দায়িত্ব পেয়ে যা বললেন নতুন অ্যাটর্নি জেনারেল

ডেস্ক রিপোর্ট অক্টোবর ১১, ২০২০, ০৮:৪৯ পিএম
ছবি সংগৃহীত

ঢাকাঃ অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন দেশের ১৪তম অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।

আজ রবিবার (১১ অক্টোবর) দুপুরে অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালনের প্রথম কর্মদিবসে নিজ কার্যালয় তিনি সাংবাদিকদের কাছে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন। 
 
এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, 'দক্ষতা ও সততায় মাহবুবে আলম এ অফিসটাকে, পদটাকে যে উচ্চতায় নিয়ে গেছেন, আমি চেষ্টা করবো সেটা বজায় রাখার। আমি চেষ্টা করবো তিনি যে উচ্চতা সৃষ্টি করে গেছেন, সেটা  ধরে রাখার।'

অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধে গণমাধ্যমের সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের সহযোগিতা চাই। আমি আপনাদের অনুরোধ করছি, আপনারা যদি আমাদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেন তাহলে দুর্নীতি বন্ধ করা অনেক সহজ হবে। আমি অ্যাটর্নি জেনারেল এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসেবে যেকোনো ধরনের দুর্নীতিকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করবো।’

অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে প্রথম কর্মদিবসে দু’জন অতিরিক্তি অ্যাটর্নি জেনারেলের পদত্যাগে অসুবিধার সৃষ্টি হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসে সবসময় আসা-যাওয়া থাকেই। ওনারা হয়তো অনেক দিন কাজ করেছেন, ব্যক্তিগত কোনো সমস্যার কারণে তারা হয়ত আর থাকছেন না। আমার সঙ্গে ওনাদের কথা হয়নি। এখন যদি তাদের পদত্যাপত্র গ্রহণ করা হয় তাহলে অবশ্যই আরও দুজন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগ দেবে সরকার।’

নারী শিশু নির্যাতনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নারী শিশু নির্যাতনের কথা যদি বলেন, সরকার কিন্তু আগামীকাল (১২ অক্টোবর) বিষয়টা কেবিনেট (মন্ত্রিপরিষদ) মিটিংয়ে তুলবেন। শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করে দেওয়া হচ্ছে। মৃত্যুদণ্ড করার পরে আমার মনে হয় যারা এ ধরনের অপরাধ করে তারা সাবধান হবে। এ অপরাধ করতে অনেকবার ভাববে। আমার মনে হয় সরকারের এ উদ্যোগটা যখন আইনে পরিণত হবে তখন কিন্তু এ ধরনের ঘটনা অনেকখানি কমে যাবে।’

মামলার জটকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মামলা জট কমানো। আমাদের দেশে অনেক মামলা রয়ে গেছে, অনেক মামলা জট হয়ে আছে। এ জট কমানো হচ্ছে বিচার বিভাগে আমার প্রধান চ্যালেঞ্জ।’

নতুন অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আপিল বিভাগের ভার্চুয়াল কোর্ট প্রায় ৪ হাজার মামলা নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন। আপিল বিভাগ কিন্তু পুরুনো মামলাগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনছেন। অ্যাটর্নি জেনারেল এবং আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসেবে আমি প্রধান বিচারপতিদেরকে অনুরোধ করবো, হাইকোর্টেও যেসব পুরুনো মামলা রয়েছে, সেগুলো নিষ্পত্তি করার জন্য বেঞ্চগুলোকে যেন বিশেষ নির্দেশনা দেন।`

‘তা ছাড়া আমি চেষ্টা করবো, বিভিন্ন জেলায় যারা পাবলিক প্রসিকিউটর রয়েছেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিচারাধীন যেসব মামলা স্থগিত হয়ে আছে, সেগুলোর দ্রুত শুনানির উদ্যোগ নিতে।’

ষোড়শ সংশোধনীর মামলা রিভিউ নিষ্পত্তির বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, `রিভিউ যেহেতু আপিল বিভাগে পেন্ডিং রয়েছে, তারা যে দিন তারিখ ধার্য করবেন, শুনানির জন্য এলে আমি চেষ্টা করবো দ্রুত শেষ করার জন্য।`

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, `রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের অদক্ষতার কারণে কোনো মামলায় যদি রাষ্ট্র হেরে যায়, আর তাতে যদি রাষ্ট্রের ক্ষতি হয় সেক্ষেত্রে বিষয়টি আমি সরকারের দৃষ্টিতে নিয়ে আসবো। সরকার তখন সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।`

অ্যাটর্নি জেনারেল ও সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন আপনি- এখন দুটি দায়িত্ব কীভাবে পালন করবেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, `বারের যে কোনো সদস্য বারের সভাপতি হতে পারেন, সে হিসেবে দুটি দায়িত্ব পালনে কোনো সমস্যা নাই।`

গত ২৭ সেপ্টেম্বর মাহবুবে আলমের মৃত্যুতে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তার পদটি শূন্য হয়। তার স্থলাভিষিক্ত হন আমিন উদ্দিন।

এএম আমিন উদ্দিন ১৯৬৩ সালের ১ অক্টোবর মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৮৯ সালের ২৮ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। আইনজীবী হিসেবে তিনি তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে কাজ করে আসছেন।

এএম আমিন উদ্দিন আইনজীবী হিসেবে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের অন্তর্ভুক্ত (এনরোলমেন্ট) হন ১৯৮৭ সালে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে অন্তর্ভুক্ত হন ২০০৩ সালে এবং ২০১৫ সালে সিনিয়র আইনজীবী হন।

তিনি ১৯৯৬ সালে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ও ২০০০ সালে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে একবার সম্পাদক নির্বাচিত হন। সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির গত দুই মেয়াদে সভাপতি পদে নির্বাচিত হন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এএম আমিন উদ্দিন।

আগামীনিউজ/জেহিন