খাবার শেষে মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়ার বাঙালিদের চিরাচরিত অভ্যাস। এখন তো মিষ্টি মানেই চিনিযুক্ত খাবার। চিনির উপকারিতা থাকলেও এর কিছু ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। চিনি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, ফলে আমাদের শরীরে নানাবিধ রোগের জন্ম নেয়।
চিকিৎসকদের মতে, এই করোনার আবহে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে এবং কোভিডের সংক্রমণ এড়াতে নিজস্ব রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক রাখা অত্যন্ত জরুরি। তাই, প্রত্যেকের ডায়েটে সুষম খাবারের কথা বারবার উল্লেখ করছেন তারা। সেক্ষেত্রে নিজেদের সুস্থ রাখতে আজই চিনিকে দূরে সরিয়ে দেয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার অতিরিক্ত খেলে বাড়বে ওজন এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও ধীরে ধীরে কমতে থাকবে, বাড়বে কো-মর্বিডিটির আশঙ্কা।
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের রিপোর্ট অনুসারে, সারা বিশ্বে প্রতিদিন চিনি খাওয়ার প্রবণতা চোখে পড়ার মতো বেড়েছে। বিশ্বের প্রায় সিংহভাগ মানুষ প্রতিদিন প্রায় ২২ চামচ চিনি খেয়ে থাকেন, যা বিপৎসীমার থেকে অনেকটাই উপরে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা অনুযায়ী, একজন ব্যক্তির দিনে মাত্র পাঁচ গ্রামের বেশি চিনি খাওয়া কখনোই উচিত নয়। চিনি যত কম খাবেন, ততই সুস্থ ও স্বাভাবিক থাকবেন। কিন্তু আমরা সকলেই এই নিয়ম অমান্য করে সকালের চা থেকে শুরু করে ডিনার, সবেতেই মিষ্টিকে উপভোগ করে থাকি। সামান্য অসতর্কতার কারণেই হয়তো আমরা অজান্তে নিজেদের বিপদ নিজেরাই ডেকে আনছি।
জেনে নিন অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়ার ক্ষতিকারক দিকগুলো
১) চিনি খাওয়ার মাত্রা যত বাড়ছে, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
২) মাত্রাতিরিক্ত চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার খেলে প্যানক্রিয়েটিক ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। পাশাপাশি প্রস্টেট ক্যানসার, ক্ষুদ্রান্তের ক্যানসার, গলা, ফুসফুস, রেক্টাম ও স্তন ক্যানসারের আশঙ্কা বেড়ে যায়।
৩) মাত্রাতিরিক্ত চিনি খেলে শরীরের ওজন খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়। ওজন বৃদ্ধি পেলেই নানাবিধ রোগের জন্ম নেয়।
৪) চিনি খেলে কিডনির নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। কারণ, চিনি কিডনির কার্যক্ষমতাকে ধীরে ধীরে নষ্ট করে দেয়।
৫) পাবলিক হেল্থ জার্নালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, মাত্রাতিরিক্ত চিনি খেলে মানসিক অবসাদ বা ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। কারণ, রক্তে চিনির পরিমাণ বৃদ্ধি হলে মস্তিষ্কের ডোপামিন হরমোনের ক্ষরণ ধীরে ধীরে কমতে থাকে, যা মানসিক উদ্বেগকে বাড়িয়ে তোলে।
৬) অনেকেই ভাবেন মিষ্টি জিনিস দাঁতের জন্য ক্ষতিকারক, বিশেষ করে চকলেট। কিন্তু না, চকলেট বা মিষ্টি জাতীয় খাদ্য তৈরিতে যে চিনির প্রয়োজন হয়, সেই চিনি দাঁতের জন্য খুবই ক্ষতিকর।
৭) গবেষণায় দেখা গেছে, দেহের পাশাপাশি চিনির ক্ষতিকর প্রভাব মস্তিষ্কের উপরও পড়ে। যার ফলে বাচ্চাদের শেখার ক্ষমতা লোপ পায়।
৮) অতিরিক্ত চিনি লিভারে মেদ জমাতে শুরু করে এবং রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রাও বৃদ্ধি পায়। যার ফলে ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পায় এবং লিভারের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
আগামীনিউজ/জেএফএস