শ্রমিকের অধিকার আদায়ের দিন আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক মে ১, ২০২১, ০৭:৩০ এএম
সংগৃহীত

ঢাকা: শ্রমিকের অধিকার আদায়ের ঐতিহাসিক মহান মে দিবস আজ শনিবার (১ মে) । বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের দিন। শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের চরম আত্মত্যাগে ন্যায্য অধিকার আদায়ের এক অবিস্মরণীয় দিন। ‘শ্রমিক-মালিক নির্বিশেষ, মুজিববর্ষে গড়বো দেশ’— এই প্রতিপাদ্য নিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে এবারের মে দিবস।

মহান মে দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে শ্রমিক সমাবেশ, শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

মহান মে দিবস উদযাপন উপলক্ষে জাতীয় পত্রিকাসমূহ বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো দিনটি উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান ও টকশো সম্প্রচার করবে।

১৮৮৬ সালের এই দিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকরা ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। ওইদিন তাদের আত্মদানের মধ্যদিয়ে শ্রমিক শ্রেণির অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য শ্রমিকদের আত্মত্যাগের এই দিনকে তখন থেকেই সারা বিশ্বে ‘মে দিবস’ হিসেবে পালন করা হচ্ছে।

মহান মে দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।

দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল শ্রমজীবী মানুষকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, কোভিড-১৯ সংক্রমণ জনিত মহামারিতে বিশ্ব আজ বিপর্যস্ত। বাংলাদেশেও করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ভয়াল থাবা আঘাত হেনেছে। ফলে গভীর সংকটে পড়েছে শিল্প-প্রতিষ্ঠানসহ দেশের শ্রমজীবী মেহনতি মানুষ। এ পরিস্থিতিতে সরকার জনগণের পাশে থেকে ত্রাণকাজ পরিচালনাসহ সর্বাত্মক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে সরকার বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। তাই কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।


তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজীবন মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করেছেন। তিনি ছিলেন শ্রমজীবী মানুষের অকৃত্রিম বন্ধু। স্বাধীনতার অব্যবহিত পর ১৯৭২ সালে জাতির পিতার উদ্যোগ ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সদস্যপদ লাভ করে এবং আইএলও-র ৬টি কোর কনভেনশনসহ ২৯টি কনভেনশন অনুসমর্থন করে। এটি শ্রমজীবী মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও তাদের অধিকার রক্ষায় এক অনন্য মাইলফলক। বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন পূরণে শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণে সকলকে দলমত নির্বিশেষে একাত্ম হতে হবে। এই অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে শ্রমিক-মালিক সম্প্রীতি দেশের উন্নয়নের পথকে তরান্বিত করবে বলে আমার বিশ্বাস।

দিবসটি উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সরকার দেশের শ্রমজীবী মানুষের জীবন-মান উন্নয়ন ও কল্যণে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। বিশ্বব্যপী করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ভয়াল পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের সরকার শ্রমজীবী মানুষের পাশে থেকে ত্রাণ বিতরণসহ সর্বাত্মক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সরকার সংকট মোকাবিলায় শ্রমিকদের বেতনের জন্য ৮ হাজার ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে।

তিনি বলেন, রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক, চামড়াজাত পণ্য ও পাদুকা শিল্পে কর্মহীন হয়ে পড়া ও দুঃস্থ শ্রমিকদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন নীতিমালা, ২০২০ বাস্তবায়নের জন্য শ্রম অধিদপ্তরের অনুকূলে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করেছে। করোনা পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কল-কারখানা চালু রাখার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিশ্চিতকরতে হবে।

এ দিকে মহান মে দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে পাঠানো এক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন বার্তায় চলমান সংকটে কর্মহীন, খেটে খাওয়া, শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সমাজের সকল বিত্তবান ও স্বচ্ছল মানুষদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দলটি।

এতে বলা হয়, করোনা ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট সংকটে সারাবিশ্ব এক মানবিক সংকটের সম্মুখীন। মানবিক সংকটের মুখে পড়েছে শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের জীবন-জীবিকাও। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র নেতৃত্বাধীন সরকারের পক্ষ থেকে খেটে খাওয়া, দিনমজুর কর্মহীন এইসব মানুষের ঘরে ঘরে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। সরকারের পাশাপাশি সারাদেশে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এবং সমাজের অনেক বিত্তবান মানুষ খেটে-খাওয়া দিনমজুর মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।

আগামীনিউজ/নাহিদ