ঢাকাঃ করোনার প্রথম ঢেউয়ে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার কথা তেমন শোনা যায়নি। কিন্তু চলমান দ্বিতীয় ঢেউয়ে তরুণেরাও আক্রান্ত হচ্ছেন, এমনকি শিশুরাও বাদ যাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, তৃতীয় ঢেউ শিশু এবং কিশোরদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস অল চিলড্রেন’স হসপিটালের চিফ মেডিকেল অফিসার ডা. জোসেফ পারনো বলেন, ‘বিষয়টি উদ্বেগজনক, তবে কয়েকটি কারণে এটি অবাক হওয়ার মতো কোনো ঘটনা নয়।’
তার মতে, জনসংখ্যার একটি বিশাল অংশ কিশোর এবং তরুণ। তারা টিকা কর্মসূচির অংশ ছিল না। অথচ বর্তমানে হানা দিয়েছে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের মতো উচ্চ সংক্রামক করোনাভাইরাস। যা থেকে কোনো বয়সের মানুষই নিরাপদ নয়। শিশুদের কিছু হবে না, কোনো ঝুঁকি নেই- এমন ভাবা যাবে না।
ডা. পারনো জানান, শিশু করোনায় আক্রান্ত হলে জ্বর, সর্দি, কাশি, ডায়রিয়াসহ নানা উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তবে এগুলো অন্যান্য ভাইরাসের উপসর্গও হতে পারে। এ কারণে উপসর্গগুলো পর্যবেক্ষণ করতে হবে। জ্বর বেশিদিন থাকছে কিনা, কাশির সঙ্গে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে কিনা, খাওয়া দাওয়া ঠিকমতো করছে কিনা, অ্যাক্টিভিটি ঠিকঠাক আছে কিনা- সব খতিয়ে দেখতে হবে। শ্বাসকষ্ট হচ্ছে মনে হলে সতর্কতার প্রয়োজন আছে। এছাড়া আক্রান্ত শিশুদের ক্লান্তি, দুর্বলতা, শরীরে ব্যথা, বমি বমি ভাব, খাবারে স্বাদ বা গন্ধ না পাওয়া ইত্যাদি লক্ষণ থাকতে পারে।
করোনায় আক্রান্ত বেশিরভাগ শিশুদের হয়তো উপসর্গ থাকে না। সাধারণত পরিবারের কোনো সদস্য করোনায় আক্রান্ত হলে অন্য সদস্যরাও কোভিড টেস্ট করে থাকেন- এসময় শিশুদের উপসর্গবিহীন কেস শনাক্ত হয়। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, হালকা উপসর্গ থাকলে বাসায় শিশুদের আলাদাভাবে ৭ দিন দেখভাল করতে হবে। এক্ষেত্রে করোনা টেস্ট করানোর প্রয়োজন নেই। বেশির ভাগ আক্রান্ত শিশু এক-দুই সপ্তাহের মধ্যে ভালো হয়ে যায়।
তবে যেসব শিশু আগে থেকেই নানা রকম অসুস্থতায় ভুগছে, যেমন মোটা বা স্থূলকায়, যাদের ডায়াবেটিস, অ্যাজমা, হাঁপানি, হৃৎপিণ্ডের জন্মগত ত্রুটি, লিভারের সমস্যা, কিডনির সমস্যা, শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থায় ঘাটতিসহ অন্যান্য সমস্যা আছে, তাদের করোনা হলে মারাত্মক রূপ নিতে পারে।
করোনা আক্রান্ত শিশুর ঘরোয়া চিকিৎসা হিসেবে ডা. পারনো জানান, করোনাভাইরাসে সংক্রমিত শিশুর উপসর্গ থাকুক বা না থাকুক, বেশি করে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করুন। বাইরের প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়াবেন না। যেমন বিস্কুট, কেক ও চিপস। পর্যাপ্ত পানি পান করান। মৃদু সংক্রমণের ক্ষেত্রে উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা করতে হবে।
* জ্বর এলে প্যারাসিটামল সেবন করাতে হবে। ৪-৬ ঘণ্টা পরপর রিপিট করতে পারেন।
* গলা ব্যথা ও কাশি থাকলে গলা প্রশান্তি দিতে পারে এমন কিছু করতে হবে, যেমন লবণপানির গড়গড়া। এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে দুই/তিন চা-চামচ লবণ মিশিয়ে গড়গড়া করাতে পারেন।
* ডায়রিয়া হলে স্যালাইন পানি পান করান। ডাবের পানিও পান করাতে পারেন।
* চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করাবেন না।
প্রতিদিন ২-৩ বার শ্বাসপ্রশ্বাসের হার দেখুন। অক্সিজেন স্যাচুরেশন ও প্রস্রাবের পরিমাণও দেখতে হবে। এসব কিছুর অস্বাভাবিকতা চিকিৎসককে জানাতে হবে। শিশুর কাজকর্মে দুর্বলতা প্রকাশ পেলে, হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গেলে, শরীরের কোথাও নীল হলে এবং বুক ভেতরে ঢুকে গেলে একটুও অবহেলা করা যাবে না। ঠোঁট নীল হওয়া ও বুক ভেতরে দেবে যাওয়ার মতো মারাত্মক উপসর্গ দেখামাত্র শিশুকে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে জরুরি চিকিৎসা দিতে হবে।