দেশে খাদ্যশস্য মজুদ আছে মাত্র ৪.৬২ লাখ টন

নিজস্ব প্রতিনিধি এপ্রিল ২৪, ২০২১, ০১:৪২ পিএম
ছবিঃ সংগ্রহীত

ঢাকাঃ দেশের সরকারি গুদামে মাত্র চার দশমিক ৬২ লাখ টনের মতো খাদ্যশস্য মজুদ আছে, যা কয়েক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। মজুদ বাড়াতে সরকার গত বছরের তুলনায় বেশি দামে কৃষক ও চালকল মালিকদের কাছ থেকে ধান, চাল ও গম কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ফুড প্ল্যানিং মনিটরিং কমিটি (এফপিএমসি) গতকাল এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় স্থানীয় ডিলারদের কাছ থেকে ১০ লাখ টন সেদ্ধ চাল ও দেড় লাখ টন আতপ চাল সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ছাড়া, কৃষকদের কাছ থেকে সাড়ে ছয় লাখ টন ধান কেনারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বৈঠক শেষে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার  বলেন, ‘চলতি মৌসুমে আমরা সাড়ে ১১ লাখ টন চাল ও সাড়ে ছয় লাখ টন ধান কিনতে যাচ্ছি। দুয়েক দিনের মধ্যে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।’

আলোচনা শেষে কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক জানান, প্রাথমিকভাবে ৪০ টাকা কেজি দরে সেদ্ধ চাল ও ৩৯ টাকা কেজি দরে আতপ চাল কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সভায় অংশ নেওয়া এক কর্মকর্তা জানান, প্রতি কেজি ধানের দাম ২৭-২৮ টাকা দরে নির্ধারণ করা হবে।

আলোচনায় অংশ নেওয়া কয়েকজনের কাছ থেকে জানা গেছে, চাল ও ধানের পাশাপাশি সরকার স্থানীয় বাজার থেকে এক লাখ টন গম সংগ্রহ করবে। তবে, এর দামের বিষয়ে তারা কিছু জানাতে পারেননি।

ধান কেনার প্রক্রিয়া আগামী ২৮ এপ্রিল ও চাল কেনার প্রক্রিয়া ৭ মে থেকে শুরু হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সর্বশেষ ২০ এপ্রিল সরকারের চার দশমিক ৬২ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুদ ছিল।

মহামারি সত্ত্বেও চলতি অর্থবছরের শুরুতে ২০২০ সালের ১ জুলাই সরকারের ১১ দশমিক ২০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুদ ছিল। ২০১৯ সালের ১ জুলাই মজুদ ছিল ১৫ দশমিক ৯৯ মেট্রিক টন।

খাদ্যের মজুদ কমে যাওয়ায়, ‘কাজের বিনিময়ে খাদ্য’সহ সরকার পরিচালিত বিভিন্ন প্রকল্পে খাদ্যশস্যের পরিবর্তে নগদ অর্থ প্রদান করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি অর্থবছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত পাঁচ দশমিক ৩৭ লাখ টন খাদ্যশস্য জনগণের মধ্যে বিতরণ করেছে সরকার। সোশ্যাল সেফটি নেট বা সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির অধীনে একইসময়ে ১২ দশমিক ১২ লাখ মেট্রিক টন চালের সমমূল্যের নগদ অর্থ বিতরণ করা হয়েছে। 

এদিকে, গত এক বছরে মোটা চালের দামও বেড়ে গেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের ২০ মার্চ থেকে চলতি বছরের ২১ মার্চ পর্যন্ত খুচরা বাজারে মোটা চালের দাম কেজি প্রতি ১৩ দশমিক ২৪ টাকা বেড়েছে।

আন্তর্জাতিক বাজার থেকে চাল কিনে সরকার মজুদ বাড়ানোর চেষ্টা করলেও, বিভিন্ন কারণে প্রত্যাশা অনুযায়ী তা সফল হয়নি।

চলতি বছরের ১১ এপ্রিল পর্যন্ত সরকার সাড়ে সাত মেট্রিক টন চাল আমদানির জন্য সরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন চুক্তি সই করে। তবে, এ পর্যন্ত মাত্র দুই দশমিক ৪৩ মেট্রিক টন চাল আমদানি করা হয়েছে।

বেসরকারিভাবে চলতি অর্থবছরের ১১ এপ্রিল পর্যন্ত পাঁচ দশমিক ৬৪ লাখ মেট্রিক টন চাল এবং ৩৯ দশমিক ৪৩ লাখ মেট্রিক টন গম আমদানি করা হয়েছে।

ফুড প্ল্যানিং মনিটরিং কমিটির (এফপিএমসি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে মার্চের শেষে খাদ্যশস্য মজুদের পরিমাণ ছিল চার দশমিক ৭৮ লাখ টন, যা ২০১৭-১৮ সালের আগস্টের পাঁচ দশমিক ১৬ লাখ টনের পর সর্বনিম্ন।

সরকার গত বোরো ও আমন মৌসুমে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে চাল ও ধান কেনার যে উদ্যোগ নিয়েছিল, তা সফল না হওয়া মজুদ কমে যাওয়ার একটি কারণ। প্রতিবেদনে বলা হয়, উৎপাদন খরচের চেয়ে নির্ধারিত মূল্য কম হওয়ার কারণে এ সমস্যা হয়েছিল।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সরকারের খাদ্য মজুদ বাড়ানোর প্রক্রিয়া সফল করার জন্য এফপিএমসি এবার উৎপাদন খরচের চেয়ে নির্ধারিত মূল্য বাড়িয়ে ধরেছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, কৃষি মন্ত্রণালয় এবার প্রতি কেজি ধানের উৎপাদন খরচ নির্ধারণ করেছে ২৭ টাকা, যা গত বছরের চেয়ে এক দশমিক ২৭ টাকা বেশি। প্রতি কেজি চালের উৎপাদন খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৯ টাকা, যা গত বছরের চেয়ে এক দশমিক শূন্য ২ টাকা বেশি।

খাদ্য মজুদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, এফপিএমসি গত বছর কৃষকের কাছ থেকে ২৬ টাকা কেজি দরে দুই লাখ টন ধান এবং চালকল মালিকদের কাছ থেকে ৩৭ টাকা কেজি ধরে সাড়ে ছয় লাখ টন চাল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

উৎপাদন খরচের চেয়ে নির্ধারিত মূল্য কম হওয়ায় কৃষক এবং চালকল মালিকরা সরকারের কাছে খাদ্যশস্য বিক্রির পরিবর্তে বাজারে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়।

গত বছর সরকার ১৬ দশমিক ৭০ লাখ টন বোরো চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। কিন্তু, কিনতে পেরেছিলে মাত্র নয় দশমিক ১০ লাখ টন। অন্যদিকে, সাড়ে আট লাখ টন আমন ধান ও চালের বিপরীতে মাত্র ৮৮ হাজার টন কিনতে পেরেছিল বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

দেশের সবচেয়ে বড় চালকল ও আমিদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম মজুমদার গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক চিত্ত মজুমদারের কাছে সরকারের সিদ্ধান্ত ও নতুন নির্ধারিত মূল্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সরকার যদি চালের মূল্য ৪০ টাকা নির্ধারণ করে তবেই সফল হতে পারবে। তা না হলে লক্ষ্যে পৌঁছানো সরকারের জন্য কঠিন হবে।’

এ বছর বোরো উৎপাদন ভালো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কৃষক যেন সঠিক মূল্য পায়, এজন্য সরকারের ৪০ টাকা মূল্য নির্ধারণ করা উচিত।’

চিত্ত মজুমদার আরও বলেন, ‘সরকারের উচিত ছিল গত বছরের জুন-জুলাই মাসেই চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া। যদি তা করা হতো, তবেই বর্তমান বাজার স্থিতিশীল থাকতো।’

আগামীনিউজ/প্রভাত