গণপরিবহনে বাস ভাড়া বাড়ানোর নির্দেশনার পর মাঠপর্যায়ে শুরু হওয়া নৈরাজ্য থামাতে এবার সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়, বিআরটিএ ও মালিক-শ্রমিক একত্রে মাঠে নেমেছে। তারা দপ্তরে বসে না থেকে সরজমিন রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে গিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত বাস ভাড়া নেয়া হচ্ছে কিনা, তা খতিয়ে দেখছেন। একই সঙ্গে বিআরটিএ-এর মোবাইল কোর্টের তৎপরতাও অব্যাহত রয়েছে। অনিয়ম করলে বাস ডাম্পিংয়ে পাঠানো হবে বলে সড়ক সচিব সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করেছেন।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ও পরিবহন সমিতির সদস্যরা সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে একযোগে মাঠে নামে। এদিন যাত্রীদের কাছ থেকে বাস অপারেটরগুলোর অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। সোমবার থেকে বিআরটিএ নিজস্ব ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে।
অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত ও পরিবহন নেতাদের হুঁশিয়ারিকে অগ্রাহ্য করে সিটিং সার্ভিস বাসগুলো যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ঢাকার বাস অপারেটরগুলোকে যাত্রীদের কাছ থেকে ন্যূনতম ১৫ টাকা ভাড়া আদায় করতে দেখা গেছে। সোমবার পুনঃনির্ধারিত ভাড়া কার্যকর হওয়ার আগে ন্যূনতম ভাড়া ছিল ১০ টাকা।
এদিকে কিছু যাত্রী সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম ভাড়া দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন কয়েকজন বাস কন্ডাক্টর।
মিরপুরগামী একটি বাসের হেলপার জানান, মিরপুর-১২ থেকে ঢাকেশ্বরী মন্দির পর্যন্ত সংশোধিত ভাড়া ৩২ টাকা হলেও যাত্রীরা ৩০ টাকা দিচ্ছেন।
মিরপুর লিঙ্কের হেলপার মো. মামুনও একই অভিযোগ করে বলেন, 'যে টাকার ঘাটতি থাকে, সেটা আমাদের পকেট থেকে ভরে দিতে হয়। কিন্তু যাত্রীদের তা নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই।'
সীমা আক্তার নামে একজন যাত্রী জানান, তার কাছে ২ টাকার নোট নেই বলে তিনি ৩০ টাকা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, 'এটা সবসময়ই হয়। হেলপাররা সব জায়গা থেকে যাত্রী ওঠায়।'
এদিকে সিএনজিচালিত কয়েকটি বাসেও যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে দেখা গেছে।
একটি সিএনজিচালিত বাসের হেলপার আশরাফুল জানান, যাত্রাবাড়ী থেকে মিরপুর-১২ পর্যন্ত ভাড়া ছিল ২৫ টাকা, এখন তা ৪০ টাকা। তার বাস কেন পুনঃনির্ধারিত ভাড়া নিচ্ছে জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দিতে পারেননি।
গণপরিবহনে ভাড়ার চার্ট প্রদর্শন করা বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। কিন্তু বেশিরভাগ বাসের মধ্যেই এমন কোনো চার্ট পাওয়া যায়নি।
ভাড়ার চার্ট ঝোলানো হয়নি, এমন একটি বাসের কন্ডাক্টর বাবু বলেন, 'আমরা ভাড়ার চার্ট পেয়েছি, কিন্তু ঝোলাতে পারিনি।'
তিনি বলেন, 'বাসস্ট্যান্ডে ঢোকার সাথে সাথে আমি চার্টটা ঝুলিয়ে দেব।'
তার সিএনজিচালিত বাস মতিঝিল থেকে মিরপুর-১০ পর্যন্ত ৩৫ টাকা ভাড়া নিচ্ছে, অথচ সংশোধিত ভাড়া ৩৩ টাকা।
অনিয়মের বিষয়ে বিআরটিএর পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) মো. সারওয়ার আলম বলেন, 'আমরা অনিয়ম সম্পর্কে অবগত আছি এবং এটি নিয়ন্ত্রণে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছি। আগামী সপ্তাহের মধ্যে আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসব।'
সারোয়ার আরও বলেন, নিয়ম লঙ্ঘনকারীদের ধরতে নগরীতে ১১টি ভ্রাম্যমাণ আদালতের পাশাপাশি বিআরটিএ ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সড়কে কাজ করছেন।
বৃহস্পতিবার অতিরিক্ত ভাড়া আদায়সহ অনিয়মের দায়ে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
আগামীনিউজ/নাসির