ঢাকাঃ পাঁচ বছর আগে চট্টগ্রামে স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যাকাণ্ডের কয়েক মাস পর পুলিশ সুপারের চাকরি থেকে অব্যহতি নেন বাবুল আক্তার। তদন্তে অগ্রগতি না হওয়ায় ক্রমেই হতাশ হয়ে পড়ছিলেন মিতুর বাবা–মা। পাঁচ বছরের মাথায় সেই বাবুল নিজেই গ্রেপ্তার হলেন স্ত্রী হত্যার মামলায়।
পিবিআইয়ের উপমহাপরিদর্শক বনজ কুমার মজুমদার বলেন, মিতু হত্যাকাণ্ডে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততার প্রমাণ তাঁরা পেয়েছেন। এর ভিত্তিতেই পুরোনো মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে তাঁকে আসামি করে নতুন মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত হয়।
কিন্তু প্রশ্ন হলো হত্যার ঘটনায় বাবুলের সম্পৃক্ততা পিবিআই নিশ্চিত হল কী করে?
একটি সুত্র জানায়, বাবুলের আর্থিক লেনদেনের তথ্য যাচাই–বাছাই করতে গিয়ে হত্যাকাণ্ডে তাঁর জড়িত থাকার বিষয়টি সামনে আসে। মূলত ২০১৬ সালে মিতু হত্যার আগে ও পরে বাবুল আক্তারের আর্থিক লেনদেনের খোঁজখবর করা হয়। দেখা যায়, হত্যাকাণ্ডের তিন দিনের মাথায় বাবুল আক্তার তিন লাখ টাকা খরচ করেছেন। এই পর্বেই তাঁরা গাজী আল মামুন ও সাইফুল হককে খুঁজে পান।
তাঁরা জানতে পারেন, বাবুল আক্তারের ব্যবসায়িক অংশীদার সাইফুল হকের কাছ থেকে লাভের তিন লাখ টাকা চেয়ে নিয়েছিলেন বাবুল। ওই টাকা তিনি নড়াইলের গাজী আল মামুনের কাছে পাঠান। মামুন সেই টাকা এই মামলার অন্যতম আসামি কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা ও ওয়াসিমসহ অন্যদের মধ্যে ভাগ করে দেন। পাঁচ বছর আগের ওই লেনদেনের তথ্য পিবিআই বিকাশ থেকে সংগ্রহ করে বলে জানা গেছে।
তদন্ত কর্মকর্তারা সোমবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বাবুল আক্তারকে বিভিন্ন ছোটখাটো প্রশ্ন করেন। তবে, আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। একেকবার একেক কথা বলেন বাবুল। বাবুলের ভেবেছিলো, জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ তাঁকে ছেড়ে দেবে।
কিন্তু, বিকেলের পর তিনি বুঝতে পারেন, তিনি আটকা পড়েছেন। তদন্ত কর্মকর্তারা ধীরে ধীরে বাবুলের কাছ থেকে মুঠোফোনগুলো নিয়ে নিতে শুরু করেন। এ সময় তিনি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। জিজ্ঞাসাবাদে থাকা একজন বলেন, ‘বাবুল আক্তার নিজেও পুলিশ অফিসার ছিলেন। তাঁর ডিভাইসগুলো নিয়ে নেওয়ার পরই তিনি ধরা পড়ে গেছেন বলে বুঝতে পারেন।’ এসময় কাকুতি-মিনতী করতে থাকেন বাবুল আক্তার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাইফুল হকের ছাপাখানার ব্যবসায় বাবুল আক্তার বিনিয়োগ করেছিলেন। বুধবার গাজী আল মামুন ও সাইফুল হক দুজনকেই ছেড়ে দিয়েছে পিবিআই। এই মুহূর্তে এই মামলায় বাবুলসহ আট আসামির দুইজন কারাগারে আছেন। বুধবার রাতেই মামলার আরেক আসামি সাইদুল ইসলাম শিকদার ওরফে সাকুকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। সাকুর ভাই কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুসা এই হত্যাকাণ্ডের অন্যতম সন্দেহভাজন। পুলিশের ভাষায় তিনিসহ আরেক আসামি পলাতক আছেন। বাকি দুই আসামি আগের মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর জামিনে আছেন।