আগামী ২০ দিনের মধ্যে পেঁয়াজের দাম কমে যাবে: কৃষিমন্ত্রী

গাজীপুর প্রতিনিধি অক্টোবর ১০, ২০২১, ০৮:২৪ পিএম
ছবি: আগামী নিউজ

গাজীপুর:আগামী ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে পেঁয়াজের দাম কমে যাবে। পেঁয়াজ পচনশীল হওয়ায় কৃষকরা দীর্ঘদিন মজুত রাখতে পারে না। তাই পেঁয়াজের সিজন এখন শেষ মুহুর্তে হওয়ায় পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্রীষ্মকালীণ এবং আমদানীকৃত পেঁয়াজ বাজারে আসলেই দাম কমে যাবে।

রবিবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকালে গাজীপুরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউটে (বারি) “কেন্দ্রীয় গবেষনা পর্যালোচনা ও কর্মসূচী প্রণয়ন কর্মশালা-২০২১” এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এসব কথা বলেন। 

কৃষি মন্ত্রী বলেন, কৃষি ক্ষেত্রে একটা অভূতপূর্ব বিপ্লব হয়েছে। খাদ্যে আমাদের কোন ঘাটতি নেই। আমাদের উদ্বৃত্ত ফসল সারা পৃথিবীতে রপ্তানী করবো। আর্ন্তজাতিক বাজারের জন্য আমাদের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। গত এক বছরে কৃষি পণ্যের রপ্তানী অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। যান্ত্রিকীকরন ও আধুনিক ল্যাবের মাধ্যমে আমরা শীঘ্রই আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করতে পারব। কৃষি বিপ্লবকে আরো অর্থনৈতিকভাবে কাজে লাগানোর জন্য স্থানীয় বাজার এবং আন্তর্জাতিক বাজার এই দুটোতেই আমাদেরকে যেতে হবে। 

ইনস্টিটিউটের কাজী বদরুদ্দোজা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ কর্মশালায় ‘এসডিজি-২০৩০ ও ভিশন ২০৪১ অর্জনে বারি’র গবেষণা কৌশল একটি রোডম্যাপ’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. নাজিরুল ইসলাম।  
 
বারি’র মহাপরিচালক ড. নাজিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, কৃষি মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সচিব মেসবাহুল ইসলাম, বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার, সাবেক সচিব ও বিএআরসি’র সাবেক নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. জহুরুল করিম, বারি’র প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও এমেরিটাস সায়েন্টিস্ট ড. কাজী এম বদরুদ্দোজা প্রমূখ।  

কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, আমাদের জমি কমছে, বাড়ছে জনসংখ্যা- এটিই হচ্ছে আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জকে সামনে রেখে বিজ্ঞানীদের কাজ করতে হবে. কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদেরকে অবদান রাখতে হবে। আমরা বাংলাদেশকে একটি সুন্দর বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই, সত্যিকার অর্থে একটি সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ করতে চাই। 

কর্মশালা উদ্বোধনের আগে মন্ত্রী উদ্ভিদ রোগতত্ব ও মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগে স্থাপিত দুইটি অত্যাধুনিক ল্যাব পরিদর্শন করেন এবং তৈলবীজ গবেষনা কেন্দ্রে নবনির্মিত ল্যাব কাম ফাংশনাল ভবন উদ্বোধন করেন। এছাড়া তিনি বিভিন্ন কৃষি যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি প্রদর্শনী স্টল পরিদর্শন করেন।

মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের জলবায়ূ, জমি খুবই উর্বর এবং  অনুকুল। এটা আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ। কৃষিক্ষেত্রে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উদারভাবে অর্থ সহায়তা দিয়েছেন। দেশে বর্তমানে দারিদ্র্যের হার ২০% যা আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ১৩-১৪% এ নিয়ে আসতে চাই এবং অতি দরিদ্র্যের হার ২০২৩ সালের মধ্যে ১০% এর নিচে নিয়ে আসতে চাই। দেশে মানুষের খাদ্যাভাস পরিবর্তন হচ্ছে। তবে এর জন্য মানুষের আয় বৃদ্ধি করতে হবে। আমরা আমাদের মাথাপিছু আয় ৫০০০ ডলার করতে চাই। কারণ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে হলে আমাদের মাথাপিছু আয় বাড়াতে হবে। কৃষি ক্ষেত্র আমাদের অর্থনীতির একটা বড় দিক। বাংলাদেশের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হলো পুষ্টি জাতীয় খাবার এবং নিরাপদ খাবার উৎপাদন। সারা পৃথিবীতেই মানুষ স্বাস্থ্যের দিক থেকে খুবই সচেতন। তারা নিরাপদ খাদ্য চায়। ভিটামিন সমৃদ্ধ নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে আমাদের আয় বাড়াতে হবে। তাই সেটি করতে আমরা কৃষিকে আধুনিকায়ন ও যান্ত্রিকীকরণে নিয়ে যেতে চাই। কৃষির বাণিজ্যিকীকরণের মাধ্যমে কৃষককের জন্য কৃষিকে লাভজনক খাত হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। 

কর্মশালায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, বারি ও ব্রি’র বিজ্ঞানীরা ফসলের বিভিন্ন উচ্চফলনশীল জাত আবিস্কারের পাশাপাশি বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তি আবিস্কার করছেন। তারা বিভিন্ন আধুনিক প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে শ্রমিক সঙ্কটের সমাধানে কার্যকর ভূমিকা পালন করে চলেছেন।

বারি সূত্র জানায়, গত অর্থবছরে  যে সকল কর্মসূচী হাতে নেওয়া হয়েছিল সেগুলোর মূল্যায় এবং এসব অভিজ্ঞতার আলোকে আগামী বছরের গবেষনা কর্মসূচী প্রণয়নের উদ্দেশ্যে এ কর্শশালার আয়োজন করা হয়েছে। কর্মশালার কারিগরি অধিবেশন ১১, ১২, ১৭, ১৮, ১৯ অক্টোবর দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে। এই গবেষনা পর্যালোচনা তিনটি ধাপে সম্পন্ন হয়ে থাকে। আঞ্চলিক গবেষনা পর্যালোচনা, অভ্যন্তরিন গবেষনা পর্যালোচনা ও কেন্দ্রীয় গবেষনা পর্যালোচনা। বিভিন্ন পর্যায়ের এই কর্মশালায় কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর, কৃষক প্রতিনিধি, সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহনের মাধ্যমে স্থানীয় ও আঞ্চলিক কৃষির সমস্যা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় এবং সেই আলোকে গবেষনা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। 

জানা গেছে, বারি’তে  বর্তমানে ২১১টি ফসল নিয়ে গবেষনা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ইতিমধ্যে ১৩৪টি ফসলের ৬০২টি উচ্চ ফলনশীল (হাইব্রিডসহ) , রোগ প্রতিরোধক্ষম ও বিভিন্ন প্রতিক’ল পরিবেশ প্রতিরোধী জাত এবং ৫৯২টি উন্নত উৎপাদন প্রযুক্তিসহ মোট ১১৯৪টি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। এসকল প্রযুক্ত উদ্ভাবনের ফলে দেশে তেলবীজ, ডালশস্য, আলু, গম, সবজী, মসলা এবং ফল ফসলের উৎপাদন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। 

আগামীনিউজ/ হাসান