ঢাকা : আসুন জেনে নেই কোয়ারেন্টাইন কি? হাসপাতাল-কোয়ারেন্টাইন ও হোম-কোয়ারেন্টাইন কি? কোয়ারেন্টাইনে কেন থাকবেন ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে।
কোয়ারেন্টাইন বলতে কি বোঝায়?
কোয়ারেন্টাইন এর শাব্দিক অর্থ সঙ্গরোধ। সাধারণভাবে ভাইরাসজনিত রোগের ক্ষেত্রে কোয়ারেন্টাইন বলতে এমন পরিস্থিতিকে বোঝায় যেখানে ভাইরাসের সম্ভাব্য বাহক বা ভাইরাসে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তি হতে তার আশপাশের অন্যান্য সুস্থ ব্যক্তির মধ্যে ভাইরাসের সংক্রমণ রোধের লক্ষ্যে ঐ ব্যক্তিকে একটি নির্দিষ্ট কক্ষে পৃথকভাবে বিশেষ পরিচর্যায় রাখা হয়। কোয়ারেন্টাইনে থাকার পুরো সময় জুড়ে শুধুমাত্র চিকিৎসক ও সেবাকর্মী ব্যতীত খুব বিশেষ কোনো প্রয়োজন ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তির সংস্পর্শে যাওয়া উচিত নয়।
হাসপাতাল-কোয়ারেন্টাইন : হাসপাতালে কাউকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হলে তাকে হাসপাতাল-কোয়ারেন্টাইন বলে। সাধারণত আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে যাদের অবস্থা কিছুটা জটিল বা গুরুতর এবং যাদের বিশেষ চিকিৎসা প্রয়োজন, এটি তাদের জন্য।
হোম-কোয়ারেন্টাইন : কোনো বাড়ি বা গৃহে কাউকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হলে তাকে হোম-কোয়ারেন্টাইন বলে। এটি সাধারণত সম্ভাব্য বাহকের ক্ষেত্রে করা হয়ে থাকে যাতে করে তার দেহে যদি কোনো ভাইরাস থেকে থাকে তা তার থেকে তার আশপাশের মানুষের মাঝে সংক্রমিত হতে না পারে।
কোয়ারেন্টাইনে কেন থাকতে হয়?
সাধারণত কোনো সুস্থ ব্যক্তির দেহে কোভিড-১৯ ভাইরাস প্রবেশ করা এবং উক্ত ভাইরাস দ্বারা সেই ব্যক্তি আক্রান্ত হবার পর তার মধ্যে আক্রান্ত হবার লক্ষণ দেখা দেয়ার মধ্যে ১ থেকে ১৪ দিন সময় লাগতে পারে। তাই কারো শরীরে কোভিড-১৯ ভাইরাস প্রবেশ করার পর থেকে শুরু করে আক্রান্ত হবার লক্ষণ দেখা দেয়ার মধ্যে যেকোনো সময়ে তার শরীর হতে অন্য কোনো সুস্থ ব্যক্তির শরীরে এই ভাইরাস সংক্রমিত হবার সম্ভাবনা রয়ে যায়। তাই ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে ভাইরাসের সম্ভাব্য বাহক বা আক্রান্ত ব্যক্তিদেরকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় বা নিজ গৃহে কোয়ারেন্টাইনে থাকা উচিত।
কোয়ারেন্টাইনে কাদের থাকতে হয় এবং কখন থাকতে হয়?
(ক) কেউ যদি পর্যাপ্ত নিরাপত্তা অবলম্বন না করে ভাইরাসে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির সংস্পর্শে আসেন সেক্ষেত্রে সংস্পর্শে আসার দিন থেকে পরবর্তী ১৪ দিন পর্যন্ত তার কোয়ারেন্টাইনে থাকা উচিত।
(খ) যে সকল দেশ বা অঞ্চলে ইতিমধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়েছে সে সকল দেশ বা অঞ্চল হতে কেউ যদি অন্য কোনো অসংক্রমিত দেশ বা অঞ্চলে গিয়ে থাকেন তাহলে ঐ অসংক্রমিত দেশ বা অঞ্চলে প্রবেশের দিন থেকে পরবর্তী ১৪ দিন পর্যন্ত তার কোয়ারেন্টাইনে থাকা উচিত। কারণ, থার্মাল স্ক্যানার কেবলমাত্র ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে জ্বরে ভোগা ব্যক্তিদের সনাক্ত করতে পারে, ভাইরাসের বাহকদেরকে সনাক্ত করতে পারে না ।
কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তির (সম্ভাব্য বাহক বা আক্রান্ত) করণীয়
১। কোয়ারেন্টাইন এর সময় একটি নির্দিষ্ট কক্ষের ভিতরে অবস্থান করা।
২। অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া পরিচর্যকারী ব্যতীত অন্য কারো সাথে, এমন কি পরিবারের সদস্যদের সাথেও সাক্ষাৎ না করা।
৩। অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কক্ষ থেকে বের না হওয়া। অতি জরুরি প্রয়োজনে বের হতে হলে সব সময় মাস্ক ব্যবহার করা।
৪। স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি বেশি বেশি করে বিশুদ্ধ পানি ও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা।
৫। অসুস্থ বোধ করলে বা জ্বর ও কাশির সাথে শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া।
অন্যদের করণীয়
১। অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তির নিকটে না যাওয়া। কোনো অতিথি তার সাথে দেখা না করা।
২। অতি জরুরি প্রয়োজনে কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তির নিকটে যেতে হলে সে সময় সঠিক উপায়ে মাস্ক এবং গ্লাভস ব্যবহার করা।
৩। পরিবারের কোনো সুস্থ সদস্য যার দীর্ঘ মেয়াদে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যান্সার, এজমা, ইত্যাদি নেই, এমন কেউ পরিচর্যাকারী হিসেবে নিয়োজিত হওয়া এবং নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তির পরিচর্যা করা।
৪। কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিকে প্রয়োজনীয় মানসিক সাপোর্ট দেয়া এবং পছন্দ অনুযায়ী পর্যাপ্ত বিনোদনের ব্যবস্থা করা।
৫। কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তির ব্যবহারের জিনিসপত্র (গ্লাস, প্লেট, তোয়ালে, বিছানা চাদর ইত্যাদি) অন্য কেউ ব্যবহার না করা।
কোভিড-১৯ সম্পর্কে যেকোনো জিজ্ঞাসা বা কারও মধ্যে কোভিড-১৯ এর লক্ষণ/উপসর্গ দেখা দিলে আইইডিসিআর এর হটলাইন নম্বরে যোগাযোগ করুন : ০১৯২৭-৭১১৭৮৪, ০১৯২৭-৭১১৭৮৫, ০১৯৩৭-০০০০১১, ০১৯৩৭-১১০০১১।
আগামীনিউজ/সুমন/নুসরাত