এক সময় শীতকালীন টমেটোর বেশ আকর্ষণ ছিল। এখন সারাবছরই টমেটো পাওয়া যায় বলে সেই আকর্ষণ অনেকটাই কমে গেছে। কাঁচা টমেটোতে উপকার কিন্তু কম নয়, বেশিই পাবেন।
বয়োলজিক্যাল কেমিস্ট্রি সাময়িকীর মতে, কাঁচা ও সবুজ টমেটোতে টমাটিডিন নামের উপাদানের পরিমাণ পাকা টমেটোর চেয়ে বেশি। টমাটিডিন মাংসপেশির সামর্থ্য বাড়ায়, হাড়কে সবল ও সুস্থ রাখে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। কাঁচা টমেটোতে ভিটামিন সি এবং ই-এর পরিমাণও বেশি। এ ছাড়া পাকা ও কাঁচা দুই ধরনের টমেটোতেই লাইকোপিন নামের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে প্রচুর পরিমাণে।
বয়স্ক ব্যক্তি, বিশেষ করে বয়স্ক নারীদের নিয়মিত টমেটো গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছে জার্নাল অব নিউট্রিশন। কেননা, এক কাপ (২৪০ গ্রাম) কাঁচা টমেটোতে আছে প্রায় ১৫ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন কে এবং প্রায় ৪৫ মিলিগ্রাম খনিজ ফসফেট। এই দুটোই বাতের ব্যথা কমাতে ও হাড় ক্ষয় রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
শুধু রান্নায় নয় কাঁচা টমেটো সালাদ কিংবা চাটনি করেও খেতে পারেন। কাঁচা অবস্থায় নিয়মিত ২-৩টা করে টমেটো খাওয়া যায় তাহলে দারুণ সব উপকার পাবেন। এবার সে সম্পর্কে জানা যাক…
ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে:
টমেটোয় আছে লাইকোপেন নামে একটি উপাদান। যা ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এ ক্ষেত্রে ১০-১২টা টমেটো নিয়ে ভেতরটা পরিষ্কার করে সারা মুখে কিছুক্ষণ লাগিয়ে রাখুন। ১০ মিনিট পরে ভালো করে মুখটা ধুয়ে নিন। সপ্তাহে কয়েকবার এমনভাবে ত্বকের পরিচর্যা করলে বলিরেখা কমতে শুরু করবে, সেই সঙ্গে ত্বকের ঔজ্জ্বল্যও বৃদ্ধি পাবে।
ক্যান্সার রোধ করে:
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে টমেটোতে থাকা লাইকোপেন প্রস্টেট, কলোরেকটাল এবং স্টমাক ক্যান্সাররোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। লাইকোপেন হল একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা কোষের বিভাজন ঠিকমতো হতে সাহায্য করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ক্যান্সার সেলের জন্ম নেওয়ার আশঙ্কা কমে। আর যদি একবার ক্যান্সার কোষ জন্ম নিয়েও নেয়, তাহলে তার বৃদ্ধি দ্রুত গতিতে না হয়, সেদিকে টমেটো খেয়াল রাখে। ফলে এই মারণ রোগ শরীরকে ক্ষয় করার সুযোগ পায় না।
হাড় শক্ত করে:
ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন-কে সমৃদ্ধি হওয়ার কারণে হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতিতে কাঁচা টমেটোর কোনও বিকল্প নেই। তাই তো বুড়ো বয়সে অস্টিওপোরোসিসের মতো রোগের হাত থেকে বাঁচতে এখন থেকেই কাঁচা টমেটো খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন উপকার পাবেন।
ধূমপানের ক্ষতি থেকে বাঁচায়:
কাঁচা টমেটোয় রয়েছে কিউমেরিক এবং ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড, যা কার্সিনোজের প্রভাব থেকে শরীরকে রক্ষা করে। ফলে ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস পায়। তাই যারা একান্তই ধূমপান ছাড়তে পারছেন না, তারা দয়া করে দিনে ২-৩ টা কাঁচা টমেটো খাওয়া শুরু করুন। দেখবেন উপকার পাবেন।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ঘাটতি পূরণ করে:
কাঁচা টমেটো যেহেতু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, তাই শরীরের ক্ষতিকর টক্সিক দূর করতে সাহায্য করে টমেটা। শরীরকে সুস্থ রাখতে নিয়মিত কাঁচা টমেটো খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।
হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়ায়:
কাঁচা টমেটোয় থাকা ভিটামিন বি এবং পটাশিয়াম শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। সেই সঙ্গে রক্তচাপকে স্বাভাবিক রাখতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে। ফলে হার্টের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস পায়। প্রসঙ্গত, যাদের পরিবারে হাই কোলেস্টেরল এবং ব্লাড প্রেসার রোগের ইতিহাস রয়েছে তারা আজ থেকেই কাঁচা টমেটো খাওয়া শুরু করুন।
চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে:
চুলের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধিতে ভিটামিন-এ-এর কোনো বিকল্প হয় না বললেই চলে। আর এই উপাদানটি প্রচুর মাত্রায় রয়েছে কাঁচা টমেটোতে। তাই দীর্ঘদিন যদি চুলকে সুন্দর রাখতে চান, তাহলে কাঁচা টমেটো রাখুন খাবারে। প্রসঙ্গত, দৃষ্টিশক্তির উন্নতিতেও ভিটামিন-এ বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
কিডনির স্টোনের আশঙ্কা কমায়:
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে বীজ সমেত কাঁচা টমেটো খেলে কিডনিতে স্টোন হওয়ার আশঙ্কা একেবারে শূন্যে এসে দাঁড়ায়।
তবে কাঁচা টমেটো পরিমাণে বেশি খেলে হজমের সমস্যা হতে পারে, কারণ আলফা টমাটিডিন বেশি পরিমাণে পেটে সয়না। তাই কাঁচা টমেটো পরিমিত খাওয়ার অভ্যাস করুন।
আগামীনিউজ/হাসি