নদীর পানি বাড়ছে, ২০ জেলায় বন্যার শঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ৩০, ২০২১, ১২:২৩ পিএম
ফাইল ছবি

ঢাকাঃ দেশের উত্তর ও উত্তর পূর্বাঞ্চলের কয়েকটি নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্র, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকা এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পার্বত্য এলাকার প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি দ্রুত বাড়ার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।

আগামী তিন দিন ভারি বর্ষণের আভাস থাকায় নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। একইসাথে আগামী ২৪ ঘণ্টায় সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে বলেও জানানো হয়েছে। এতে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে দেশের অন্তত ২০টি জেলার নিম্নাঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাস অনুযায়ী, বরাবরের মতো এবারও দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে বন্যা বেশি বিস্তৃত হতে পারে। দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের নিচু এলাকাতেও বন্যা দেখা দিতে পারে। তবে এই বন্যা গত বছরের মতো এত দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা কম।

এ বিষয়ে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভুইয়া বলেন, বাংলাদেশের অনেক এলাকায়; বিশেষ করে দেশের ওপরের দিকে ভারতের সীমানা এলাকাগুলোতে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির এসব পানি দেশের ওপর দিয়েই প্রবাহিত হবে। এতে দেশের উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদ-নদীগুলোর পানি বাড়বে। আমরা আগেই বন্যার আশঙ্কা করেছিলাম, সে অনুযায়ী পূর্বাভাসও দেওয়া হয়েছে। এর ফলে জুলাইয়ের শুরুতেই একটি স্বল্পমেয়াদি বন্যা হতে পারে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ভারতের অরুণাচল, আসাম, মেঘালয় ও হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ থেকে নেমে আসা উজানের পানিতে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি বাড়বে। আর জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এই সময় কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, পাবনা, নওগাঁ ও নাটোরের নিম্নাঞ্চলে বন্যা হতে পারে। একই সময়ে দেশের উত্তরাঞ্চলেরে তিস্তা ও ধরলা নদীর পানিও বাড়তে পারে। তিস্তার পানি কয়েকটি জায়গায় বিপৎসীমা অতিক্রম করে অববাহিকাভুক্ত লালমনিরহাট, নীলফামারী ও রংপুরের নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা হতে পারে।

পাশাপাশি ভারতের আসাম ও মেঘালয়ের বৃষ্টির পানিতে সুরমা-কুশিয়ারা ও মেঘনা অববাহিকার উজানের সারিগোয়াইন, যাদুকাটা, সোমেশ্বরী, ভুগাই-কংস, মনু, খোয়াই নদ-নদীর পানি দ্রুত বেড়ে আকস্মিক বন্যা হতে পারে।

এছাড়াও ভারতের বিহার ও উত্তর প্রদেশের কিছু কিছু স্থানে মাঝারি ও ভারী বৃষ্টির কারণে গঙ্গার পানি বাড়তে পারে। এর ফলে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি বেড়ে পদ্মায় এসে পড়ে কয়েকটি জায়গায় বিপৎসীমা অতিক্রম করবে। এ সময়ে দেশের মধ্যাঞ্চলের রাজবাড়ি, ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও চাঁদপুর জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা হতে পারে। তবে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে গঙ্গা নদীর অববাহিকার জেলাগুলোতে বন্যার আশঙ্কা নেই।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পাওয়া তথ্য অনুযায়ী সুনামগঞ্জের লড়েরগড়ে জাদুকাটা নদীর পানি বিপৎসীমার ৫৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছিল। আর সিলেটের সারিঘাটে সারিগোয়াইন বইছিল বিপৎসীমার ৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে। সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৬ সেন্টিমিটার নিচে থাকলেও ২৪ ঘণ্টায় পানি বেড়েছে ৭২ সেন্টিমিটার। এক দিনের মধ্যে তা বিপৎসীমা পেরিয়ে যাবে বলে পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র মনে করছে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের প্রকৌশলীরা জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে স্বল্প মেয়াদী বন্যার আভাস দিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল, উত্তর-মধ্যাঞ্চল, মধ্যাঞ্চলের বহ্মপুত্র-যমুনা ও পদ্মা অববাহিকার লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, পাবনা, নওগাঁ ও নাটোর জেলার নিম্নাঞ্চলে এ সময় বন্যার শঙ্কা রয়েছে।