ঢাকাঃ সরকারের প্রশাসনিক প্রাণকেন্দ্র বাংলাদেশ সচিবালয় করোনা পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর গত মাসের মাঝামাঝি থেকে সচিবালয়ের দফতরগুলোতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সরব উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। উপস্থিতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে করোনা আক্রান্ত কর্মকর্তার সংখ্যা। এই তালিকা থেকে বাদ পড়ছেন না সচিব থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
সচিবালয়ে কোনো দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দাফতরিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে চাইলে তাতে অধস্তনদের উপস্থিত থাকা জরুরি হয়ে পড়ে। ফলে দফতরগুলোর প্রত্যেক পর্যায়ের জনবল উপস্থিত হওয়ায় লোকের সংখ্যা বেড়ে যায়। এর ফলে সতর্ক থাকার পরও করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। অনেক ক্ষেত্রে কার দ্বারা কে আক্রান্ত হচ্ছেন তাও বোঝা মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। ফলে কেউ আক্রান্ত হলে সংশ্লিষ্টদের আইসোলেশনে যেতে হয় এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগের পুরো কার্যক্রম ব্যাহত হয়।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা সালাউদ্দিন আহমেদ করোনা আক্রান্ত হয়ে ফিরেছেন মাত্র কয়েকদিন হলো। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিবের দফতরে কর্মরত ব্যক্তিগত কর্মকর্তা আনিসুর রহমান গত সপ্তাহে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। খাদ্য মন্ত্রণালয়ে নিয়োজিত ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের এক যুগ্ম সচিব বর্তমানে করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তথ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুন নাহার করোনা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হওয়ার পর অফিস করছেন।
এদিকে ভূমি মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর একান্ত সচিব ড. মো. রাজ্জাকুল ইসলাম করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর ফলে ভূমিমন্ত্রীর দফতরের আশপাশের অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী আইসোলেশনে আছেন। করোনা আতঙ্কে অনেকেই অফিসে আসতে অপারগতা প্রকাশ করছেন।
সচিবালয়ের বিভিন্ন দফতরে সাক্ষাৎ প্রার্থীদের আপাতত না আসতে অনুরোধ করা হয়েছে। কিছু কিছু দফতরে সাক্ষাৎ প্রার্থীদের জন্য সাক্ষাৎ পূর্ব প্রস্তুতিমূলক কিছু নির্দেশনাও টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের টেবিলের সামনে নির্ধারিত দূরত্ব বজায় রেখে ভিজিটর চেয়ার রাখা হয়েছে। সাক্ষাৎপ্রার্থীদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করে স্থান ত্যাগের ব্যাপারে অনেক সময় অনুরোধ করছেন কর্মকর্তারা।
লকডাউনের পর সচিবালয়ে দফতরগুলো খুলে দেওয়া হলেও সচিবালয়ে দর্শনার্থী প্রবেশের ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত কোনো পাস ইস্যু করা হচ্ছে না। এমনকি গণমাধ্যম কর্মীদের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডের নবায়ন দেওয়া হচ্ছে না। তথ্য অধিদফতর থেকে বলা হচ্ছে, একটি পত্রিকা থেকে ন্যূনতম যে সংখ্যক সাংবাদিককে না দিলেই নয় এমন সংখ্যক সংবাদকর্মীর অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড নবায়ন দেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে ঢালাওভাবে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড নবায়নের নীতি পরিহার করছে তথ্য অধিদফতর। এরপরও সচিবালয়ের ভিতরে স্বাভাবিক সময়ের মতোই গাড়ি প্রবেশ করছে।
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. বদরুল আরেফিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা বাসার চেয়ে অফিসকে বেশি সেভ হোম বানানোর চেষ্টা করেছি। আমরা নিজেরা আলোচনা করি নিয়েছি অফিস থেকে যেন কেউ বাসায় করোনাভাইরাস নিয়ে না যায়। বাসায় কেউ আক্রান্ত হলে অথবা উপসর্গ দেখা দিলে তিনি অফিসে আসবেন না। গেল কয় মাসে আমরা যেটা দেখেছি কেউ অফিস থেকে করোনাভাইরাস উপসর্গ বা নিয়ে বাসায় যায়নি বরং বাসায় কেউ কেউ আক্রান্ত হয়েছে যাদের অফিসে আসতে নিষেধ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে আমরা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি, সেই মেকানিজমগুলো এখানে চালু রয়েছে। আমরা বাসায় তো কেউ কেউ আক্রান্ত হচ্ছি, তাই বলে বাসা থেকে আমাদের কেউ বের করে দিতে পারবে না। প্রত্যেকে অফিসে যোগদানের পর আমরা সবাইকে অনুরোধ করেছি, সাবধানে থেকে সবাইকে কাজ করতে। আমাদের মন্ত্রণালয়ে অনেকের করোনা হয়েছিল।
আমরা সবাইকে বলেছি, কারও যদি জ্বর হয় টেস্ট রিপোর্ট হাতে না পাওয়া পর্যন্ত তিনি অফিসে আসতে পারবে না। আমরা তাদের জন্য রিক্স নিতে পারব না। আমরা পরিষ্কার বলেছি কেউ যেন অফিস রোগজীবাণু নিয়ে বাসায় না ঢোকে। আমরা তো এর চেয়ে বেশি দায়িত্ব নিতে পারি না। তা ছাড়া অফিসের বাইরে কে কোথায় কীভাবে বিচরণ করছে সেই দায়িত্ব নেওয়া মুশকিল।
বেশ কিছুদিন ধরে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জাহানারা পারভীন অফিস করতে পারছেন না। তার স্বামী করোনাক্রান্ত হওয়ায় তিনি নিজেও বাসায় আইসোলেশনে আছেন। করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে নানা প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পরেও এভাবে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তার আক্রান্তের ঘটনায় অনেকের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
আগামীনিউজ/জেহিন