নারায়ণগঞ্জে লঞ্চ ডুবি, ৫ নারীর লাশ উদ্ধার

রফিকুল ইসলাম রফিক, নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি এপ্রিল ৫, ২০২১, ০৭:৪০ এএম
সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জ: শীতলক্ষ্যা নদীতে কার্গো জাহাজের ধাক্কায় যাত্রীবাহী একটি লঞ্চডুবির ঘটনায় রাত ১১ টা পর্যন্ত ৫ জন নারীর মৃতদেহ পাওয়া গেছে।

রোববার সন্ধ্যায় অর্ধশত যাত্রী নিয়ে রাবিতা আল হাসান নামে একটি লঞ্চ নারায়ণগঞ্জ থেকে মুন্সিগঞ্জ যাওয়ার পথে শীতলক্ষ্যা নদীর কয়লা ঘাট এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল ঘটনাস্থলে গেলেও ঝড়হাওয়ার কারণে রাত সাড়ে ১০ টায় উদ্ধার কাজ শুরু করে।  এদিকে ঘটনা তদন্তে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। সন্ধা সাড়ে ছয়টায় দূর্ঘটনা ঘটলেও নারায়ণগঞ্জ ঘাটে উদ্ধারকারি জাহাজ থাকলেও তারা উদ্ধার করতে না আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন দূর্ঘটনা কবলিতদের আত্মীয়রা।

এ ঘটনায় নিখোঁজ ৬ যাত্রীর নাম জানা গেছে। এরা হচ্ছেন, মুন্সীগঞ্জের মহারানী, মোঃ সোলেমান ও তার স্ত্রী সালমা বেগম, সুনিতা সাহা তার দুই ছেলে বিকাশ সাহা ও অনিক সাহা।

লঞ্চ মালিক সমিতির নারায়ণগঞ্জ জোনের সভাপতি বদিউজ্জামান বাদল জানান, নারায়ণগঞ্জ থেকে মুন্সিগঞ্জগামী রাবিতা আল হাসান নামের লঞ্চটি শীতলক্ষা নদীর চর সৈয়দপুর এলাকায় একটি সিষ্টার ভেহিক্যাল এম ভি এস কে থ্রি’র ধাক্কায় ডুবে যায়। লঞ্চটিতে ত্রিশ-চল্লিশজন যাত্রী ছিলো। 

ঘটনার পরপরই নারায়ণগঞ্জে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়। ঘটনার পরপর এলাকাবাসি যাদের উদ্ধার করে তাদের একজন দীপু (১৮)। তিনি ইজি বাইকের মেকানিক। তিনি জানান, তিনি তার মা মহারানী (৪০) কে সাথে নিয়ে মুন্সিগঞ্জে তাদের নিজেদের বাড়িতে ফিরছিলেন। তারা নারায়ণগঞ্জে থাকলেও লকডাউনের কারনে তারা চলে যাচ্ছিলেন।

তিনি জানান, লকডাউনের কারনে অনেকে বাড়িতে ফিরতে থাকায় অন্যদিনের তুলনায় লঞ্চে লোক সংখ্যা বেশি ছিলো। লঞ্চের নিচের ডেকে ষাট-সত্তর জন ছিলো। তবে উপরে কম ছিলো। লঞ্চ চর সৈয়দপুর এলাকায় পৌছলে একটি জাহাজ লঞ্চটির কাছাকাছি চলে আসে। লঞ্চের চালক, সুকানিসহ অন্যরা জাহাজটিকে নদীর পশ্চিম পাশে চাপিয়ে যেতে সিগন্যাল দিতে থাকে।

লঞ্চটিও চেষ্টা করে নদীর পূর্বপাড়ে চেপে দূর্ঘটনা এড়াতে। লঞ্চের যাত্রীরা জাহাজের গতি ধীর করার জন্য চিৎকারও করতে থাকে। তীর থেকেও অনেকে চিৎকার করতে থাকে। কিন্তু জাহাজটি অত্যন্ত দ্রুতবেগে এসে লঞ্চের সাথে ধাক্কা খায়। ফলে লঞ্চের তলা ফেটে পানি উঠতে থাকে। অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই লঞ্চটি ডুবে যায়। ডুবে যাওয়ার পরেও জাহাজটি লঞ্চের উপর দিয়ে চলে যায়। 

দীপু জানায়, সে ডুবন্ত যাওয়া লঞ্চের একটি অংশ ধরে ভাসতে থাকে। এসময় বেশ কয়েকটি ট্রলার তাদের পাশ দিয়ে চলে গেলেও তাদের উদ্ধার করেনি। বেশ কিছুক্ষন পরে একটি নৌকা এসে তাকেসহ কয়েকজনকে উদ্ধার করে। 
বৃষ্টির মধ্যেই ঘটনাস্থলে কাজ করছিলো ফায়ার ব্রিগেডের ডুবুরিদের একটি টিম। 

নারায়ণগঞ্জ ফায়ার ব্রিগেডের উপ-পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফিন জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে আমরা বিআইডব্লিউটিএকে খবর দেই। আমাদের ডুবুরি দল দূর্ঘটনার শিকার লোকজনকে উদ্ধারের চেষ্টা করছে।

মা সালমা বেগম (৫০) ও বাবা সোলেমান (৬০) কে লঞ্চে তুলে দিয়ে পরের লঞ্চে মুন্সিগঞ্জ যাওয়ার কথা ছিলো তাদের দুই মেয়ে বন্যা ও বিউটি। বাবা-মার জন্য তারা নদীর কিনারে বসে চিৎকার করে কাঁদছিলেন। বন্যা জানান, তাদের মা-বাবাকে ঢাকা মেডিক্যাল থেকে ডাক্তার দেখিয়ে তারা মুন্সিগঞ্জ ফিরছিলেন। পরের লঞ্চে উঠেই তারা দূর্ঘটনার খবর পান। 

তারা বলেন, সন্ধা সাড়ে ছয়টায় দূর্ঘটনা ঘটেছে। সাথে সাথে ৯৯৯ এ ফোন করে মানুষ জানিয়েছে। আমরা জানিয়েছি। কিন্তু উদ্ধারকারি জাহাজ রাত দশটা পর্যন্ত আসেনি। কেন আসেনি ? অথচ উদ্ধারকারি জাহাজ নারায়ণগঞ্জ ঘাটেই রয়েছে। সেখান থেকে এখানে আসতে দশ মিনিটের বেশি লাগার কথা না। 

লঞ্চের যাত্রী সুনিতা সাহার বোন মনিকা সাহা বলেন, তার বোন সুনিতা ও সুনিতার দুই ছেলে বিকাশ সাহা এবং অনিক সাহা রোববার সকালে ঢাকা যান। ফেরার পথে লঞ্চ ডুবে মনিকা ও তার দুই ছেলে নিখোঁজ রয়েছেন।

বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জের উপ পরিচালক (বন্দর) মোবারক হোসেন বলেন, টার্মিনাল ছেড়ে যাওয়ার আগে টার্মিনালের ভয়েজ অব ডিক্লারেশন অনুযায়ী ডুবে যাওয়া লঞ্চটিতে ৪৩ জন যাত্রী ছিলেন।

নারায়ণগঞ্জ সদর থানার ওসি শাহ জামান জানান, দূর্ঘটনার শিকার একজন নারীকে এলাকাবাসি উদ্ধার করে ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে নিয়ে আসে। বেশ ভূষা দেখে তিনি হিন্দু ধর্মালম্বি বলে মনে হয়েছে। তবে তার পরিচয় জানা যায়নি। 

এ রিপোর্ট লেখার সময় নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ ঘটনাস্থলে ছিলেন।

আগামীনিউজ/মালেক