করোনাভাইরাস (কোভিন-১৯) সংক্রমণ বাংলাদেশেও শনাক্ত হয়েছে। তিন জন এই মরণব্যাধি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে।
রবিবার (৮ মার্চ) বাংলাদেশে প্রথমবার তিনজন করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে বলে জানায় সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআর। তাদের চিকিৎসা চলছে বক্ষব্যাধি হাসপাতালে। এছাড়া আরো তিন জনকে রাখা হয়েছে কোয়ারেন্টাইনে।
আক্রান্ত রোগীরা রাজধানীর মহাখালীর জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে কঠোর গোপনীয়তার সাথে তাদের তিনজনকে ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা চলছে। সামাজিকভাবে যাতে তিনজন রোগী ও তাদের পরিবার অন্যদের কাছ থেকে আলাদা না হয় সেজন্য তাদের পরিচয় গোপন রেখেছে কর্তৃপক্ষ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিশেষ সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, আক্রান্তদের মধ্যে দু’জন ইতালি ফেরত এবং একজন তাদের পরিবারের। এদের মধ্যে দুজন পুরুষ ও একজন নারী। বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। এছাড়াও আরো কয়েকজন বিভিন্ন দেশ থেকে সম্প্রতি ফিরে আসা এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।
জানা যায়, জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতাল ছাড়াও বেসরকারি হাসপাতালেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে এবং তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত একটি হাসপাতালে কঠোর গোপনীতার সঙ্গে রোগী চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ভর্তি রয়েছেন এবং তারা চিকিৎসা নিচ্ছেন।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং অন্যান্য বিমান, স্থল ও নৌবন্দরে করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ বিশেষ যন্ত্র বসানো হলেও এখন পর্যন্ত তার মাধ্যমে শনাক্ত করা যায়নি। শনাক্ত যা হয়েছে তা বিভিন্ন হাসপাতালে।
সূত্র জানায়, সরকারী সিদ্ধান্তে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দেশের সব হাসপাতালে রেড অ্যালার্ট জারি করেছে। সন্দেহজনক কেউ হাসপাতালে এলে শনাক্ত না হওয়া পর্যন্ত রোগী সম্পর্কে কোনো তথ্য কাউকে দেওয়া যাবে না। শনাক্ত হলেও সেই তথ্য শুধুমাত্র সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআর কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। কোনো ধরনের গুজব, আতঙ্ক ও ভীতি ছড়ায় এমন কার্যক্রম থেকে বিরত রাখতেই সরকারের এমন কঠোর সিদ্ধান্ত।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ করোনাভাইরাস রোধে বা যাতে করোনাভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে বলে জানা গেছে। এর আগে সরকারের এক মন্ত্রী করোনাভাইরাস (কোভিড১৯) এর প্রথম ধাপে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য জানিয়েছিল আইইডিসিআর।
রবিবার (৮ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৩টায় রাজধানীর মহাখালীতে আইইডিসিআর কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, আক্রান্তরা সবাই ইতালিফেরত। তবে সারাদেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলে উল্লেখ করেন তিনি।
গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহান থেকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৬ হাজার ১৯৫ জন আক্রান্ত হয়েছে। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৬০০ জনে। এছাড়া এই ভাইরাসে আক্রান্ত ৬০ হাজার ১৯০ জন চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে। বিশ্বব্যাপী ১০৩টি দেশ ও অঞ্চলে এই ভাইরাসের প্রকোপ ছড়িয়ে পড়েছে।
শুধু চীনেই করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ৬৯৬ এবং মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজার ৯৭ জনের। চীনের পর করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি দক্ষিণ কোরিয়ায়। দেশটিতে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৭ হাজার ১৩৪ এবং মৃত্যু হয়েছে ৫০ জনের।
চীনের বাইরে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ইতালিতে। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ৫ হাজার ৮৮৩ এবং মৃত্যু হয়েছে ২৩৩ জনের। অপরদিকে, ইরানে এখন পর্যন্ত ৫ হাজার ৮২৩ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে ১৪৫ জন।
জাপানে নোঙ্গর করা প্রমোদতরী ডায়মন্ড প্রিন্সেসের ৬৯৬ যাত্রী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং মৃত্যু হয়েছে ছয়জনের। জার্মানিতে এই ভাইরাসে ৮শ’ জন আক্রান্ত হয়েছে। ফ্রান্সে ৯৪৯ জন আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছে ১৬ জন। জাপানে আক্রান্ত হয়েছে ৪৬১ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের।
স্পেনে আক্রান্ত ৫২৫ এবং মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের, যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত ৪৩৮, মৃত্যু ১৯। সুইজারল্যান্ডে আক্রান্ত ২৬৮ এবং মারা গেছে ১ জন, যুক্তরাজ্যে আক্রান্ত ২০৯ মৃত্যু ২। ইরাকে আক্রান্ত ৫৪, মৃত্যু ৪। ভারতে ৩৪ জন আক্রান্ত হয়েছে। তবে দেশটিতে এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগীর প্রাণহানি ঘটেনি।
এছাড়া, সুইডেন আক্রান্ত ১৬১, সিঙ্গাপুরে ১৩৮, নেদারল্যান্ডসে আক্রান্ত ১২৮ এবং মৃত্যু ১, নরওয়েতে আক্রান্ত ১২৭, বেলজিয়ামে ১০৯, হংকংয়ে ১০৮, মালয়েশিয়ায় ৯৩, অস্ট্রিয়ায় ৮১, অস্ট্রেলিয়ায় আক্রান্ত ৭৭, মৃত্যু ৩, বাহরাইনে ৮৫, কুয়েতে ৬১, কানাডায় ৬০, থাইল্যান্ডে ৫০ এবং মৃত্যু ১, তাইওয়ানে আক্রান্ত ৪৫ এবং মৃত্যু ১, গ্রিসে ৬৬, আমিরাতে ৪৫, আইসল্যান্ডে ৫০, সান মারিনোতে ২৬ জন আক্রান্ত এবং মৃত্যু ১, ডেনমার্কে আক্রান্ত ২৭, লেবাননে ২৮, ইসরাইলে ২৫, চেক রিপাবলিকে ২৬, আয়ারল্যান্ডে ১৯, আলজেরিয়াতে ১৯, মিসরে ৪৮ এবং ভিয়েতনামে ১৭ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।
অপরদিকে, ওমানে ১৬, ফিলিস্তিনে ১৯, মিসরে ১৫, ফিনল্যান্ডে ১৯, ব্রাজিলে ১৯, ইকুয়েডরে ১৪, পর্তুগালে ১৩, রাশিয়াতে ১৫, ক্রোয়েশিয়ায় ১২, কাতারে ১২, ম্যাকাউতে ১০, এস্তোনিয়ায় ১০, জর্জিয়ায় ১৩, রোমানিয়ায় ১৩, আর্জেন্টিনায় ৯, স্লোভেনিয়ায় ১২, আজারবাইজানে ৯, বেলারুশে ৬, মেক্সিকোতে ৭, পাকিস্তানে ৬, ফিলিপাইনে আক্রান্ত ৬ এবং মৃত্যু ১, সৌদি আরবে ৭, চিলিতে ৭, পোল্যান্ডে ৬, স্লোভাকিয়ায় ৩, পেরু ৬, ইন্দোনেশিয়ায় ৪, নিউজিল্যান্ডে ৫, সেনেগালে ৪ ও হাঙ্গেরিতে ৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন।
এছাড়া লুক্সেমবার্গে ৩, উত্তর মেসিডোনিয়ায় ৩, বসনিয়ায় ৩, ডোমিনিক প্রজাতন্ত্রে ২, মরক্কোতে ২, আফগানিস্তান ৪, কম্বোডিয়া ২, বুলগেরিয়া ২, ক্যামেরুন ২, মালদ্বীপ ২, দক্ষিণ আফ্রিকা ২ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। অপরদিকে, আন্দোরা, আর্মেনিয়া, জর্ডান, লাটভিয়া, লিথুনিয়া, মোনাকো, নেপাল, নাইজেরিয়া, শ্রীলঙ্কা, তিউনিসিয়া, ইউক্রেন, ভুটান, কোস্টারিকা, ভ্যাটিকান সিটি, গিব্রালটার, সার্বিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং টোগোতে একজন করে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।
আগামীনিউজ/সুমন/মামুন