ঢাকাঃ একটা সময় বিদেশীদের পরামর্শে সরিষার তেল ছেড়ে সয়াবিন তেল ধরেছিলাম আমরা। কিন্তু সরিষার তেল ছাড়ার কথা কেন বলেছিল ? তা কি মনে আছে ? আজও ভাবছি ওদের তেল প্রোভাইড করতেই এই প্রচারণা ছিল।
এখন আমরা আবার সয়াবিন তেল ছেড়ে সরিষার তেল খাওয়া শুরু করেছি ভেজাল ও কেমিক্যাল রিফাইনারির দোষ দিয়ে।
আর কতকাল এমন "ধরা আর ছাড়া" নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হবে ?
একটা সময় সরিষার তেলে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ ছিল ৪২-৪৭% । সাথে ছিল ওমেগা ৯ ফ্যাটি অ্যাসিড। যা অনেকের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ইউরিক অ্যাসিডের আধিক্য হৃদরোগ, ক্যান্সার, জয়েন্টে ব্যাথাসহ অনেক রোগ সৃষ্টি করতে পারে। ভারতের অনেক গবেষণাপত্র থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়।
ইউরিক অ্যাসিডের আধিক্যের কারণে ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডাসহ অনেক দেশ এই তেল ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
ক্ষতিকারক দিকের পাশাপাশি অনেক উপকারিতাও আছে। সরিষার তেলকে বলা যেতে পারে প্রাকৃতিক লোশন। অনেকে সারাবছর সরিষার তেল গায়ে মাখেন। গায়ের তাপমাত্রা কমাতে সরিষার তেল বেশ কার্যকরী। সরিষার তেলে রয়েছে গ্লুকোসিনোলেট, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং ছত্রাক প্রতিরোধক উপাদান। যা রক্ষা করে ছোঁয়াচে জাতীয় রোগ ও স্কীন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে থাকে।
রুপচর্চাতে সরিষার তেলের জুড়ি নেই। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে, ত্বকের কালো ছোপ ছোপ দাগ দূরীকরণে সরিষার তেলের কার্যকরিতা অপরিসীম। তবে একটানা বেশি দিন ব্যবহারে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে। রমণীরা দীর্ঘ কালো চুল পেতে নিয়মিত ব্যবহার করেন খাঁটি সরিষার তেল।
এই ক্ষতি ও উপকারিতার কথা চিন্তা করে আমাদের কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান BARI ও BINA গবেষণা করে কিছু নতুন জাত উন্নয়ন করেছে। যাতে ইউরিক অ্যাসিড ও ফ্যাটি এ্যাসিডের মাত্রা অভাবনীয় ভাবে কমিয়ে আনতে পেরেছে। বারি ১৮ সরিষায় সর্বোচ্চ ১.৬% ইউরিক অ্যাসিডের ঘোষনা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। উৎপাদনও সর্বোচ্চ। তবে আশার বাণী হলো বাস্তবে স্থান ভেদে ০.৫-১.৫% ইউরিক অ্যাসিড পাওয়া যায়। ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণও খুব সামান্য।
(যশোরে উৎপাদিত বারি ১৮ সরিষায় ০.৫% ইউরিক অ্যাসিড পাওয়া গেছে। তথ্য - News 24)
আসছে সরিষার সিজন। কৃষক ও উদ্যোক্তা ভাইদের প্রতি অনুরোধ, আমদানি করা সরিষা বা পুরোনো জাত বাদ দিয়ে বারি উদ্ভাবিত সরিষার জাত চাষ করে ক্ষতিকর দিক থেকে ভোক্তা তথা আমাদের রক্ষা করার উদ্যোগ নিন। দেশের কৃষিকে সমৃদ্ধ করুন। কৃষি গবেষকদের কষ্টার্জিত জাত চাষ করে নিজে লাভবান হোন, ভোক্তাকে লাভবান করুন, গবেষকদের উদ্বুদ্ধ করুন যেন ভবিষ্যতে আরও ভাল কিছু উপহার দিতে পারে। চাষের জন্য অবশ্যই নিজস্ব উপজেলার কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ মতে চাষ করুন।
(দেশীয় জাতের সরিষার তেল খেয়ে আমাদের পূর্বপুরুষরা সুস্থ্য ছিলেন, তবে প্রশ্ন হলো তাদের লাইফস্টাইল আর আমাদের লাইফস্টাইল কি একই আছে ? আমরা উনাদের মত কায়িক পরিশ্রম করি না)
সূর্যমুখী তেল স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। দেশে অনেক জায়গায় চাষকৃত সূর্যমুখী থেকে তেল উৎপাদন করা হচ্ছে। (রিফাইনকৃত তেলের বিষয়ে বলছি না)
বাঁচবে মানুষ সুস্থ্য ভাবে,
আমরা ভাল থাকবো তবে।
তথ্য সহযোগিতায় - '৮৯ বন্ধু Md Moniruzzaman Sabuj ও কৃষি গবেষণাপত্র।