ঢাকাঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর গোয়েন্দা সংস্থার প্রকাশিত ‘গোপন দলিল’ বাংলাদেশের রাজনীতি ও ইতিহাস গবেষকদের জন্য হবে অমূল্য সম্পদ। তিনি বলেন, ‘ভাষা আন্দোলন থেকে দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর আত্মত্যাগ ও সংগ্রাম সম্পর্কে প্রকৃত এবং সম্পূর্ণ ইতিহাস এই গোপন দলিলে পাওয়া যাবে। এর মাধ্যমে বিশ্বের জনগণও বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবন সম্পর্কে জানতে পারবে।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে তৎকালীন পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার গোপন দলিল ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দ্য নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ এবং ‘মুজিব ও পরিচিতি’ বইয়ের আন্তর্জাতিক প্রকাশনার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। গত বৃহস্পতিবার লন্ডনের ক্লারিজ হোটেলে এ অনুষ্ঠান হয়। এ সময় জাতির পিতার ছোট মেয়ে শেখ রেহানা ও নাতনি সায়মা ওয়াজেদ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই প্রকাশনা থেকে দেশের রাজনৈতিক নেতা ও নতুন প্রজন্ম শিক্ষা নিতে পারবে। জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর তাঁকে ইতিহাস থেকেও মুছে ফেলার যে চেষ্টা হয়েছিল, এখন আর সেই চেষ্টা করে কেউ সফল হতে পারবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, পাকিস্তানের ২৪ বছরের ইতিহাসে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি মুহূর্তের গতিবিধি ও কর্মকাণ্ড অনুসরণ করত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তাঁর জীবনের তিন হাজার ৫৩ দিন কাটিয়েছেন পাকিস্তানের কারাগারে।
শেখ হাসিনা বলেন, শুধু বঙ্গবন্ধুই নয়, পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা যাঁদের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি করত, তাঁদের সবাইকে, এমনকি তাঁর মা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবকেও সার্বক্ষণিক গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখত।
তিনি আরো বলেন, ‘বিশেষ করে ১৯৬৬ সালে ছয় দফা ঘোষণার পর থেকে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব সার্বক্ষণিক গোয়েন্দা নজরদারিতে থাকতেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, এসব গোপন দলিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের রাজনৈতিক সংগ্রামের শুধু রেকর্ডই নয়, বরং এগুলো কিভাবে একটি স্বাধীন দেশের জন্ম হলো তারও ঐতিহাসিক দলিল। তিনি আরো বলেন, এসব গোপন দলিল বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাসের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক সংগ্রামের ইতিহাস কিভাবে তৈরি হলো, তা এসব গোপন দলিলে প্রদর্শিত হয়েছে। এতে জাতির পিতার অপরিসীম দুর্ভোগ ও ত্যাগের চিত্র রয়েছে।
তিনি বলেন, এই নথিগুলো একজন জাতীয় নেতা, একজন রাষ্ট্রনায়ক এবং একজন আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব তৈরির বিবরণ।
সরকারপ্রধান বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তাঁর রাজনৈতিক জীবনের প্রথম দিন থেকেই নীতি ও মূল্যবোধের পক্ষে থাকায় বিরোধীরা তাঁকে টার্গেট করেছিল।
একই বাহিনী ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে তাঁর পরিবারের বেশির ভাগ সদস্যসহ তাঁর জীবনের নির্মম পরিণতির জন্য দায়ী।
শেখ হাসিনা এই প্রকাশনার জন্য বাংলাদেশের হাক্কানি পাবলিশার্সের সঙ্গে অংশীদারিতে এগিয়ে আসার জন্য টেলর অ্যান্ড ফ্রান্সিস গ্রুপকে ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা’ গড়ার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করে তাঁর সংগ্রামের প্রতি সুবিচার করার অঙ্গীকার নবায়ন করছি।”
শেখ হাসিনা ‘বঙ্গবন্ধু অ্যান্ড ব্রিটেন : এ সেন্টেনারি কালেকশন’ শীর্ষক একটি শিল্প প্রদর্শনীরও উদ্বোধন করেন। সূত্র : বাসস।
আগামীনিউজ/নাসির