দেশের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির সঙ্গে মানুষের মনে আতঙ্ক বাড়ছে। ভাঙন শঙ্কায় মানুষ নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে ঝুঁকিতে রয়েছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ। অনেকের ভাঙনের কবলে পড়ে বাড়িঘর হারিয়ে ঠাঁই হয়েছে অজানা ঠিকানায়। না খেয়ে দিন যাপন করছেন অনেকেই।
ইতোমধ্যে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ফেরিঘাট ও নদী পাড়ের হাজারো পরিবার ভাঙনের কবলে পড়েছেন। ভূমিহীন হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। এখনও ১০টি গ্রাম রয়েছে ভাঙনের চরম ঝুঁকিতে। এরই মাঝে এসব গ্রামে ভাঙন শুরু হয়েছে।
দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ছাত্তার মেম্বারপাড়া, নতুনপাড়া, ব্যাপারীপাড়ার একাধিক নদী পাড়ের মানুষ জানান, প্রায় ১০-১২ বছর ধরেই নদী ভাঙছে। প্রতিবছরই নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে বসতভিটাসহ কৃষি আবাদী জমি। ভাঙন রোধে নেই কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা। যখন ভাঙন শুরু হয় তখনই কেবল নামে মাত্র কাজ করে। যে কাজে কোনো সফলতা আসে না। শুধু শুধু সরকারের টাকা নষ্ট।
কুড়িগ্রামে ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রায় আড়াই শতাধিক চরাঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে খাদ্য ও বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকটে রয়েছে।
অন্যদিকে ব্রহ্মপুত্রের পানি বাড়া-কমার সাথে সাথে যাত্রাপুর ইউনিয়নের গারুহারা, বলদিয়া গ্রামসহ নদ-নদী তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকায় শুরু হয়েছে নদী ভাঙন। এই ভাঙনের কবলে পড়ে ঘর-বাড়ি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে অনেক পরিবার।
ধরলা নদীর ভাঙন দেখা দিয়ে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের সারডোব এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে। এই বাঁধের প্রায় ৪০০ মিটার এলাকা জুড়ে ভাঙন দেখা দেয়া আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে নদী তীরবর্তী প্রায় ২০টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ।
লালমনিরহাটে গত কয়েক দিনে নদী ভাঙনে প্রায় ২ শতাধিক পরিবারের ঘর-বাড়ি, গাছ-পালা ও আবাদী জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তারা রাতারাতি নিঃস্ব হয়ে পথে বসে গেছে। নিঃস্ব পরিবারগুলো আশ্রয়ে আশায় কেউ কেউ অন্যত্র নিকট আত্মীয়-স্বজনদের কাছে চলে গেছে। কেউ কেউ উঁচু বাঁধের রাস্তায় ও সরকারি জমিতে ঝুঁপড়ি ঘর তুলে আশ্রয় নিয়েছে। কেউ কেউ সরকারি স্কুল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছে। নদীর অব্যাহত ভাঙনে আতঙ্কে রয়েছে আরও শত শত পরিবার।
গাইবান্ধায় তিস্তা, যমুনা, কাটাখালি ও করোতোয়া নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। ফলে এখনো পানিতে তলিয়ে আছে বাড়িঘর ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পানি কমতে থাকলেও কমেনি দুর্ভোগ। বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়া বাড়িঘর ছেড়ে গবাদি পশু নিয়ে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে। গাইবান্ধা সদর, সাঘাটা, সুন্দরগঞ্জ ও ফুলছড়ি উপজেলার ৫০টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে মনবেতর জীবন যাপন করছেন। সেইসঙ্গে পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর ফসলি জমি। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নেয়া শুরু করেছেন। কেউ কেউ আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে যাচ্ছেন, কেউ বাঁধে আশ্রয় নিচ্ছেন আবার কেউ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিচ্ছেন।
তিস্তায় ফের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ফে বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছেন নীলফামারী জেলার ১০ ইউনিয়নের ৩০ হাজার মানুষ।
বগুড়ায় নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে নদীতীরবর্তী মানুষের মধ্যে বন্যা আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ভাঙনের কবলে পড়া সারিয়াকান্দির ৪ শতাধিক বাড়িঘর অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও উপজেলার বহুলাডাঙা কমিউনিটি ক্লিনিক, আউচারপাড়া সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কাকালিহাতা জামে মসজিদ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে বসেছে।
এছাড়াও বিভিন্ন জেলায় পানি বৃদ্ধির সঙ্গে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
আগামীনিউজ/জেএফএস