ঢাকাঃ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ হত্যা মামলার তদন্তে সহায়ক তথ্য পাচ্ছে র্যাব। ঘটনাস্থল পরিদর্শন, প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান, আটককৃত পুলিশ সদস্য ইন্সপেক্টর প্রদীপ, তদন্ত কেন্দ্রের আইসি লিয়াকত ও এস আই নন্দদুলাল এবং পুলিশের মামলার ৩ সাক্ষীর কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনায় মিলেছে ক্লু। হত্যাকাণ্ডের কারণ নিশ্চিত হতে পুলিশের ভেতর থেকে তথ্য পাওয়ার চেষ্টা করছে র্যাব।
এছাড়া নীলিমা রিসোর্ট থেকে জব্দকৃত ২৯ ধরনের আলামতের মধ্যে হত্যার কোনো যোগসূত্র আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টেও চোখ রাখছে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। এরমধ্যে প্রত্যক্ষদর্শী ও একাধিক সাক্ষীর বক্তব্যে গড়মিল থাকলেও সেগুলো যাচাইবাছাই করা হচ্ছে। তদন্তে এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য ও আলামতের সূত্রে মিলছে অনেক প্রশ্নের জবাব। সময় নিয়ে হলেও নির্ভুল অভিযোগপত্র তৈরি করতে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা কাজ করছেন। র্যাব হেডকোয়ার্টার্স থেকে তদন্তকাজ তদারকি করা হচ্ছে। চোখ রাখছে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সও।
এদিকে তদন্তকাজ গুছিয়ে আনতে পর্যায়ক্রমে কাজ করছে র্যাব। আটকের পর কারাগারে থাকা ওসি প্রদীপসহ ৩ পুলিশ ও পুলিশের মামলার ৩ সাক্ষীর বক্তব্য নেয়ার পর এবার আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) ৩ সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে তদন্তকারী সংস্থা র্যাব। গতকাল শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাদের কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে র্যাব হেফাজতে নেয়া হয়েছে। এপিবিএনের ৩ সদস্যকে গত ১৮ আগস্ট গ্রেপ্তারের পর আদালতে সোপর্দ করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে ৭ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন আদালত।
কক্সবাজার জেলা কারাগারের সুপার মোকাম্মেল হোসেন জানান, কক্সবাজার র্যাব-১৫ এর একটি দল এপিবিএনের ৩ সদস্যকে জিজ্ঞাবাসাদের জন্য তাদের হেফাজতে নিয়েছে। আদালতের আদেশে এই ৩ সদস্যকে র্যাব নিয়ে যায়। এই ৩ জন হলেন- কক্সবাজার ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের উপপরিদর্শক শাহাজাহান, কনস্টেবল রাজিব ও আবদুল্লাহ। এরা ৩ জনই ৩১ জুলাই রাতে শামলাপুর পুলিশ তদন্তকেন্দ্রে দায়িত্বরত ছিলেন।
র্যাব-১৫ কক্সবাজারের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা খায়রুল ইসলাম জানান, তাদের ৩ জনকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. শাহীন মোহাম্মদ আবদুর রহমান চৌধুরী জানান, তাদের ৩ জনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা বেলা একটার দিকে সম্পন্ন হয়।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক আশিক বিল্লাহ বলেছেন, এজাহারে নাম থাকলেও টুটুল ও মোহাম্মদ মোস্তফা নামে কোনো পুলিশ সদস্য নেই। গ্রেপ্তারকৃত এপিবিএনের ৩ সদস্য ৩১ জুলাই রাতে সিনহাকে গুলি করে হত্যা করার সময় শামলাপুর পুলিশ তল্লাশি চৌকিতে দায়িত্ব পালন করেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বলে জানা গেছে। আদালতের আদেশ মতে তাদের অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তার হেফাজতে নেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত আইসি লিয়াকতের সরকারি অস্ত্র ও দুটি ম্যাগজিন গতকাল হেফাজতে নিয়েছে র্যাব। এর ব্যালাস্টিক পরীক্ষা করা হবে। ঘটনার রাতে ওই অস্ত্র থেকে কয়টি গুলি ব্যবহার করা হয়েছে তাও খতিয়ে দেখছে তারা।
র্যাবের একাধিক কর্মকর্তা জানান, মামলাটি স্পর্শকাতর। তদন্তে অনেক ধরনের তথ্য প্রমাণ ও আলামত পাওয়া যাচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনও তদন্তে সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। তদন্তে ধীরে ধীরে অনেক কিছু পরিষ্কার হয়ে আসছে। মিলছে অনেক প্রশ্নের জবাব। তবে তদন্ত শেষ হওয়ার আগে এনিয়ে কথা বললে তদন্তকাজ ব্যাহত হতে পারে বলে মনে করেন তারা।
প্রসঙ্গত, গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের মারিশবুনিয়া পাহাড়ে ভিডিওচিত্র ধারণ করে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকার নীলিমা রিসোর্টে ফেরার পথে শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ। এ সময় পুলিশ সিনহার সঙ্গে থাকা সিফাতকে আটক করে কারাগারে পাঠায়। পরে রিসোর্ট থেকে শিপ্রাকে আটক করা হয়। দুজনই বর্তমানে জামিনে মুক্ত। ওই ঘটনায় ওসি প্রদীপসহ মামলায় অভিযুক্ত ৩ আসামি র্যাব হেফাজতে রয়েছেন। অন্য ৪ পুলিশ সদস্য এবং পুলিশের দায়ের করা মামলার ৩ সাক্ষী রিমান্ড শেষে এখন কারাগারে আছেন। সর্বশেষ গত শুক্রবার সিনহাকে গুলি করার ঘটনা প্রত্যক্ষভাবে সরেজমিন দেখতে এবং ঘটনার বিবরণ জানতে রিমান্ডে থাকা ওসি প্রদীপ, পরির্দশক লিয়াকত ও এসআই নন্দদুলাল রক্ষিততে নিয়ে শামলাপুরে যায় তদন্তকারী সংস্থা র্যাব। সূত্র; ভোরের কাগজ
আগামীনিউজ/এএইচ