ঢাকাঃ আইপি টিভির (ইন্টারনেট প্রটোকল টেলিভিশন) নামে দেশে তৎপর স্বাধীনতাবিরোধীরা। ক্ষমতাসীন অনেক প্রভাবশালীর সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক তৈরি করে তাদের অনেকেই স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলের লাইসেন্স নেওয়ারও পাঁয়তারা করছেন। তবে ইতিমধ্যে তাদের অনেকে আইপি টিভি লাইসেন্স নেওয়ার জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন।
আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, তথ্য মন্ত্রণালয়ের সার্কুলার উপেক্ষা করে এসব আইপি টিভি সংবাদ এবং টকশো প্রচার করে যাচ্ছে। তৈরি করে ফেলেছে আইপি টিভি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন। আর সেই সংগঠনের সভাপতি মুহাম্মদ আতাউল্লাহ খান ফ্রীডম পার্টির সক্রিয় কর্মী ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
অন্যদিকে, আইপি টিভির নামে দেশের বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি এবং ব্ল্যাকমেইলিংয়ের অহরহ ঘটনা ঘটছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের রহস্যজনক ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগীরা। সম্প্রতি গ্রেফতার হেলেনা জাহাঙ্গীরের ‘জয়যাত্রা টিভি’তে অভিযান চালানো হলেও বাকিগুলো রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
জানা গেছে, ‘গণমাধ্যম নীতিমালা ২০২০’ অনুযায়ী আইপি টিভি কোনো ধরনের সংবাদ প্রচার করতে পারবে না। তবে বাস্তবতা হলো, খোদ সরকারের বিভিন্ন দফতরে সংবাদ সংগ্রহ এবং বিভিন্ন সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন আইপি টিভির প্রতিনিধিরা।
এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে আইপি টিভির অনুমোদন দেওয়া না হলেও যত্রতত্র গজিয়ে ওঠা এসব আইপি টিভিতে কী ধরনের প্রচার-প্রচারণা চলছে সেটিও নজরদারিতে নেই। আরও ভয়ংকর তথ্য হলো, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনিদের রাজনৈতিক পুনর্বাসনের রাজনৈতিক প্ল্যাটফরম ‘ফ্রিডম পার্টি’র অনেক নেতা-কর্মী আইপি টিভি খুলে বসেছেন। কেউ কেউ সামনে থাকলেও অনেকে নেপথ্য থেকে তাদের লক্ষ্য বাস্তবায়নের দিকে এগোচ্ছেন।
আইপি টিভি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মুহাম্মদ আতাউল্লাহ খান বিতর্কিত সেই ফ্রীডম পার্টি করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এর আগে ছাত্রশিবিরের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকার তথ্য বেরিয়ে এসেছে। তবে সেসব পরিচয় গোপন রেখে এই আতাউল্লাহ খান খুলেছেন ‘জনতার টিভি’ নামে একটি আইপি টিভি। তবে শুধু তিনি একাই নন, তার মতো একইভাবে আরও বহু বিতর্কিত ব্যক্তি রয়েছেন আইপি টিভির মালিকদের তালিকায়। রয়েছেন চাঁদাবাজির ঘটনায় অভিযুক্তরাও। এমনকি একাধিকবার অস্ত্র- গোলাবারুদসহ আটক ও খুনের মামলার আসামিদের দখলেও রয়েছে আইপি টিভি।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মিজান উল আলম বলেন, আইপি টিভির কার্যক্রম নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। অনেক ধরনের কথাবার্তা হচ্ছে আইপি টিভি নিয়ে। এখন পর্যন্ত ৫৭৯টি আবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যাচাই-বাছাই করার জন্য পাঠানো হয়েছে। আরও অনেক আবেদন মন্ত্রণালয়ে এসেছে। এক্ষেত্রে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই যাচাই-বাছাই করব। এর বাইরে মন্ত্রণালয়ে একজন যুগ্ম সচিবের নেতৃত্বে সোশ্যাল মিডিয়া উইং খোলার জন্য কাজ চলছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, আইপি টিভির অনেক মালিক নিজেকে ক্ষমতাসীন দলের নেতা পরিচয় দিলেও দলে তাদের নেই পদ-পদবি। অনেকে পরিচয় দেন ১৪ দলের শরিক জোটের বড় নেতা। আইপি টিভির নামে ইউটিউবে চ্যানেল খুলে নিজেকে পরিচয় দেন টেলিভিশনের মালিক। দেশে আইপি টিভির সংখ্যা কত তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই সংশ্লিষ্ট কারও কাছেই।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে যেসব আইপি টিভির কথা জানা যাচ্ছে তার বড় অংশই বিতর্কিত রাজনৈতিক সংগঠন জামায়াতে ইসলামী ও এর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীদের পরিচালিত। মূলধারার গণমাধ্যমে স্থান না পেয়ে জামায়াত-শিবির নেতা-কর্মীরা ঠাঁই নিয়েছেন আইপি টিভিতে।
এ প্রসঙ্গে সাংবাদিক নেতা প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ও ডিবিসি নিউজ চ্যানেলের চেয়ারম্যান ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, ‘দেশে অনলাইন ও আইপি টিভির নামে যা হচ্ছে, বিশেষ করে ‘জয়যাত্রা’ ধরা পড়ার পর, সেটা সাংবাদিকতার মানদন্ডে ভালো কিছু হচ্ছে না। আইপি টিভির লাইসেন্স দেওয়ার আগে এর প্রয়োজনীয়তা, যৌক্তিকতা এবং নীতি নৈতিকতা কতটুকু তারা মেনে পরিচালনা করবে সেটা দেখার বিষয় আছে। নইলে দেখা যাবে, এরা মূল সাংবাদিকতা, ইলেকট্রনিক সাংবাদিকতার জন্য বড় ধরনের হুমকির সৃষ্টি করবে।