ঢাকাঃ দ্বিতীয় ধাপে ৮৩৫ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভোটগ্রহণ আজ বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলবে। এই ধাপে ২৬টি ইউপিতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) এবং বাকিগুলোতে ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ চলবে।
এ নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। তিনি জানান, নির্বাচনী সহিংসতা দমন করতে কঠোর পদক্ষেপ নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এর আগে ইসি দ্বিতীয় ধাপে ৮৪৮টি ইউপির তফসিল ঘোষণা করেছিল। কিন্তু পরে ঘোষিত তফসিলের তালিকা থেকে একটি ইউপি বাদ দেওয়া হয়। স্থগিত করা হয় সাতটি ইউপির ভোট। এছাড়া সব পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় পাঁচ ইউপিতে ভোটের প্রয়োজন পড়ছে না।
ইসির তথ্যমতে, দ্বিতীয় ধাপে চেয়ারম্যান পদে ৮১, সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ৭৩ ও সাধারণ সদস্য পদে ২০৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
এদিকে, বুধবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা বলেছেন, নির্বাচনী সহিংসতা কঠোর হাতে দমন করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ইসি জানায়, এই ধাপের ইউপিতে মোট ভোটকেন্দ্র ৮ হাজার ৪৯২টি। মোট ভোটার এক কোটি ৬৫ লাখ ৯৫ হাজার ২২৬ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৮৪ লাখ ৫ হাজার ৮৩১ জন এবং নারী ভোটার ৮১ লাখ ৮৯ হাজার ৩৭৯ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ১৬ জন। চেয়ারম্যান পদে ৩ হাজার ৩১০, সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ৯ হাজার ১৬১ এবং সাধারণ সদস্য পদে ২৮ হাজার ৭৪৭ জন প্রার্থী রয়েছেন। তিন পদে মোট প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪১ হাজার ২১৮ জন প্রার্থী।
বিনাভোটে নির্বাচিত চেয়ারম্যানরা আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন। ১৮টি জেলার ২৮টি উপজেলায় এসব প্রার্থী বিনাভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া কুমিল্লা জেলার লাকসাম উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে সকল পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় এই উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে কোনো ভোটগ্রহণ হচ্ছে না।
এর আগে প্রথম ধাপে ৩৬৯ ইউপির মধ্যে ৬৯ জন চেয়ারম্যান ভোটের আগে নির্বাচিত হন। ফলে প্রথম দুই ধাপের নির্বাচনে ১৫০ জন চেয়ারম্যান বিনাভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। মূলত দেশের অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি এই স্থানীয় সরকার নির্বাচনসহ সব নির্বাচন বর্জন করায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
ইসি আরও জানায়, ভোটগ্রহণ উপলক্ষে প্রতিটি কেন্দ্র পাহারায় নিয়োজিত রয়েছে ২০ জনের ফোর্স। নির্বাচনী অপরাধের বিচার ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় নিয়োজিত রয়েছে ৬৭০ জন বিচারিক ও নির্বাহী হাকিম। এছাড়াও পুলিশ, আনসার, বিজিবি, র্যাব ও কোস্ট গার্ডের ভ্রাম্যমাণ এবং স্ট্রাইকিং ফোর্স দায়িত্ব পালন করছে।
আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে র্যাব, পুলিশ ও আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নির্বাচনি এলাকায় টহল শুরু করেছেন। তারা থাকবেন ভোটের পরের দিন পর্যন্ত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে রয়েছেন নির্বাহী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।
জানা গেছে, এ নির্বাচনে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) ভূমিকায় ক্ষুব্ধ ইসি। স্থানীয় পর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ায় ওসিদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে নির্বাচন কমিশন। বুধবার অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় একজন নির্বাচন কমিশনার ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, থানার ওসিদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। পুলিশ সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। ওসিরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনে গাফিলতি করছেন। পুলিশ সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে র্যাব-বিজিবি লাগে না।
এদিকে উদ্বিগ্ন নির্বাচন কমিশন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১০ জেলায় বিজিবি মোতায়েন করেছে। বিশেষ করে স্থানীয় প্রশাসনের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, মাদারীপুরসহ ১০টি জেলায় নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি বিজিবি মোতায়েন থাকবে। এজন্য সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোয় অতিরিক্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, সারা দেশে সাড়ে চার হাজার ইউনিয়ন রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ধাপে ২১ জুন ২০৪ ইউপি ও ২০ সেপ্টেম্বর ১৬০ ইউপির ভোট হয়। দ্বিতীয় ধাপে ৮৩৫ ইউপির ভোট আজ। তৃতীয় ধাপে এক হাজার ৩ ইউপির ভোট হবে ২৮ নভেম্বর। চতুর্থ ধাপের ৮৪০ ইউপিতে ভোট ২৩ ডিসেম্বর।
আগামীনিউজ/বুরহান