ঢাকাঃ আগামী জুন মাস থেকে আবারও এক কোটি দরিদ্র পরিবারকে টিসিবির পণ্য দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
সোমবার (৯ মে) বেলা ১১ টায় সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ভোজ্যতেলের বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা এক কোটি পরিবারকে এখন যেভাবে সহায়তা দিচ্ছি, সেভাবে দিয়ে যাবো। দেশের ২০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে তিন কোটি ২০ লাখ দারিদ্র্যসীমার নিচে। সেখানে আমরা এক কোটি পরিবারকে সাশ্রয়ী মূল্যে খাদ্য পণ্য দেবো। এক কোটি পরিবার মানে পাঁচ কোটি লোক।
তিনি বলেন, আমি ৫০ লাখ পরিবারের কথা বলেছিলাম। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যত কষ্ট হোক এক কোটি মানুষকে দুই বার দেওয়া হয়েছে। রোজার পর আবার দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে বলেছেন এটা বন্ধ করা যাবে না। যতদিন প্রয়োজন হবে এবং দেশে এরকম দাম থাকবে এই এক কোটি পরিবারের পাঁচ কোটি মানুষকে তোমাদের এভাবে সাহায্য করতে হবে। আমাদের পক্ষ থেকে চেষ্টার কোনো ত্রুটি নেই। আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়ার দাম আমরা কমাতে পারবো না। দেশের বাজারে দাম কম রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো, সেটার গ্যারান্টি দিতে পারবো।
টিসিবির মাধ্যমে এক কোটি পরিবারকে ন্যায্যমূল্যে পণ্য দেবেন, সেখানে কী তেলের দাম সমন্বয় করবেন, নাকি আগের দামেই বিক্রি করা হবে? জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এখানে আমরা এখনো সিদ্ধান্ত নেইনি। তবে অনেক ঘাটতি হচ্ছে, অনেক ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। যদি আপনারা বলেন ১০ টাকা বাড়ানো উচিৎ বা এটা ন্যায্য হয়েছে তাহলে আমরা বাড়িয়ে দেবো। সবকিছু মিলে আমরা এখনো ফাইনাল করিনি।
তিনি বলেন, বাজারে যখন ২০০ টাকা তেল হয়ে যায় তখন অনেক পার্থক্য থাকে। তখন টিসিবির ট্রাকের পেছনে একই লোক ঘুরেফিরে আসে, লাইন ধরে। যারা কেনে তারা দুই/তিনবার করে কিনে নিয়ে অন্য জায়গায় বিক্রি করে দেয়।
আমাদের নিজস্ব উৎপাদিত তেলের দামও বেড়ে গেছে, সেখানে আপনারা কী করছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে টিপু মুনশি বলেন, সেটাতো নামমাত্র উৎপাদন হয়। যখন দাম বাড়ে তখন তারাও একটু সুযোগ নেয়। সবাইতো ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির না। আমরা সবদিক থেকেই চেষ্টা করছি।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে পেরেছি যে কোথায় কোথায় সমস্যা হয়েছে। কোথায় কোথায় বেশি লাভের জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে এটাও ঠিক আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়েছে। গত এক/দেড় মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম অনেক বেড়েছে। আজকে বাজারে যে তেল ছেড়েছে সেটা দুই মাস আগে বন্দর ছেড়েছে।
তিনি বলেন, তেলের দাম বেড়েছে, সাধারণ মানুষের কষ্ট হচ্ছে, এটা সত্য। কিন্তু আরও একটা সত্য আছে, সেটা হলো আমরা দেশে তেল উৎপাদন করি না। মোট চাহিদার মাত্র ১০ ভাগ তেল আমাদের সার্বিকভাবে হয়। আর বাকি ৯০ ভাগ তেল আমদানির ওপর নির্ভর করতে হয়।
টিপু মুনশি বলেন, এখন যে তেল কিনছি ১৯৮ টাকায়, সে তেল এলসি করা হয়েছিল অন্তত ৪৫ দিন আগে। সেসময় আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কত ছিল— জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, কে কত দামে খুলেছে (এলসি) সেটার চেয়ে বড় কথা যে মাসটা ঠিক করি আমরা, সে মাসে তারা কত দামে ক্লিয়ার করলো। সবগুলো এলসি কত দামে তারা চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ক্লিয়ার করলো, সেটা ধরে করেছি। এটা যে আজকে ২৫০ টাকা হচ্ছে, সেটা ধরে হচ্ছে না। কত আগে খুলেছে সেটা মূল বিষয় নয়। কী দামে চট্টগ্রাম বন্দরে সব ক্লিয়ার হলো, সেটার গড় করে নির্ধারণ করা হয়। গতকাল (রোববার) দাম ছিল ১ হাজার ৯৫০ ডলার (প্রতি টন)। আমাদের নির্ধারণ করার সময় ছিল ১ হাজার ৭৫০ ডলার। তাই ৪০ বা ৪৫ দিন ফ্যাক্টর না।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের একটাই মেসেস, আন্তর্জাতিক বাজার ও আশপাশের দেশগুলো বাজারসহ পারিপার্শ্বিক কিছু বিবেচনা করে যতটুকু কম রাখা যায়, আমরা সেটা চেষ্টা করবো।
এসময় বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান, সিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
এমএম