সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতা

মোঃ মাসউদুল আলম ডিসেম্বর ২৪, ২০২০, ০৪:১৬ পিএম
ফাইল ছবি

ঢাকাঃ ‘প্রতিদিন আমরা দুটো আশ্চর্য জিনিস দেখতে পাই,একটি সকালের সূর্য,অপরটি প্রতিদিনের সংবাদপত্র। যা সমস্ত পৃথিবীকে সামনে এনে হাজির করে।’লেখার শুরুতেই একজন ব্যাকরণবিদের কথাটি মনে পড়ল।যিনি ইংরেজি ব্যাকরণ বিষয়ের একটি বইয়ে বাংলা থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ অধ্যায়ে একটি অনুচ্ছেদে এ কথাটি লিখেছেন। এখানে সংবাদপত্রকে সকালের সূর্যের সাথে তুলনা করেছেন।সকালের সূর্য যেমন রাতের কালো আধারকে তাড়িয়ে উজ্জ্বল আলোকিত প্রভাত উপহার দেয়, তেমনি প্রতিদিনের সংবাদপত্রও অজানা পৃথিবীতে আমাদের করণীয় ,বর্জনীয়, গ্রহনীয়, পরিত্যাজ্য কর্মকান্ড সম্পর্কে পরিচয় করিয়ে দেয়। আর এ দিকটি বিবেচনায় রেখেই হয়তো সংবাদপত্রকে বলা হয় সমাজের দর্পন।

আমাদের দেশে সাংবাদিকতার বিকাশ ঘটে বৃটিশ উপনিবেশ শাসন আমলে। দেশে সংবাদপত্র প্রকাশের সময় থেকে শুরু করে আজ দু’শ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। এ সময়ে বদলেছে সবকিছু,যাকে আমুল পরিবর্তন বলা যায়। পরিবর্তন এসেছে বিশ্বাস , মূল্যবোধের ক্ষেত্রেও। আমাদের সাংবাদিকতা সম্পর্কে একটি কথা না বললেই নয়।বর্তমানে সাংবাদিকতার প্রবণতা বেশির ভাগই দলীয় সংকীর্ণতার দোষে দুষ্ট। এতে করে দেশ, জাতি ও রাষ্ট্র চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে এবং ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে মালিক পক্ষও। যেসব সংবাদ্ মাধ্যম দলীয় সংকীর্ণতার দোষে দুষ্ট, তাদের প্রচারসংখ্যা, যেসব সংবাদমাধ্যম কারো অনুগামী নয় বলে চিহ্নিত তাদের চেয়ে কম। তবে একটি কথা সত্য যে,কোনো সংবাদমাধ্যম দল নিরপেক্ষ বলে পরিচিত হলেও মত নিরপেক্ষ নয়, এরা আবার মত সমর্থন করতে গিয়ে কোনো কোনো সময় দলের তল্পীবাহক বনে যায়।এ জাতীয় প্রবণতা খুবই দুঃখজনক।আর এ দুঃখজনক ঘটনা থেকেই সৃষ্টি হয় বিভেদ , যা সাংবাদিক মহলে, মানহানি ঘটাচ্ছে।

আমাদের দেশে সংবাদপত্র প্রকাশের সময় থেকে আজ পর্যন্ত যে বিষয়টি বিশ্বের সর্বক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করে আছে তা হলো প্রযুক্তি।প্রযুক্তির এ উদ্ভব গোটা বিশ্বকে ওল্ট-পালট করে দিয়েছে। ভেঙে দিয়েছে পুরনো মূল্যবোধ এবং সেই স্থানে স্থান করে নিয়েছে এক নতুন সংবেদনশীলতা, এক নতুন বোধ। আমাদের সাংবাদিকতাও সে পরিবর্তনে ছোঁয়া থেকে বাইরে থাকেনি,পূর্বের চেয়ে বর্তমানে মুর্দ্রণ  বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুণে,তেমনি বেড়েছে পেশাগত দক্ষতা এবং সংবাদ পরিবেশনের মান। বর্তমানে উন্নত নিউজপ্রিন্টে সংবাদপত্র মুদ্রণ এবং রঙিন ছবি ছাপানো সংবাদপত্রের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। তবে উন্নত বিশ্বে এ উৎকর্ষতা যত যত বৃদ্ধি পেয়েছে, আমাদের দেশে তা ততো দ্রুত বৃদ্ধি পায়নি।আমাদের দেশের সংবাদপত্র মুদ্রণ,পরিবেশন, গ্রহণনীতি প্রভূতির মান বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে সংবাদপত্রের দাম বেড়ে গেছে ঢের বেশি। যা বর্তমানে অনেকেরই ক্রয়ক্ষ্মতার বাইরে। দাম বৃদ্ধির এ প্রবণতা সাময়িকীগুলোর চেয়ে দৈনিক পত্রিকাগুলোতেই বেশি। ঢাকার প্রায় দৈনিক পত্রিকাগুলোর মূল্য দশ টাকা অথচ ঢাকা থেকেই প্রকাশিত্ অন্য একটি উল্লেখযোগ্য সাপ্তাহিক  ঠিক একই দামে পাও্য়া যাচ্ছে।

আমাদের সাংবাদিকতার পরিধি আজ দীর্ঘ দিগন্তে বিস্তৃত। শুধু রাজধানী ঢাকা নগরী কিংবা উল্লেখযোগ্য শহরের গন্ডিতে সীমাবদ্ধ নয়। জেলা শহর থেকে, অনেক উপজেলা শহর থেকেও এখন সংবাদপত্র প্রকাশিত হচ্ছে। এটা বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার প্রসার বলা যায়। সংবাদপত্র প্রসারের সাথে সাথে যেন আমাদের জাতীয় চেতনা, ঐতিহ্য, মূল্যবোধ ও প্রগতিতে ভাটা না পড়ে বরং আরও বর্ধিত হবে এটাই আশা ছিল। কিন্তু অনেকাংশে তা প্রতিফলিত হচ্ছে না বলেই মনে হয়। আমাদের সাংবাদিকতা হয়ে উঠুক সেই প্রেরণায়, যেমন একটি সূর্য রাতের কালো আঁধার দূর করে সোনালী সকাল এনে দেয়,তেমনি সাংবাদিকতাও প্রবৃত্ত হবে সোনার বাংলা গড়ার পত্যয়ে।

আগামীনিউজ/নাসির