ কংগ্রেসের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট কাজী রেজাউল হোসেন শনিবার বলেন, ইসির পক্ষ থেকে ১০ জন নিয়ে যাওয়ার জন্য তার দল আমন্ত্রণ পেয়েছে। আরও দু-চারজন বেশি লোক সংগ্রহ করে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

রেজাউল হোসেন বলেন, নির্বাচনের সময় প্রশাসনিক ক্ষমতা যাতে ইসির হাতে থাকে- এটাই তার দলের প্রত্যাশা। তিনি জানান, কুমিল্লা সিটি ভোটে একজন এমপিকে নিয়ে যে পরিস্থিতি হয়েছে, তার পুনরাবৃত্তি তার দল চায় না। এমন ঘটনা হলে নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখা কঠিন হবে। এসব বিষয় তার দলের পক্ষ থেকে সংলাপে তুলে ধরা হবে।

বাংলাদেশ ন্যাশনাল ফ্রন্টের (বিএনএফ) চেয়ারম্যান সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদ বলেন, তারা সংলাপে অংশ নিতে যাচ্ছেন। আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে- বর্তমান ইসির কাছ থেকে এমন আশ্বাস পেতে চান। ইভিএম নিয়ে তাদের পরামর্শ পোলিং এজেন্ট না রাখার। কারণ, এই পোলিং এজেন্টরাই ভোট শুরু হলে গোপন কক্ষে ঢুকে ডাকাত হয়ে যান।

জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, তার দল মনে করে, দেশের বিদ্যমান গণতান্ত্রিক পরিবেশ পরিবর্তন হওয়া প্রয়োজন। এ জন্য তারা কমিশনকে তিনটি বিষয়ে লিখিত প্রস্তাব দেবেন। এর একটি পুরো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সম্পর্কে, আরেকটি নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পর্কে এবং ভোট গ্রহণের প্রক্রিয়া সম্পর্কে। এর মধ্যে ইভিএম বিষয়েও তার দলের অবস্থান তুলে ধরা হবে সংলাপে।

১৭ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করবে ইসি। ৩১ জুলাই বিকেল ৩টায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়ে সংলাপ শেষ হবে।

কোন দলের সঙ্গে কবে সংলাপ

১৭ জুলাই জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ, বাংলাদেশ কংগ্রেস ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল; এই চারটি দলের সঙ্গে বসবে নির্বাচন কমিশন।

১৮ জুলাই তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তি জোট, খেলাফত মজলিস ও বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি।

১৯ জুলাই সময় পেয়েছে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ইসলামী ঐক্য জোট, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল-এমএল।

২০ জুলাই সময় পেয়েছে গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি।

২১ জুলাই পেয়েছে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ ও গণফ্রন্ট।

২৪ জুলাই সময় পেয়েছে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, জাতীয় পার্টি-জেপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি ও ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ।

২৫ জুলাই তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি এলডিপি।

২৬ জুলাই জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টি অংশ নেওয়ার জন্য সময় পেয়েছে।

২৭ জুলাই সময় পেয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি, জাকের পার্টি ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ।

২৮ জুলাই রয়েছে গণফোরাম, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)।

৩১ জুলাই তালিকায় আছে জাতীয় পার্টি-জাপা ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রায় দেড় বছর আগে আগস্টে দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসেছিল তৎকালীন কেএম নূরুল হুদা কমিশন। এবার একই পথ ধরে সংলাপ শুরু করছে কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন।

সে সময় ২০১৭ সালের ২৪ আগস্ট থেকে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে ইসি। এক্ষেত্রে বেশির ভাগ দিন সকাল-বিকেল দু’টি করে দলের সঙ্গে বৈঠক করা হয়। তবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সঙ্গে যে দু’দিন বসেছিল, সেদিন আর কোনো দলের সঙ্গে সংলাপ করেনি নির্বাচন কমিশন।

ইসির সঙ্গে সে সময় ৩৯টি দলই সংলাপে অংশ নেয়। এদের মধ্যে বেশিরভাগ দল সেনা মোতায়েনের পক্ষে এবং বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিপক্ষে ও ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ভোটগ্রহণ না করার সুপারিশ করে।

সংলাপের মতামত পর্যালোচনা করে দু’টি অংশে ভাগ করে একটি অংশকে নিজেদের বাস্তবায়নযোগ্য মনে করে ইসি, যেদি তাদের কাছেই রাখে। অন্য অংশটি সরকারের এখতিয়ারভুক্ত হওয়ায় ২০১৮ সালের ১৬ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দপ্তরসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হয়।

এমবুইউ