ঢাকাঃ মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থান ও অং সান সু চি-কে আটকের পর ওই দেশের পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মাঝে দিনভর চলছে কানাঘুষা। এখন দেশে ফেরা নিয়ে সংশয়ে তাদের অনেকেই। মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের কারণে রোহিঙ্গাদের অনেকেই মনে করছেন প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যা ও নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন সাড়ে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। আগে আশ্রয় নেয়াসহ বর্তমানে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারের শিবিরগুলোতে বসবাস করছেন। সম্প্রতি সেখান থেকে নোয়াখালীর ভাসানচরে সরিয়ে নেয়া হয়েছে সাড়ে ৬ হাজার রোহিঙ্গাকে।
কক্সবাজারের টেকনাফের লেদা শরাণার্থী শিবিরে চায়ের দোকানে মোবাইল ফোনে মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থান ও সু চিকে গ্রেফতারের খবর দেখছিলেন কয়েকজন রোহিঙ্গা।
আশি বছর বয়সের আবদুল জব্বারের কাছে জানতে চাওয়া হয়, মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতিকে কিভাবে দেখছেন। জবাবে তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার সামরিক বাহিনী যে ‘ক্যু’ করেছে সেটি রোহিঙ্গাদের জন্য ভালো হবে না। আসলে ওই দেশের সামরিক জান্তা চায় না রোহিঙ্গারা দেশে ফিরে যাক। এবার রোহিঙ্গা বিষয়ে সু চির বক্তব্য আগের তুলনার অনেকটা নরম হয়েছিল। সু চি ক্ষমতায় থাকলে রোহিঙ্গাদের ফেরা সহজ হতো। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে ওই দেশের সেনারা চায় না রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হোক। আমি আগেই শিবিরে লোকজনকে বলেছিলাম মিয়ানমারে কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে। তা-ই হয়েছে।’
তবে ক্যাম্পভিত্তিক রোহিঙ্গাদের সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের নেতা সৈয়দ উল্লাহ মনে করেন, ‘সেনা অভ্যুত্থান রোহিঙ্গাদের জন্য ভালো হতে পারে। ২০১৭ সালে ওই দেশের সেনারা জেনোসাইড চালিয়েছিল, অং সান সু চি ক্ষমতার লোভে সেটি এক প্রকারে সমর্থন দিয়েছিলেন। এমনকি হেগের আদালতে সেনাদের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন। আজ তিনি ওই ক্ষমতার কাছে বন্দি হয়ে গেলেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘সামরিক বাহিনীর আন্তর্জাতিক সমর্থন প্রয়োজন, তাই রাজনৈতিকভাবে সামরিক বাহিনী রোহিঙ্গা ইস্যুতে মনোনিবেশ করতে পারে। ওই দিকটা আমাদের জন্য ভালো হতে পারে।’
সৈয়দ উল্লাহ জানান, সামরিক জান্তার আমলে যদি রোহিঙ্গাদের দাবি-দাওয়া মেনে নেয়া হয় তাহলে তিনি দেশে ফিরে যাবেন।
এদিকে মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। পাশাপাশি নতুন করে যাতে কেউ অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করতে না পারে, সে-বিষয়েও সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে বলে জানান বিজিবির পরিচালক (অপারেশন্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফয়জুর রহমান, ‘বিজিবি সীমান্তে সর্তক অবস্থানে রয়েছে। কেউ যদি অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে, কতৃপক্ষের আদেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে তার বক্তব্য, ‘সেনা অভ্যুত্থানের বিষয়টি তাদের নিজেদের ব্যাপার। ওইটার সাথে সীমান্তের এই মুহূর্তে কোনো সম্পর্ক নেই। এ ব্যাপারটা বিজিবির সদর দফতর নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।’
কক্সবাজার ৩৪ বিজিবি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আলী হায়দার আজাদ আহমেদও জানান, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে বিজিবি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে এবং কোনো অবৈধ অনুপ্রবেশ যাতে না ঘটে ওই বিষয়ে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সূত্র : ডয়চে ভেলে
আগামীনিউজ/এএইচ