ঢাকা : তিন মাস পর দায়িত্ব পেলে মশা ও দূষণরোধে কাজ শুরু করতে পরবেন ঢাকা মেয়রেরা। কিন্তু প্রশ্ন হলো ততদিন মশারা কী বসে থাকবে? দূষণও কী বাড়তেই থাকবে?
ঢাকার দুই সিটিতে নির্বাচন হয়ে গেছে ১ ফেব্রুয়ারি। নগরবাসী দুইজন নতুন মেয়রও পেয়েছেন। তবে আইন অনুযায়ী তারা দায়িত্ব পাবেন মে মাসে। কিন্তু এরইমধ্যে ঢাকায় মশার ঘনত্ব বাড়ছে। বাড়ছে দূষণ।
দুই দিন আগে কীটতত্ত্ববিদদের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, আগামী ১৫ দিনে ঢাকায় মশার ঘনত্ব অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে। ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস মশাও গত বছরের এই সময়ের তুলনায় বেশি। সামনে বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস মশার ‘উত্তম প্রজনন কাল'।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশারের নেতৃত্বে এই গবেষণা চালানো হয়। তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব এবার কতটা বেশি হতে পারে তা বলার সময় এখনো আসেনি। মার্চ-এপ্রিলে এটা বোঝা যাবে। তবে গত বছরের জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি মাসে এডিস মশার যে ঘনত্ব ছিলো এবছরের একই সময়ে ঘনত্ব বেশি। আবার গত বছর একই সময়ের তুলনায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা এই বছরে বেশি। এবছর এখন পর্যন্ত এডিস মশা এবং ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা গতবছরের চেয়ে বেশি। বৃষ্টিপাতের ফলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে। আমরা তাই আগাম ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলছি। আগাম ব্যবস্থা না নেয়া হলে এবছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি অতীতের চেয়ে আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে জরিপে তিনি ঢাকা শহরের ১০০টি জায়গার মধ্যে ১৩টি জায়গায় এডিস মশা ও লার্ভার উচ্চ ঘনত্ব পেয়েছেন। আর এডিস মশা পাওয়া গেছে ২৬টি জায়গায়। আর তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে ঢাকা শহরকে ছয়টি ভাগে ভাগ করে ধারাবাহিক জরিপ চালাচ্ছেন। তাতে পরিবাগে সবচেয়ে বেশি এডিস মশা পাওয়া গেছে। এছাড়া বাসাবো, খিলগাঁও, শাঁখারী বাজার, পাটুয়াটুলি, লালমাটিয়া, মোহাম্মদপুর, গুলশান ও বনানীতে এডিস মশা ও লার্ভা পাওয়া গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেবে গত বছর (২০১৯) ১২ মাসে হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন। মারা গেছেন ২৬৬ জন। আর এখনো হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হচ্ছে। জানুযারি মাসে হাসপাতালে মোট ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন ১৯৭ জন। গত বছর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়।
এই প্রেক্ষাপটে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন চলছে নতুন মেয়র ছাড়াই। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের মেয়াদ শেষ হবে ১৬ মে। এরপর নতুন মেয়র আতিকুল ইসলাম দায়িত্ব নেবেন। কারণ নির্বাচনের আগে তাকে পদত্যাগ করতে হয়েছে। এখন চলছে প্যানেল মেয়র দিয়ে। আর দক্ষিণ সিটির মেয়রের মেয়াদ শেষ হবে ১৪ মে। সাঈদ খোকন মেয়র নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করায় তিনিই ওই সময় পর্যন্ত মেয়র থাকবেন। ফজলে নূর তাপস দায়িত্ব নেবেন ১৪ মের পর। নতুন দুইজন মেয়রেরই এক নাম্বার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি হলো রাজধানী ঢাকাকে এডিস মশা মুক্ত করা। ডেঙ্গুকে বিদায় জানানো।
দুই সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা কর্মচারীরা এখন নতুন মেয়রের অপেক্ষায় আছেন। তাই মশা নিধনসহ সবই কাজই গতি হারিয়েছে। আর নতুন মেয়ররা মশা নিধনের আহ্বান জানিয়েই বসে আছেন। ফলে মশা নিয়ে উদ্বেগ উৎকন্ঠা বাড়ছে। ঢাকা উত্তর সিটির মশক নিধন টিম কয়েকদিন আগে পুরনো যন্ত্র নিয়ে মশা নিধনের নামার পর রণে ভঙ্গ দেন। কারণ ওই মেশিনগুলো কাজ করছে না। নিম্নমানের হওয়ায় আগুন ধরে যাচ্ছে।
তবে এরইমধ্যে নতুন করে ২০০ ফগার মেশিন, ২৩৮টি পালস ফগমেশিন, ১৫০টি হস্তচালিত মেশিনসহ আরো কিছু যন্ত্রপাতি কেনা হলেও তা এখনো ব্যবহার শুরু হয়নি বলে উত্তর সিটি কর্পোরেশন থেকে জানাগেছে।
মঙ্গলবার দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন অবশ্য মশা নিধনে ক্র্যাশ প্রোগ্রামের উদ্বোধন করেছে। মেয়র সাঈদ খোকন ওই প্রোগ্রামের উদ্বোধন করে বলেছেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় আগামী এক সপ্তাহ এডিস মশা নিধনসহ সাধারণ মানুষকে সচেতন করা হবে।’
এদিকে বায়ুদূষণে ঢাকা এখন বিশ্বের এক নাম্বার শহর। এয়ার ভিজ্যুয়ালের আজকের (মঙ্গলবার) প্রতিবেদনেও ঢাকা বায়ুদূষণে বিশ্বের শীর্ষ শহর। ঢাকার বাতাস চরম অস্বাস্থ্যকর বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আর ঢাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও এখন নাজুক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের অধ্যাপক ড. আব্দুস সালাম ঢাকার বায়ু ও পরিবেশ দূষণ নিয়ে কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘প্রচলিত নিম্নমানের জ্বালানি তেল, কয়লা পোড়ানো, শিল্প কারখানা, বর্জ্য পোড়ানোর সঙ্গে বায়ু দূষণের অন্যতম কারণ ধুলো। এটা সাধারণ ধুলো নয় ঢাকায় এখন বিষাক্ত ধুলো বাতাসকে দূষিত করছে। বাড়ি ঘর ও রাস্তাঘাট নির্মাণ, উন্নয়নমূলক কাজের জন্য এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।এটা নিয়ে অনেক কথা হলেও এটা প্রতিরোধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। সিটি কর্পোরেশন একটা বড় ভূমিকা পাল করতে পারে। কিন্তু তারও কোনো কাজ করছে না। তারা পানি না ঢেলে উল্টো সকাল বেলা ঝাড়ু দিয়ে ঢাকাকে ধুলোর শহরে পরিণত করছে।’ সূত্র : ডয়েচে ভেলে
আগামীনিউজ/সবুজ