ঢাকাঃ আশির দশক থেকে সুন্দরবন উপকূলের তাণ্ডব শুরু করে জলদস্যু ও বনদস্যুরা। এতে এই অঞ্চলে বনজীবী ও মৎস্যজীবীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ জিম্মি হয়ে পড়ে দস্যুদের কাছে। ডাকাতি, অপহরণ ও হত্যাসহ নানা তাণ্ডব চালায় একাধিক দস্যু বাহিনী। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলে গেছে।
ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ খ্যাত পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন উপকূলের বনজীবী ও মৎস্যজীবীদের এই জিম্মি দসা থেকে বেড়িয়ে আনতে র্যাবের তৎপরতায় সফল হয়েছে বাংলাদেশ সরকার। ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত সুন্দরবন ঘোষণা করেন। আজ এর তৃতীয় বর্ষপূর্তি।
এ উপলক্ষ্যে আজ (সোমবার) বাগেরহাটের রামপালে আত্মসমর্পণ করা জলদস্যুদের পুনর্বাসনে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে র্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) ও অতিরিক্ত আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
জলদস্যুদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১০২টি ঘর, জিনিসপত্রসহ মুদি দোকান ৯০টি, জাল ও মাছ ধরা নৌকা ১২টি, ইঞ্জিনচালিত নৌকা দেওয়া হচ্ছে ৮টি। আর বাছুরসহ গবাদি পশু দেওয়া হচ্ছে ২২৮টি। যদি অসুখ-বিসুখে গরু মারাও যায় সেজন্যও থাকবে বরাদ্দ।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন- সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম।
এছাড়াও খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. শামসুল হক টুকু, খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য সেখ সালাহউদ্দিন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মো. হাবিবুর রহমান ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য পীর ফজলুর রহমান।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেবেন- র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) কর্নেল কে এম আজাদ।
ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ খ্যাত পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবন উপকূলের বনজীবি ও মৎস্যজীবীরা আশির দশকে জিম্মি হয়ে পড়ে জলদস্যু ও বনদস্যুদের তাণ্ডবে। ২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে র্যাব মহাপরিচালককে প্রধান সমন্বয়কারী করে সুন্দরবনে জলদস্যু দমনে টাস্কফোর্স গঠনের মাধ্যমে গোড়াপত্তন ঘটে জলদস্যু মুক্তকরণ প্রক্রিয়ার। ২০১২ সাল থেকে লিড এজেন্সি হিসেবে র্যাবের জোড়ালো অভিযানে কোণঠাসা হয়ে পড়ে জলদস্যুরা। উপর্যুপরি অভিযানে ফেরারী জীবনের অবসান ঘটিয়ে আত্মসমর্পণের পথ বেছে নেয় জলদস্যুরা।
প্রধানমন্ত্রীর সম্মতিতে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ও র্যাবের ব্যবস্থাপনায় ২০১৬ সালের ৩১ মে থেকে ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর পর্যন্ত সুন্দরবনের ৩২টি দস্যু বাহিনীর ৩২৮ জন সদস্য, ৪৬২টি অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদসহ আত্মসমর্পণ করে। ফলে সম্পূর্ণরূপে জলদস্যু মুক্ত হয় সুন্দরবন।
এরপর ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী এই সাফল্যের ঘোষণা দেন। গত তিন বছর র্যাব এই সাফল্য ধরে রেখেছে।
র্যাব জানায়, আত্মসমর্পণ পরবর্তী পুনর্বাসনে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সাবেক জলদস্যুদের প্রত্যেককে নগদ এক লাখ টাকা আর্থিক অনুদান প্রদান, সরকার কর্তৃক আইনি সহায়তা ও র্যাবের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তাসহ সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের ফলে সুন্দরবনের সকল জলদস্যুরা আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবন-যাপন করছে। সম্প্রতি র্যাব পুনর্বাসন চাহিদা সমীক্ষা চালিয়ে আত্মসমর্পণকৃত জলদস্যুদের মাঝে ঘর, দোকান, নৌকা, জাল ও গবাদি পশু হস্তান্তর করতে যাচ্ছে। যা তাদের স্বাবলম্বী হতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
বর্তমানে শান্তির সু-বাতাস বইছে সুন্দরবনে। অপহরণ-হত্যা এখন তিরোহিত। জেলেদের কষ্টার্জিত উপার্জনের ভাগও কাউকে দিতে হচ্ছে না। মাওয়ালী, বাওয়ালী, বনজীবী, বন্যপ্রাণী এখন সবাই নিরাপদ। নির্ভয়ে নির্বিঘ্নে আসছে দর্শনার্থী-পর্যবেক্ষক, জাহাজ বণিকেরা। এভাবেই সরকারের দূরদর্শিতায় সুন্দরবন কেন্দ্রিক অর্থনৈতিক গতিশীলতা ব্যাপক সম্ভবনার দ্বার উন্মোচিত হল।
আজ এ দিবস উপলক্ষে র্যাব জলদস্যু মুক্ত সুন্দরবন গঠনে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বনবিভাগ, স্থানীয় আপামর জনসাধারণ, জনপ্রতিনিধি ও সাংবাদিকদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছে র্যাব।
আগামীনিউজ/বুরহান