টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে ৮ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ

নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ১৪, ২০২০, ০৬:৫৬ পিএম
সংগৃহীত

ঢাকা : পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম বলেছেন, ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলীয় এলাকায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে ৮ হাজার কোটি টাকার ৪টি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। চলতি অর্থ বছরে ওই সকল প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। যা আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে ওই সকল প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। এছাড়া উপকূল উন্নয়ন বোর্ড গঠনের বিষয়টি সরকার বিবেচনা করছে বলে তিনি জানান।

মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে ‘উপকূলে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে জরুরি করণীয়’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

করোনা স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনুষ্ঠিত ওই সংলাপে সভাপতিত্ব করেন সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র। সংলাপে বক্তৃতা করেন খুলনা-৬ (পাইকগাছা-কয়রা) আসনের সংসদ সদস্য মো. আক্তারুজ্জামান বাবু, সাবেক সংসদ সদস্য মো. নবী নেওয়াজ, ডিআরইউ’র সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাস, নৌ সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দে, জনউদ্যোগের তারিক হোসেন, ফেইথ ইন অ্যাকশনের নৃপেন বৈদ্য, লিডার্সের সানজিদুল হাসান, সাংবাদিক আব্দুল্লাহ মুয়াজ প্রমুখ।

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এনামুল হক শামীম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঘূর্ণিঝড় আম্পান দূর্গত খুলনার ১৪নং পোল্ডারে ৯৫৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ও ৩১নং পোল্ডারে এক হাজার ২০১ কোটি ১২ লাখ টাকা এবং সাতক্ষীরার ৫নং পোল্ডারে ৩ হাজার ৬৭৪ কোটি ৩ লাখ ও ১৫ নং পোল্ডারে ৯৯৭ কোটি ৭৮ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া আরও কয়েকটি প্রকল্প নেয়া হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, শুধু বেড়িবাঁধ নয়, পুরো উপকূলের উন্নয়নে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে হাওড় উন্নয়ন বোর্ডের ন্যায় উপকূলীয় উন্নয়ন বোর্ড গঠনের বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজার থেকে সাতক্ষীরা পর্যন্ত সুপার ড্রাইভওয়ে নির্মাণ, সুন্দরবন ও নদী সুরক্ষা, খাবার পানি সমস্যার সমাধানসহ অন্যান্য সমস্যাগুলো সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

সংলাপে সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু বলেন, ঘূর্ণিঝড় দূর্গত অঞ্চলের মানুষের দাবি একটাই, ‘ত্রাণ চাই না, টেকসই বেড়িবাঁধ চাই’। জনগণ ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী স্থায়ী বাঁধ করতে হবে। এই বাঁধ শুধু নির্মাণ করলেই হবে না। বাঁধের উপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ ও বাঁধের দুপাশে বনায়ন করতে হবে। বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণে স্থানীয় সরকার ও জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ওই এলাকার জনগণ সরকারের সাথে থাকবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

সংলাপে গৃহীত সুপারিশে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগকে মাথায় রেখে স্থায়ী ও মজবুত বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে হবে, যার নিচে ১০০ ফুট, উপরে ৩০ ফুট এবং যার উচ্চতা হবে ৩০ ফুট। বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য জরুরি তহবিল গঠন ও বাঁধ ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় সরকারকে সম্পৃক্ত করতে হবে। ওয়াপদা বাঁধের ১০০ মিটারের মধ্যে চিংড়ি বা কাঁকড়ার ঘের তৈরিতে সরকারের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা দ্রুত কার্যকর করতে হবে। উপকূলীয় জনগণের নিরাপদ খাবার পানির টেকসই ও স্থায়ী সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সর্বোপরি উপকূলের উন্নয়নে পৃথক বোর্ড গঠনের সুপারিশ করা হয়।

সংলাপে পরিবেশ ও নাগরিক আন্দোলনের প্রতিনিধিরা বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকা নির্ভর করে বেড়িবাঁধের ওপর। বাঁধের ক্ষতি হলে তাদের সবকিছু ভেসে যায়। বাড়িঘর নষ্ট হয়, ফসলের ক্ষতি হয়। তাই ওই অঞ্চলের মানুষের কাছে জরুরি খাবার না দিয়ে বাঁধটা শক্ত করে বানিয়ে দেয়ার দাবিটাই প্রধান। তারা বলেন, এই মুহূর্তে বাঁধের ফাঁদ জনজীবন বিপন্ন করে তুলেছে। অথচ পরিকল্পনা হয়, বাজেট হয়, কিন্তু স্থায়ী ও শক্তিশালী বেড়িবাঁধ হয় না। বিভিন্ন সময়ে বাঁধ সংস্কারে যে সকল প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, তা বাস্তবায়নে চরম অনিয়ম হয়েছে বলে তারা দাবি করেন।

আগামীনিউজ/এসপি /জেএফএস