ঢাকাঃ উচ্চ আদালতের নির্দেশনার পরও ১৩৩ কোটি টাকার বেশি মূল্যের সম্পত্তি মাত্র ১৫ কোটি টাকায় নিলামে তোলার ঘটনায় কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি) এবং ব্র্যাক ব্যাংকের এমডির বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
নিলাম প্রক্রিয়ার মামলায় দুপক্ষের আপিলে শুনানি শেষে ঋণের সমুদয় অর্থ ব্যাংককে ছয় মাসের মধ্যে পরিশোধ করার জন্য ঋণগ্রহীতাকে নির্দেশনা দিয়েছেন আপিল আদালত। একই সঙ্গে যিনি নিলাম প্রক্রিয়ার ক্রেতা তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যে, যদি ঋণগ্রহীতা ছয় মাসের মধ্যে ঋণ পরিশোধ করেন তবে পরবর্তী দুই সপ্তাহের মধ্যে সেই সম্পত্তি ঋণগ্রহীতাকে ফেরত দিতে হবে। এ সময়ের জন্য হাইকোর্টে বিচারাধীন উভয় মামলা স্থগিত থাকবে।
২০২২ সালের ২ আগস্ট ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলামের মালিকানাধীন মেসার্স বিশ্বাস ট্রেডার্স, ভিআইপি রাইস মিল ও ভিআইপি ফ্লাওয়ার মিল নিলাম তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন আদালত। একই সঙ্গে এক মাসের মধ্যে ২০ কোটি টাকা ব্র্যাক ব্যাংককে দিতে বলা হয়। এছাড়া আরও ৬ কোটি টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়।
কিন্তু আদালতের এ আদেশ লঙ্ঘন করে একই বছরের ৫ আগস্ট ভোরে পুলিশের সহযোগিতায় ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলামের ১৩৩ কোটি টাকার সম্পত্তি নিলামে বিক্রি করে কুষ্টিয়ার বিশিষ্ট চাল ব্যবসায়ী আব্দুল রশিদের মালিকানাধীন রশিদ এন্টারপ্রাইজের নামে। এ ঘটনায় নিলামের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করা হয়।
পরে গত বছরের ১১ আগস্ট নির্দেশনার পরও ১৩৩ কোটি টাকার বেশি মূল্যের সম্পত্তি মাত্র ১৫ কোটি টাকায় নিলামে তোলায় কুষ্টিয়ার ডিসি-এসপিসহ পাঁচজনকে তলব করেন হাইকোর্ট।
এর আগে গত বছরের ২৪ মার্চ ওই সম্পত্তি (প্রতিষ্ঠান) নিলামে তুলতে দুটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। ওই নিলামের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন মেসার্স বিশ্বাস ট্রেডার্স, ভিআইপি রাইস মিলস এবং ভিআইপি অটো রাইস মিলস লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী শফিকুল ইসলাম। গত বছরের ২ আগস্ট নিলাম স্থগিত করে আদেশ দেন হাইকোর্ট। এরপরও গত ৫ আগস্ট ব্র্যাক ব্যাংক নিলাম ক্রয়কারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা নিয়ে রাতে জমি দখল করে সাইনবোর্ড টানিয়ে দেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৭ সালে কুষ্টিয়ার পোড়াদহের আইলচারা বাজারে অবস্থিত মো. শফিকুল ইসলামের ধান, চাল, আটা ও ভুষি উৎপাদনের তিনটি প্রতিষ্ঠান বন্ধক (মর্টগেজ) রেখে ব্র্যাংক থেকে ৩৬ কোটি টাকা, পরের বছর তা বাড়িয়ে ৪২ কোটি ঋণ গ্রহণ করেন। তারপর থেকে তিনি নিয়মিত ঋণের কিস্তি পরিশোধ করে আসছিলেন। তবে করোনা মহামারির কারণে প্রতিষ্ঠান তিনটি দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকায় একটা সময় ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে ব্যর্থ হন শফিকুল ইসলাম।
এ কারণে ব্র্যাক ব্যাংক কর্তৃপক্ষ শফিকুল ইসলামকে খেলাপি দেখিয়ে তার বন্ধকী সম্পত্তি নিলামে তুলতে গত বছরের ২৪ মার্চ দুটি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয় এবং একই বছরের ১৮ এপ্রিল নিলাম আয়োজন করে ১৩৩ কোটি টাকা মূল্যের সম্পত্তি মাত্র ১৫ কোটি টাকায় বিক্রি করা হয়।
জানা যায়, কুষ্টিয়ার আইলচারায় অবস্থিত মেসার্স বিশ্বাস ট্রেডার্স অ্যান্ড ভিআইপি রাইস মিল ব্র্যাক ব্যাংক পোড়াদাহ শাখার কাছে ঋণ চাইলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জমির ভ্যালুয়েশন করে ৯২ কোটি টাকা। ব্র্যাক ব্যাংক পোড়াদাহ শাখা সব কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে ওই ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে ৪৩ কোটি টাকা ঋণ দেয়। ভিআইপি রাইস মিল সময়মতো ঋণের কিস্তি দিতে ব্যর্থ হলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ অতি গোপনে অখ্যাত কাগজে নিলাম বিজ্ঞপ্তি দেয়। এরপর নিলাম বিজ্ঞপ্তি স্থগিত চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট করা হয়।
বুইউ