উত্তরে বন্যার অবনতি

ডেস্ক রিপোর্ট অক্টোবর ২, ২০২০, ১১:৩৯ পিএম
ছবি; সংগৃহীত

ঢাকাঃ যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, করতোয়া ও ঘাঘট নদীর পানি অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানি। গৃহপালিত পশু-পাখি নিয়ে দুর্ভোগে পড়েছে পানিবন্দি মানুষ। পানির তোড়ে কোথাও কোথাও ভেঙে গেছে বাঁধ। ভেসে গেছে রাস্তা, ফসলসহ হাজারও একর আবাদী জমি। সব মিলিয়ে মানববেতর জীবনযাপন করছে বানভাসি মানুষ।

ব্রহ্মপুত্র, করতোয়া ও ঘাঘট নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় শুক্রবার গাইবান্ধা জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। করতোয়ার পানি বিকেল ৩টা পর্যন্ত বিপৎসীমার ১১৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। অপরদিকে ব্রহ্মপুত্রের পানি বেড়ে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল। ফলে গোবিন্দগঞ্জ, সাদুল্লাপুর, পলাশবাড়ী, সুন্দরগঞ্জ এবং সদর উপজেলার ৮০ হাজার লোক পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

গোবিন্দগঞ্জে প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ১৩টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৫টি ওয়ার্ডে ঢুকে পড়েছে বানের পানি। এ ছাড়া সাদুল্লাপুরের ছয়টি, সুন্দরগঞ্জের দু'টি, সদরের পাঁচটি এবং পলাশবাড়ী উপজেলার একটি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। ডুবে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার থেকে গোবিন্দগঞ্জ-দিনাজপুর ভায়া ঘোড়াঘাট আঞ্চলিক মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। প্লাবিত হয়েছে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেপ। উপজেলা পরিষদ চত্বরেও পানি উঠেছে।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ গাইবান্ধার উপ-পরিচালক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবারের বন্যায় জেলায় ১৩ হাজার ১৫ হেক্টর জমির আমন, মাসকলাই এবং শাক-সবজির ক্ষেত তলিয়ে গেছে। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, বন্যার্তদের মধ্যে বিতরণের জন্য ১০৮ মেট্রিক টন চাল, শিশুখাদ্যসহ নগদ আড়াই লাখ টাকা এবং ৮০০ প্যাকেট শুকনো খাবার সরবরাহ করা হয়েছে।

এদিকে, ভারী বর্ষণ আর উজানের পাহাড়ি ঢলে রংপুরের মিঠাপুকুরে ঘাঘট ও যমুনেশ্বরী নদী তীরবর্তী গ্রামে বন্যা দেখা দিয়েছে। এসব গ্রামের প্রায় ১৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি। পানির তোড়ে কালভার্ট ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে শতাধিক বসতঘর। ভারি বর্ষণে ভেঙে পড়েছে ২ শতাধিক মাটির ঘর। এ ছাড়া ৩ হাজার ৭০০ হেক্টর আমনক্ষেত এবং ৪০০ হেক্টর সবজি পানিতে ডুবে রয়েছে। বৃহস্পতিবার সরেজমিন উপজেলার পূর্ব এলাকায় ঘাঘট নদ তীরবর্তী মির্জাপুর, বালারহাট, ভাংনী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে পানিবন্দি মানুষের দুর্দশার চিত্র। স্থানীয় সংসদ সদস্যের পক্ষে এসব এলাকায় শুকনো খাবার বিতরণ অব্যাহত আছে।

গোপীপুর এলাকার কুতুবুজ্জামান চৌধুরী হিরণ বলেন, এবারের মতো বন্যা আর দেখা যায়নি। উঁচু এলাকাতেও পানি উঠেছে। বসতবাড়িতে বুক সমান পানি। অনেকেই বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন।

ইউএনও মামুন ভুঁইয়া বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করতে ইউপি চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

সিরাজগঞ্জে পাউবোর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী একেএম রফিকুল ইসলাম জানান, শুক্রবার বিকেল ৩টায় যমুনার পানি সিরাজগঞ্জ শহররক্ষা বাঁধ এলাকায় বিপৎসীমার ৯ সেন্টিমিটার এবং কাজিপুর উপজেলা পয়েন্টে ১৮ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল।

অন্যদিকে ঈশ্বরদীর পাকশী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে গতকাল করতোয়া নদীর পানি বিপৎসীমার ১০ দশমিক ৪৩ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল। এ ছাড়া পদ্মার পানি বেড়ে প্রায় ১ হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন চার গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ।

আগামীনিউজ/আশা