ঢাকা : মশা ক্ষুদ্র৷ কিন্তু এই মশা নিয়ে অতীতে নাকাল হয়েছেন ঢাকার দুই সিটির মেয়র৷ এবারো কি তারা নাকাল হবেন? না মশা মেরে নিজেদের শক্তির জানান দেবেন৷
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশঙ্কাও মশা নিয়ে৷ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নতুন দুই মেয়র ও কাউন্সিলরদের শপথ অনুষ্ঠানে ২৭ ফেব্রুয়ারি তিনি তাঁর এই আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন৷ তিনি বলেছেন, ‘এখন থেকেই মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিতে হবে সবাইকে৷ মশা আপনার ভোট যেনো খেয়ে না ফেলে সেটা আপনাকে নিশ্চয়ই দেখতে হবে৷ মশা ক্ষুদ্র হলেও এটা অনেক শক্তিশালী৷ এটা আপনাদের মাথায় রাখতে হবে৷’
প্রধানমন্ত্রী ক্ষুদ্র মশাকে অযথা শক্তিশালী বলেননি৷ গত বছর ডেঙ্গু মহামারি আকার ধারণ করেছিলো৷ ডেঙ্গুর জন্য দায়ি এডিস মশাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়নি৷ মেয়রদের পরাজিত করে এডিস মশা তাদের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে৷ স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসেবেই গত বছর ঢাকাসহ সারাদেশে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ২৬৬ জন৷ আর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন৷ গত বছর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়৷ দেশে প্রথম ডেঙ্গু ধরা পড়ে ২০০০ সালে৷ সেই থেকে শুরু করে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫০ হাজার ৭৬ জন৷ আর ২০১৯ সালে এক বছরেই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন৷
তবে ২৮ ফেব্রুয়ারি একটি সুখবর পাওয়া যায়৷ ১১ মাসের মাথায় ওই দিন দেশের ১১টি সরকারি এবং বেসরকারি ২৯টি হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত কোনো রোগী ছিলোনা এবং নতুন করেও কেউ ভর্তিও হননি৷
কিন্তু এই সুখবরে খুব বেশি খুশি হওয়ার কারণ নেই৷ কয়েকদিন আগে ঢাকায় ১৫ দিনের মধ্যে ঢাকায় মশার ঘনত্ব অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে আশঙ্কা করছেন কীটতত্ত্ববিদরা৷ ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস মশাও গত বছরের এই সময়ের তুলনায় বেশি৷ সামনে বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর জন্য দায়ি এডিস মশার ‘উত্তম প্রজনন কাল’৷ তখন আসলে প্রকৃত পরিস্থিতি বোঝা যাবে৷ স্বাস্থ্য অধিদফতরের সম্প্রতিক জরিপে ঢাকার ১০০টি জায়গার মধ্যে ১৩টি জায়গায় এডিস মশা ও লার্ভার উচ্চ ঘনত্ব পাওয়া গেছে৷
আইন অনুয়ায়ী ঢাকা দক্ষিণের মেয়র দায়িত্ব পাবেন ১৪ মে’র পর আর উত্তরের মেয়র ১৬ মে’র পর৷ তাহলে তারা কি বসে থাকবেন? যদি বসে না থাকেন তাহলে কাজ করবেন কিভাবে?
ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, তিনি দায়িত্ব পাওয়া পর্যন্ত বসে থাকবেন না৷ আগামী সোমবার (২ মার্চ) থেকেই তিনি মাঠে নামছেন৷ তিনি বলেন, ‘আগামী সোমবার থেকে দেখবেন৷ আমি সবাইকে নিয়ে মশক নিধন ও পরিবেশের জন্য কাজ শুরু করবো৷ যেখানে এডিস মশা সেখানেই যাবো৷ প্রচার চালাবো৷’
আর তার এই কাজে দায়িত্ব পাওয়া না পাওয়া কোনো সমস্যা নয় বলে জানান তিনি৷ সিটি করপোরেশনের সাথে সমন্বয় করে কাজ করবেন৷ মশাকে এবার পরাজিত করা সম্ভব হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এবার চেষ্টার কোনো ত্রুটি হবেনা৷’
উত্তরের প্যানেল মেয়র জামাল মোস্তফা জানান, তাদের এবছরের মশা নিয়ন্ত্রণের সব পরিকল্পনা করা আছে৷ কাজ শুরু হয়ে গেছে৷ তিনি বলেন, ‘আমরা নতুন মেয়রকে জানিয়েই সব কাজ করছি৷ তার পরামর্শ নিচ্ছি৷’
তিনি আরো বলেন, ‘মশা নিধন করতে না পারলে মানুষতো বিরক্ত হয়ে গালি দেবেই৷ প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন ঠিক বলেছেন৷ আমাদের প্রমাণ করতে হবে মশার চেয়ে অমরা শক্তিশালী৷
ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন এরইমধ্যে নতুন মেয়র ফজলে নূর তাপসকে সিটি করপোরেশনে বৈঠকের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন৷ দক্ষিণের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ‘বর্তমান মেয়র ফোন করেছিলেন নতুন মেয়রকে৷ সাঈদ খোকন চান ফজলে নূর তাপস মশক নিধনসহ নগরীর অন্যান্য বিষয়ে যেনো তাঁর পরামর্শ দেন৷ তাঁর পরামর্শ বাস্তবায়নে আমাদের কোনো অসুবিধা নেই৷ তাতে আমাদের কাজের গতি আরো বাড়বে৷ তিনি সময় দিলেই এই বৈঠক হবে৷ নতুন মেয়র মহোদয় বৈঠকে রাজি হয়েছেন৷ এখন যেকোনো দিন এই বৈঠক হবে৷’
তিনি আরো বলেন, ‘তবে আমরা বসে নেই৷ ২০২০ ঢাকা দক্ষিণের মশক নিধনের পরিকল্পনা আমরা আগেই করে ফেলেছি৷ আর সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজও শুরু হয়েছে৷’
জানা গেছে, সাঈদ খোকন এখন দেশের বাইরে আছেন৷ তিনি ফিরে এসেই তাপসের সঙ্গে বৈঠক করবেন৷ তবে এনিয়ে তাপসের বক্তব্য জানা যায়নি৷
দুই মেয়র কবে দায়িত্ব পাবেন সেটাকে কাজের জন্য কোনো সমস্যা মনে করেন না নগর বিশেষজ্ঞ ও স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন৷ তিনি মনে করেন তারা এখন বসে থাকলে যখন দায়িত্ব পাবেন তখন ঢাকার মশা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে৷ তাই তাদের উচিত এখন সিটি করপোরেশনের সাথে সমন্বয় করে কাজের চাপ দেয়া, পরামর্শ দেয়া৷ তিনি বলেন, ‘এতে আইনে কোনো সমস্যা নেই৷ দুই সিটি করপোরেশনে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আছেন৷ নতুন মেয়ররা তাদের সাথে বসতে পারেন৷ আর দক্ষিণেতো মেয়র সাঈদ খোকন আছেনই৷ ফজলে নূর তাপস সরসরি তার সাথে বসে তিনি কী চান তা জানাতে পারেন৷’
তিনি মনে করেন নতুন দুই মেয়র কোনো অসহযোগিতার মুখে পড়বেন না৷ সেরকম হলে তারা সেটা নগরবাসিকে জানাতে পারেন৷
সূত্র : ডয়েচে ভেলে
আগামীনিউজ/সবুজ