সকল সম্প্রদায় পার্বত্য অঞ্চলে শান্তিতে বসবাস করুক

নিউটন চাকমা, রাঙামাটি ডিসেম্বর ২, ২০২১, ১২:৪৭ এএম
গৌতম কুমার চাকমা

আজ ২রা ডিসেম্বর ২০২১ ইং। পার্বত্য শান্তি চুক্তির ২ যুগ (২৪ বৎসর) পুর্তির দিন। এই দিনে বিগত ২রা ডিসেম্বর ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (তৎকালীন গেরিলা শান্তি বাহিনী)-র সাথে তৎকালীন ও বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ সরকারের সঙ্গে ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তি চুক্তি নামে পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষর সম্পাদিত হয়। এই চুক্তির ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত পাহাড়ি-বাঙ্গালী জনগোষ্ঠীদের মধ্যে আনন্দ উল্লাস ও খুশীর জোয়ার বয়েছিল। অন্তত দীর্ঘ ২যুগেরও বেশী ধরে সশস্ত্র রক্তক্ষয়ীর সংঘর্ষ, অপহরণ, গুম, চাঁদাবাজির ঘটনা থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের পশ্চাৎপদ এলাকায় বসবাসকারীরা স্বস্তিতে বসবাস করতে পারবেন। এই আশাতেই পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছিল। এতে দেশের ও বহ্নিবিশ্বের এই পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরকে ঐতিহাসিক চুক্তি হিসেবে উল্লেখ করেছিল অনেক সৌহার্দ্য বন্ধু রাষ্ট্রগুলো। পাশাপাশি জাতিসংঘও এ চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছিল। সুতরাং পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দীর্ঘ ২যুগের বেশি সময় ধরে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ চলছিল সেই সংঘর্ষ বন্ধের জন্য সশস্ত্র পথ পরিহার করে তৎকালীন গেরিলা শান্তি বাহিনী জনসংহতি সমিতির সদস্যরা অনেক বুকভরা আশা ও স্বপ্ন নিয়ে সশস্ত্র সংগ্রামের পথকে স্থায়ীভাবে পরিহার পূর্বক স্বাভাবিক বেঁচে থাকার প্রত্যয় এবং জীবনযাপনের লক্ষ্যে নিজ বসত ভিটে-মাটিতে ফিরে আসেন পার্বত্য চট্টগ্রামে একমাত্র আঞ্চলিক রাজনৈতিক পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি(পিসিজেএসএস) দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ সদস্যরা।  

পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জুম্ম জনগোষ্ঠীদের আত্ননিয়ন্ত্রন অধিকার ও স্বাধিকার আন্দোলনকারী পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি(পিসিজেএসএস)-র দীর্ঘ ২ দশক রক্তক্ষয়ীর সংঘাতের ফলে তৎকালীন ও বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ সরকারের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস)-র মধ্যে অনাড়ম্বর পরিবেশে বিগত ২রা ডিসেম্বর ১৯৯৭ সালে রাষ্ট্রীয় মযার্দায় ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তি চুক্তি নামে চুক্তি স্বাক্ষর সম্পাদিত হয়। আজ পার্বত্য শান্তি চুক্তির সুদীর্ঘ দুই যুগ (২৪ বছর) পুর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় বাংলা মাল্টিমিডিয়া অনলাইন ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল আগামী নিউজের  রাঙামাটি জেলা প্রতিনিধি নিউটন চাকমার সঙ্গে...

পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের অন্যতম সদস্য ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির বর্ষীয়ান নেতা গৌতম কুমার চাকমার এক বিশেষ সাক্ষাতকার নিম্নে উপস্থাপন করা হলো- 

আগামী নিউজ: আজ পার্বত্য শান্তি চুক্তির ২ যুগ পূর্তি উপলক্ষে আপনাকে বাংলাদেশের প্রথম সারি অনলাইন ভিত্তিক আগামী নিউজের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও 
অভিনন্দন। 

গৌতম কুমার চাকমা: আপনাকে ও অনলাইন ভিত্তিক আগামী নিউজকেও শুভেচ্ছা ও বিপ্লবী অভিনন্দন।

আগামী নিউজ:    আজ ২রা ডিসেম্বর ২০২১ ইং। পার্বত্য শান্তি চুক্তির পাহাড়ি জুম্ম জনগোষ্ঠীদের ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ দিন। এ উপলক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ বিশ্বের অবস্থানরত পাহাড়ি আদিবাসীরা বর্ষপূর্তি উদযাপন করছেন। এ লক্ষ্যে আপনাদের কি অনুভূতি হচ্ছে?

গৌতম কুমার চাকমা: (১)    আমার অনুভূতি হলো এটি গৌরবের। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি, ১৯৯৭ পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের জুম্ম জনগণের তথা পাহাড়ী ও বাঙালী সকলের অধিকার সনদ। এ সনদ সংবিধানের আওতায় জুম্ম জনগণের অধিকার সংরক্ষণ ও প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখার ও জাতীয় অস্তিত্ব সুরক্ষার স্বীকৃতি স্থাপন করেছে। এ সনদে মিশে রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের ও বাইরের সকল জুম্মদের আত্মবিসর্জন, ত্যাগ ও সংগ্রামের সফলতার এবং অন্যান্য সকল সহানুভূতিশীল মানুষের, জাতির, সরকারের ও রাষ্ট্রের ঐকান্তিক আন্তরিক সমর্থন ও সহযোগিতার ফল।

(২) এ চুক্তি পাকিস্তান আমল হতে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে সৃষ্ট দীর্ঘকালের জুম্ম ও বাঙালীদের মধ্যেকার জাতিগত সংঘাত রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে অবসানের পথ খুলে দিয়েছে। এ পথ স্তব্ধ করার কারো সাধ্য নেই। আমার দৃঢ় বিশ্বাস কালের গতিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে এর অবসান হবেই।

আগামী নিউজ :     আজ শান্তি চুক্তির দীর্ঘ দুই যুগ অতিক্রান্ত হতে চলেছে। এই দুই যুগে পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি চুক্তির কি কি ধারা, উপধারা বাস্তবায়িত হয়েছে এবং কোন ধারা, উপধারা গুলো অবাস্তবায়িত রয়েছে সেগুলো উল্লেখ করবেন কি?

গৌতম কুমার চাকমা: চুক্তির বাস্তবায়িত ও অবাস্তবায়িত অনুচ্ছেদ ও উপ-অনুচ্ছেদ।

(১)    চুক্তির ৪ টি খন্ডে বাহ্যত মোট ৭২ টি অনুচ্ছেদ রয়েছে। কিন্তু কার্যত মোট অনুচ্ছেদ হলো ১৫২ টি। বিবরণ নিম্নরূপ:
 
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিতে ৪ টি খন্ড রয়েছে। প্রথম খন্ড ‘ক” তে ৪টি, দ্বিতীয় খন্ড ‘খ’ তে  ৩৫ টি, তৃতীয় খন্ড ‘গ’ তে ১৪ টি ও চতুর্থ খন্ড ‘ঘ’ তে ১৯ টি অনুচ্ছেদ অর্থাৎ মোট ৭২ টি অনুচ্ছেদ রয়েছে। তবে, চুক্তি অনুযায়ী আরো ৪৪ টি অনুচ্ছেদ পার্বত্য জেলা পরিষদ আইনসমূহে বহাল রাখা হয়েছে ও ৩৯ টি অনুচ্ছেদ পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইনে সন্নিবেশিত হয়েছে। অর্থাৎ প্রকৃত পক্ষে চুক্তির মোট অনুচ্ছেদ সংখ্যা হলো ১৫২ টি। সেগুলো হলো নিম্নরুপ:

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণাংগ বাস্তবায়ন বলতে চুক্তিতে লিপিবদ্ধকৃত ৭২ টি অনুচ্ছেদসহ চুক্তি অনুযায়ী পার্বত্য জেলা পরিষদ আইনসমূহে বহাল রাখা অপর ৪১ টি অনুচ্ছেদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইনে সন্নিবেশিত আরো ৩৯ টি অনুচ্ছেদসহ মোট ১৫২ টি অনুচ্ছেদ যথাযথভাবে বাস্তবায়নকেই বুঝায়।

(২)    পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির অনুচ্ছেদ ও উপ-অনুচ্ছেদ বাস্তবায়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া। অনুচ্ছেদওয়ারী বাস্তবায়ন অবস্থা তুলে ধরার পরিবর্তে চুক্তির মূল বিষয় বা বিধানাবলী তুলে ধরার মাধ্যমেই চুক্তি বাস্তবায়নের চিত্র সঠিকভাবে পরিস্ফুট হতে পারে। যেমন:
(ক)     অস্ত্র সংরক্ষণঃ
পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে জাতিগত সংঘাতময় পরিস্থিতি হতে শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতিতে উত্তরণকল্পে চুক্তির ঘ খন্ডের অনুচ্ছেদ ১২, ১৩, ১৪ ও ১৫ তে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি কর্তৃক অস্ত্র ও গোলাবারুদ জমা দেবার ও সমিতির সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে প্রত্যাবর্তন করার এবং অনুচ্ছেদ ১৬ ও ১৭ তে সরকার কর্তৃক ক্ষমা ঘোষণা করার, ৬টি স্থায়ী সেনানিবাস ব্যতীত অন্যান্য অস্থাায়ী সেনাক্যাম্প, আনসার ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ক্যাম্প প্রত্যাহার করার এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের অনুরোধে সেনাবাহিনীকে বেসামরিক প্রশাসনের অধীনে নিয়োগ করার বিধান বা শর্ত বর্ণিত হয়েছে। তদনুযায়ী:

১.    সর্বাগ্রে সমিতির সদস্যদের চলাচলের সুবিধার্থে কতিপয় অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প গুটিয়ে নেয় ও আইন-শৃংখলা বাহিনীর টহল বন্ধ করে। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সদস্যদের প্রতি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে। 
২.    পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি নির্ধারিত সময়-সীমার মধ্যে অস্ত্র ও গোলা-বারুদ জমা দেয় এবং সমিতির সদস্যগণ স্বাভাবিক জীবনে প্রত্যাবর্তন করে। সরকার পর্যায়ক্রমে সর্বশেষ পর্যন্ত চুক্তির পূর্বেকার ৫০০ এর অধিক অস্থায়ী ক্যাম্পের মধ্যে ২৪০ টি ক্যাম্প প্রত্যাহার করে। তবে, সেনাবাহিনীকে বেসামরিক প্রশাসনের পরিবর্তে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে আইন-শৃংখলা ও উন্নয়ন ক্ষেত্রে সহায়তার জন্য ২০০১ খ্রিস্টাব্দ হতে অপারেশন উত্তরণ নামক সেনা আদেশ দ্বারা নিয়োজিত রাখে।  
 
 

(খ)     ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তিঃ
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি অন্যতম বিধান বা শর্ত  (ঘ খন্ড ঃ অনুচ্ছেদ ৪, ৫ ও ৬) হলো Ñ ১৯৮০ দশকে পুনর্বাসিত বাঙালী সেটেলারদেরকে সরকারী কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বন্দোবস্ত প্রদান কিংবা বেদখল করার কারণে যে সকল ভূমি বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে সে সকল ভূমি একটি কমিশন গঠন করে নিষ্পত্তি করা হবে।  তদানুযায়ী
১.    সরকার ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন গঠন করে। 
কমিশন বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য সংশ্লিষ্ট আইনের জন্য প্রতীক্ষা করতে থাকে।
২.    ২০০১ খ্রিস্টাব্দে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন, ২০০১ 
প্রণয়ন করে। কিন্তু, চুক্তির বিধানবলীর সাথে কতিপয় ধারা অসামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ায় তা অনুসরণে কমিশন বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য কাজ করতে পারেনি।
৩.    ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরাধ নিষ্পত্তি কমিশন (সংশোধন) আইন, ২০১৬ প্রণয়ন করে।
৪.    ২০১৭ খ্রিস্টাব্দ হতে উক্ত আইনের অধীনে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি 
কমিশন বিধিমালা প্রণয়ন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ২০১৯ খ্রিস্টাব্দে ২৮/২/২০১৯, ১০/৯৪/২০১৯ ও ২৩/০৬/২০১৯ খ্রিস্টাব্দ তারিখে সরকার কর্তৃক ‘প্রস্তাবিত পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন বিধিমালা, ২০১৯’ এর খসড়ার উপর সভা হয় ও অধিকাংশ বিধির উপর আঞ্চলিক পরিষদের সাথে সরকার পক্ষের ঐক্যমত্য হয়।  তবে কমিশন কর্তৃক নিবিঘ্নে শুনানী করার, রায় বা সিদ্ধান্ত ঘোষনা করার ও ডিক্রি জারী করার বিষয়ে কতিপয় বিধি সন্নিবেশিত করার জন্য আঞ্চলিক পরিষদ কর্তৃক যে সকল সুপারিশ পেশ করা হয়েছে তা বিবেচনাক্রমে বিধিমালাটি প্রণীত হতে পারে। উক্ত বিধিমালা প্রণীত হলে কমিশন কাজ করতে পারবে।
(গ)     ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণঃ
১.     পার্বত্য জেলা পর্যায়ে ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল পর্যায়ে গণপ্রতমিধিত্বশীল 
প্রতিষ্ঠান স্থাপনের বিধান (চুক্তির খ খন্ড ও গ খন্ড)।-
*   চুক্তির খ খন্ডে ও গ খন্ডে বর্ণিত বিধানাবলী অনুযায়ী ১৯৯৮ খ্রিস্টাব্দে যথাক্রমে  
তিনটি পার্বত্য জেলা পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইন প্রণীত হয় 
এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থা বা পরিষদ স্থাপন করা হয়।
২.    তিনটি পার্বত্য জেলা পরিষদের নিকট ৩৩ টি কার্যাবলী পরিচালনার ক্ষমতা হস্তান্তর করার বিধান (খ খন্ডের অনুচ্ছেদ ৩৩ ও ৩৪)।
*   পার্বত্য জেলা পর্যায়ে যে সকল কার্যাবলী সরকারের বিভিন্ন কর্মকর্তাগণ কার্যাবলী পরিচালনা করতেন তা হতে ৩৩ টি কার্যাবলী বা বিষয় পার্বত্য জেলা পরিষদ আইনের ধারা ২২ মোতবেক প্রণীত প্রথম তফসিলে উল্লেখিত হয় অর্থাৎ হস্তান্তরিত হয়।
*  ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রজ্ঞাপন দ্বারা প্রথম তফসিলের এন্ট্রি ১২/শিল্প ও বাণিজ্য কার্যাবলী এর উপ-এন্ট্রি (ছ) মোতাবেক ‘হাট-বাজার স্থাপন ও নিয়ন্ত্রণ’ কর্ম এর ‘বাজার ফান্ড’ দপ্তর ও যাবতীয় জনবল, আর্থিক বিষয় ও অন্যান্য বিষয়াদি সম্পূর্ণ অর্পণ করা হয়। 
*  ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দ হতে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা বিভাগ সংশ্লিষ্ট পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদের বা পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পরে পার্বত্য জেলা পরিষদের সাথে চুক্তিনামা বা নির্দেশমালা স্বাক্ষরের মাধ্যমে রাংগামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের নিকট ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের নিকট ১১ টি কার্যাবলী বা বিষয়ের ২৪ টি করে দপ্তর ও প্রতিষ্ঠান অর্পণ করে এবং বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের নিকট ২২ টি দপ্তর ও প্রতিষ্ঠান অর্পণ করে। তবে, এ সব চুক্তিনামায় সংশ্লিষ্ট কার্যাবলীর কেবল আংশিক কর্ম, দপ্তর ও প্রতিষ্ঠান অর্পণ করা হয়।
*  উক্ত অর্পিত দপ্তর ও প্রতিষ্ঠানের তালিকা সংযুক্ত করা হলো।
*   চুক্তিনামায় বা নির্দেশনামায় বর্ণিত হয় যে, পরিষদ কর্তৃক সংশ্লিষ্ট প্রবিধানমালা প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত সরকারের বিধি-বিধান মোতাবেক সংশ্লিষ্ট কার্যাবলী বা বিষয় পরিচালিত হবে। সংশ্লিষ্ট প্রবিধানমালা এখনো প্রণীত হতে পারেনি। সুতরাং চুক্তিনামার বা নির্দেশনা নামার শর্তাদি অনুসারে আর্থিক ও অন্যান্য বিষয়াদি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগের পরিচালনাধীনে থেকে যায়। অর্থাৎ কার্যত কোনো কার্যাবলীর সকল দপ্তর ও প্রতিষ্ঠান অর্পিত হয় নি।
*  তিনটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সরকার ও পার্বত্য জেলা পরিষদের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তিনামার ও জারীকৃত প্রজ্ঞাপন সংখ্যা যথাক্রমে ৩০ ও ২৮ বিধায় অর্পিত বিষয় বা বিভাগের সংখ্যা ৩০ ও ২৮ টি বলে উল্লেখ করে থাকে। যা পার্বত্য মন্ত্রণালয় তুলে ধরে আসছে। 

[এ বিবরণ পার্বত্য জেলা পরিষদের ওয়েব সাইটে রয়েছে।]


তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের নিকট বিভিন্ন কার্যাবলীর হস্তান্তরিত দপ্তর ও প্রতিষ্ঠান

বি.দ্রঃ-  ১১ টি কার্যাবলীর আওতাভূক্ত ২৪টি করে দপ্তর ও প্রতিষ্ঠান রাংগামাটি ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের নিকট এবং ২২টি দপ্তর ও প্রতিষ্ঠান বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের নিকট হস্তান্তর হয়েছে। এ ছাড়া তিনটি পার্বত্য জেলা পরিষদের নিকট ৪টি করে দপ্তর বা প্রতিষ্ঠান বিহীন কার্যাবলী হস্তান্তর হয়েছে এবং ২ টি কার্যাবলীর কোন দপ্তর বা প্রতিষ্ঠান হস্তান্তর হয়নি। 

৩.  সরকার কর্তৃক কার্যাবলী পরিচালনার ক্ষেত্রে পরামর্শ প্রদানকরণ সম্পর্কিত বিধান: 

সংবিধানের আওতায় সরকারের ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণকল্পে চুক্তির খ খন্ডের বিধানাবলীতে (অনুচ্ছেদ ২১) পার্বত্য জেলা পরিষদের কার্যাবলীর উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ ও তত্বাবধান ক্ষমতার অবলোপন করে কেবল আইনের ব্যত্যয় ক্ষেত্রে পরামর্শ প্রদান করার বা অনুশাসন করার বিধান বর্ণিত হয়। তদনুযায়ী,
*  সংশ্লিষ্ট পার্বত্য জেলা পরিষদ আইনের ৫০ ধারার উক্ত বিধান প্রতিস্থাপিত হয় এবং সরকারের নিয়ন্ত্রণ ও তত্বাবধান সংক্রান্ত বিধানাবলী (ধারা ৫১ ও ৫২) বিলুপ্ত করা হয়। তবে, সরকারের মন্ত্রণালয় বা বিভাগ কর্তৃক তা এখনো যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয় নি।
*  পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বিধান (খ খন্ড এর অনুচ্ছেদ ১৮) মোতাবেক বাজেট প্রণয়ন ও অনুমোদন করার বিধান বর্ণিত হয়েছে। 
*  পার্বত্য মন্ত্রণালয় উক্ত বিধান অনুসরণ না করে অন্যান্য মন্ত্রণালূের ন্যায় সংশ্লিষ্ট পার্বত্য জেলা পরিষদের উন্নয়ন বাজেট যথেচ্ছা সংকোচন বা বাতিল করার ক্ষমতা প্রয়োগ করে থাকে।
৪.    পার্বত্য জেলা পরিষদ কর্তৃক উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন এবং জাতীয় পর্যায়ে গৃহীত প্রকল্প পার্বত্য জেলা পরিষদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন।
*   পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির খ খন্ডের ১৯ অনুচ্ছেদে বর্ণিত হয় যে, সংশ্লিষ্ট পার্বত্য জেলা পরিষদ সরকার হতে প্রাপ্য অর্থে হস্তান্তরিত বিষয় সমূহের উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে পারবে, এবং জাতীয় পর্যায়ে গৃহীত সকল উন্নয়ন কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট পার্বত্য জেলা পরিষদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/ বিভাগ/ প্রতিষ্ঠান বাস্তবায়ন করবে।
*   উক্ত বিধানাবলী সংশ্লিষ্ট পার্বত্য জেলা পরিষদ আইনের ধারা ৪২ এ সন্নিবেশিত হয়েছে। 
*   পার্বত্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট পরিষদের উন্নয়ন প্রকল্প কাটছাঁট করে থাকে।
*  জাতীয় পর্যায়ে হস্তান্তরিত বিষয়ে কোন উন্নয়ন প্রকল্প গৃহীত হলে তা কোন মন্ত্রণালয় বা বিভাগ সংশ্লিষ্ট পার্বত্য জেলা পরিষদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করার বিধান অনুসরণ করে না।
৫.    পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের নিকট হস্তান্তরিত তত্বাবধান ও সমন্বয় সাধন বা পরিচালনার ক্ষমতা সম্পর্কিত বিধান।

*   পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির গ খন্ডের অনুচ্ছেদ ৯ ও ১০ মোতাবেক পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইনের ২২ ধারায় ইহার কার্যাবলী সন্নিবেশিত হয়েছে। উক্ত কার্যাবলী হলোঃ
     (ক) পার্বত্য জেলা পরিষদের অধীনে পরিচালিত সকল উন্নয়ন কর্মকান্ডসহ উহাদের
আওতাধীন এবং উহাদের উপর অর্পিত বিষয়াদির সার্বিক তত্ত্বাবধান ও সমন্বয় সাধন:

তবে শর্ত থাকে যে, এই দফা অনুসারে পরিষদ কর্তৃক তত্ত্বাবধান বা সমন্বয় সাধনের ক্ষেত্রে, কোন বিষয়ে কোন পার্বত্য জেলা পরিষদের সহিত আঞ্চলিক পরিষদের বা একাধিক পার্বত্য জেলা পরিষদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিলে, পরিষদের সিদ্ধান্ত, এই আইনের বিধান সাপেক্ষে, চূড়ান্ত হইবে
(খ) পৌরসভাসহ স্থানীয় পরিষদসমূহ তত্ত্বাবধান ও সমন্বয় সাধন ; 
(গ) ) Chittagong Hill Tracts Development Board Ordinance, 1976 (LXXVII of 1976)  দ্বারা স্থাপিত পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড এর কার্যাবলীর সার্বিক তত্ত্বাবধান :
(ঘ) পার্বত্য জেলার সাধারণ প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা ও উন্নয়নের তত্ত¡াবধান ও সমন্বয় সাধন ;
(ঙ) উপজাতীয় রীতি-নীতি, প্রথা ইত্যাদি এবং সামাজিক বিচার সমন্বয় ও তত্ত¡াবধান;
(চ) জাতীয় শিল্প নীতির সহিত সংগতি রাখিয়া পার্বত্য জেলাসমূহে ভারী শিল্প স্থাপনের লাইসেন্স প্রদান;
(ছ) দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা এবং এনজিও কার্যাবলীর সমন্বয় সাধন। 
*    উল্লেখিত কার্যাবলীর মধ্যে (ঙ) দফার কার্যাবলী এবং (ছ) দফার এনজিও কার্যাবলী ব্যতীত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সহযোগিতা না করায় অন্য কোন কার্যাবলী পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ কর্তৃক তত্বাবধান ও সমন্বয় সাধন করা সম্ভব হয়ে উঠে না।
৬.    পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইনের ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ আইনের অধীনে প্রবিধান প্রণয়ন ও প্রকাশ সম্পর্কিত বিধান।
*  পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির গ খন্ডের অনুচ্ছেদ ৬ মোতাবেক প্রবিধান প্রণয়ন ও প্রকাশ করার বিধান পার্বত্য জেলা পরিষদ আইনের অনুরূপ হবে মর্মে বর্ণিত হয়।
*  উক্ত বিধানের আলোকে পার্বত্র চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইনের ধারা ৪৬ এর উপ-ধারা (১) ও (৩) প্রবিধানমালা প্রণয়ন করার ও জনগণের অবগতির জন্য প্রকাম করার বিধান সন্নিবেশিত হয়।
*  উক্ত বিধানাবলী অনুসরণে আঞ্চলিক পরিষদ কতিপয় প্রবিধানমালা প্রণয়ন ও প্রজ্ঞাপন জারীপূর্বক প্রকাশ করে পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের নিকট প্রেরণ করে। তন্মধ্যে ১৯৯৯ সনে প্রণীত  ১ নং প্রবিধানমালা (পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের কর্মচারী প্রবিধানমালা, ১৯৯৯) সম্পর্কে প্রদত্ত পরামর্শে উল্লেখ করা হয় যে, প্রবিধানমালাটি সরকারের নিকট গ্রহণযোগ্য হয়েছে। এসআরও জারী করার প্রয়োজন নেই।
*  [উক্ত ০২/১১/২০০০ তারিখের পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের পত্র সংযুক্ত করা হলো।]
*  পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির খ খন্ডের অনুচ্ছেদ ৩০(ক) মোতাবেক তিনটি পার্বত্য জেলা পরিষদকে ইহাদের কার্যাবলী পরিচালনাকল্পে সরকারের পূর্বনুমোদন ব্যতিরেকে ইহাদের আইনের অধীনে প্রবিধানমালা প্রণয়ন করার ও জনগণের অবগতির জন্য প্রবিধানমালা প্রকাশ করার ক্ষমতা অর্পিত হয়।
*   উক্ত বিধানাবলী সংশ্লিষ্ট পার্বত্য জেলা পরিষদ আইনের ৬৯ ধারার উপ-ধারা (১) ও (২) সন্নিবেশিত হয়।
* তদনুযায়ী তিনটি পার্বত্য জেলা পরিষদ বিভিন্ন প্রবিধানমালা প্রণয়ন করে ও প্রজ্ঞাপন জারীপূর্বক প্রকাশ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নিকট প্রেরণ করে। 
*  পার্বত্য মন্ত্রণালয় কতিপয় প্রবিধানমালার উপর তিনটি পার্বত্য জেলা পরিষদকে পরামর্শ প্রদান করে।
৭.    পার্বত্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক লেজিলেটিভ ও সংসদ বিভাগের পরিপত্র অনুসরণে ভেটিং ও এসআরও নম্বর গ্রহণ করার পরার্শ প্রদান।
*  ২৪-০৭-২০১১ তারিখে আইন, বিধি, প্রবিধান, নীতিমালা ইত্যাদি প্রণয়ন ক্ষেত্রে সরকারের জঁষবং ড়ভ ইঁংরহবংং, ১৯৯৬   এর বিধানাবলী অনুসরণে সংশ্লিষ্ট দলিল পাঠাবার ও লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের ভেটিং  এসআরও নম্বর নেবার জন্য পরিপত্র জারী করে।
*  উক্ত পরিপত্রের অনুসরণে পার্বত্য মন্ত্রণালয় ২০১৪ হতে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদকে ও ২০১৭ হতে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদকে সংশ্লিষ্ট আইনের অধীনে প্রবিধান প্রণয়ন ও প্রকাশ ক্ষেত্রে সরকারের Rules of Business, 1996, ১৯৯৬  এর বিধানাবলী অনুসরণে সংশ্লিষ্ট দলিল পাঠাবার ও লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের ভেটিং  এসআরও নম্বর নেবার জন্য পরামর্শ দিয়ে চলেছে। 
* বিষয়টি সম্পর্কে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নিকট তুলে ধরা হলো
**    প্রথমবারে ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ তারিখে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ পার্বত্য মন্ত্রণালয়ে লিখিত পত্রে অভিমত জ্ঞাপন করে যে, আঞ্চলিক পরিষদ ও পার্বত্য জেলা পরিষদ কর্তৃক প্রবিধান প্রণয়ন ও প্রকাশ ক্ষেত্রে সরকারের Rules of Business, 1996   এর আওতাবহির্ভূত রাখা সঠিক হবে বলে প্রতীয়মান হয় না।
**  দ্বিতীয়বারে আঞ্চলিক পরিষদের পরবর্তী পত্রের প্রেক্ষিতে মন্ত্রিপরিষতদ বিভাগ পার্বত্য মন্ত্রণালয়কে সংশ্লিষ্ট আইনের বিধানাবলী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য নির্দেশনা দেয়।
**   তৃতীয়বাবে আঞ্চলিক পরিষদের পত্রের প্রেক্ষিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ পার্বত্য মন্ত্রণালয়কে জানায় যে, বিষয়টি পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের পরিধিভূক্ত বিধায় সংশ্লিষ্ট আইন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আবারো নির্দেশনা প্রদান করে।
**  এ যাবত এ বিষয়ে পার্বত্য মন্ত্রণালয় পজিটিভ ব্যবস্থা গ্রহণ করে নি।
*    ১৬/০৬/২০১৯ খ্রি তারিখে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে বিষয়টি সম্পর্কেব্যবস্থা গৃহীত হবে। করোনা ভাইরাস-১৯ এর কারণে বিগত ২০২০ ও ২০২১ খ্রিস্টাব্দে এ কমিটির কোন সভা হতে পারেনি। তবে, আগামী ০৮ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে পরবর্তী বৈঠক আহŸান করা হয়েছে।
*    ১২/১০/২০২১ তারিখে আঞ্চলিক পরিষদ আইনের বিধানাবলী ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ আএনর বিধানাবলী অনুসরণে সংশ্লিষ্ট পরিষদ কর্তৃক প্রণীত ও পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের নিকট যে সকল প্রবিধানমালা প্রেরিত হয়েছে সে সকল প্রবিধামালার উপর পরামর্ম প্রদান করার জন্য পুনরায় পত্র প্রেরণ করেছে।
*   ০৩/১১/২০১১ তারিখে আঞ্চলিক পরিষদ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নিকট বিষয়টি সম্পর্কে উদ্ভূত অসুবিধা দূরীকরণার্থে সরকারের জঁষবং ড়ভ ইঁংরহবংং, ১৯৯৬  এর প্রযোজ্যতার ক্ষেত্র  নির্ধারণ সম্পর্কে পুনরায় পত্র প্রেরণ করেছে।

আগামী নিউজ:     বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ সরকার মতে, পার্বত্য শান্তি চুক্তির    অধিকাংশ ধারা, উপধারা বাস্তবায়ন করেছে। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (আপনারা) অভিযোগ, চুক্তির মূল ধারা, উপধারা গুলো এখনো অবাস্তবায়িত রয়েছে। সরকার ও জনসংহতি সমিতির (আপনাদের) মধ্যে পার্বত্য চুক্তির বাস্তবায়নের মতৈক্য কি ও কেন?

গৌতম কুমার চাকমা:     (ক) পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণাংগ বাস্তবায়ন করা হবে। 
(খ) ০১/০১/২০১৮ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের মাননীয় চেয়ারম্যান শ্রী জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা’র মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত বৈঠকমূলে ১৮ জানুয়ারী ২০১৮ তারিখে অতি ত্বড়িৎ গতিতে  পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটি পুনর্গঠনকল্পে জনাব আবুল হাসানাত আবদুল্লাহকে আহŸায়ক পদে নিয়োগ প্রদান করা হয় এবং ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৮ তারিখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সংশ্লিষ্ট পরিচালকের কার্যালয় হতে সেনা সদর দপ্তরে অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়।

আগামী নিউজ:    শান্তি চুক্তি মোতাবেক পার্বত্য চট্টগ্রাম ‘‘ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন ২০০১’’ এ পাসের আইন সংশোধনের ফলে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন গঠিত হয়। কিন্তু ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন যখনি মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে যায়/গেলে পাহাড়ি জনগোষ্ঠী (উপজাতি) ও অস্থায়ী বাঙ্গালীরা (সেটেলার বাঙ্গালী) কেন ফুসে উঠে। সুতরাং স্থায়ীভাবে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি করার প্রতিকারের কোন উপায় আছে কি?

গৌতম কুমার চাকমা: পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের পূর্বে যে ধরণের বিরোধিতা ছিল অভাবনীয়ভাবে তীব্র। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের অধিকার বঞ্চিত জুম্মদের বাস্তবতা, রাষ্ট্রের, এশীয় অঞ্চলের ও বিশ্বের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার বাস্তবতা অনুধাবন করে রাষ্ট্রনায়কোচিত অসীম সাহসে ও দূরদর্শিতায় পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি করেছেন। সরকারের ক্ষমতা এখন অনেক সুপ্রতিষ্ঠিত। সুতরাং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চাইলে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কার্যক্রম আইন অনুসরণে চলতে থাকবে এবং সংশ্লিষ্ট উদ্ভূত বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন।

আগামী নিউজ:  পার্বত্য চুক্তি অনুসারে পার্বত্য চট্টগ্রামে ৪টি ব্রিগেড সেনাক্যাম্প থাকার উল্লেখ রয়েছে, বাকী অস্থায়ী সেনাক্যাম্প প্রত্যাহারের বিধি-বিধান আছে। সত্যিকার অর্থে সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে কয়টি সেনাক্যাম্প প্রত্যাহার করেছে এবং আর কয়টি প্রত্যাহার করা হয়নি। বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামের সেনাশাসন কি ধরনের বলবৎ রয়েছে? 

গৌতম কুমার চাকমা:  (ক) পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের সচিব কর্তৃক ২৩/১০/২০১৯ তারিখে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির সভায় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে ২৪০ টি অস্থায়ী সেনা, আনসার ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ক্যাম্প প্রত্যাহার করা হয়েছে বলেছেন।
(খ) ২০০১ খ্রিস্টাব্দে চুক্তির পূর্বেকার অপারেশন দাবানল আদেশ এর পরিবর্তে অপারেশন উত্তরণ আদেশ জারী করা হয়। উহাতে সেনা কর্তৃপক্ষকে আইন-শৃংখলা ও উন্নযন বিষয়ে সহায়তা প্রদান করার জন্য দায়িত্ব অর্পণ করা হয়।   

আগামী নিউজ: আমরা যতটুকু জেনেছি, পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রধান সমস্যা ভুমি বিরোধ নিষ্পত্তি ও স্থায়ী বাসিন্দাদের নিয়ে ভোটার তালিকা প্রনয়ণ। এ দুটো সমস্যার সমাধান হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী শান্তি ফিরে আসবে কি?

গৌতম কুমার চাকমা:  (ক) উক্ত দুটো সমস্যা ছাড়াও চুক্তিতে বর্ণিত অন্যান্য সমস্যাদিও সমাধান হতে হবে। 
(খ) উক্ত দুটো সমস্যা সমাধান হলে অন্যান্য সমস্যগুলো পর্যায়ক্রমে সমাধানের প্রক্রিয়া সহজতর হতে পারে। 

আগামী নিউজ: বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস)-তে ৪টি দলে বিভক্ত। যেকারনে নিজেদের অর্ন্তকোন্দলে পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘাত, অপহরণ, মুক্তিপণ, চাঁদাবাজি, গোলাগুলির ঘটনা প্রায়ই ঘটছে, কেন? অদূর ভবিষ্যতে কি ৪টি দলের মধ্যে সমঝোতা কিংবা সেই পুরনো দিনেই ফিরে যাওয়ার পদক্ষেপ বা পরিকল্পনা আছে কিনা ?

গৌতম কুমার চাকমা:  (ক) পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতির বিভাজন বা বিভিন্ন উপদলে সংঘাত বা দ্বন্ধ পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বিধানাবলী যথাসময়ে বাস্তবায়িত না হবার কারণেই অধৈর্য্য ও অস্থিরতাবশতঃ দেখা দেয়।
(খ) মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটি কর্র্তৃক চুক্তির বিধানবলী যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে শান্তি ফিরে আসবে, এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। 
(গ) যেখানে শান্তি ফিরে আসতে পারে সেখানে অরাজকতা সৃষ্টি করার কোন মনাভাব কোন জুম্ম অধিবাসীর রয়েছে বলে আমার মনে হয় না।

আগামী নিউজ: পার্বত্য জেলার সরকারদলীয় সাংসদদের সভা, সমাবেশ ও সংসদে দাঁড়িয়ে অভিযোগ, পার্বত্য চট্টগ্রামে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহারের ঝন-ঝনানি বৃদ্ধি পেয়েছে। অবৈধ অস্ত্রের কারনে প্রায়ই গোলাগুলি, অপহরণ ও চাঁদাবাজি ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা বাহিনীকে চিরুনী অভিযানের বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়। আসলে কি পার্বত্য চট্টগ্রামে অবৈধ অস্ত্রের ঝন-ঝনানি, গোলাবারুদ, পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের কার্যক্রম চলমান আছে কিনা?

গৌতম কুমার চাকমা: (ক) বিষয়টি অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও স্বার্থগত।
(খ) পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বিধানাবলী অনুসরণে আইন-শৃংখলা ব্যবস্থা যথাযথভাবে গড়ে উঠলে এ ধরণের পরিস্থিতির অবসান হবে এবং উক্ত ধরণের বক্তব্যও নিষ্প্রয়োজন হয়ে পড়বে।

আগামী নিউজ: পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস)-র সভাপতি ও আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান (প্রতিমন্ত্রী মর্যাদা) শ্রী জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) বিভিন্ন সভা-সমাবেশের অভিযোগ করেন যে, সরকার পার্বত্য শান্তি চুক্তি মোতাবেক চুক্তির ধারা, উপধারা বাস্তবায়ন কিংবা চুক্তি নিয়ে গড়িমসি, চুক্তি বাস্তবায়নে ধীরগতি ও অন্য দিকে প্রভাবিত করার কর্মপরিকল্পনা নিলে তাহলে জনসংহতি সমিতি সেই আগের অবস্থানে (সশস্ত্র গ্রুপে) ফিরে যেতে বাধ্য। অতএব, বর্তমানে আপনাদের পার্বত্য শান্তি চুক্তি কোন দিকে অবস্থান, নাকি সেই পুরনো সশস্ত্র গ্রুপে ফিরে যাওয়ার কর্মপরিকল্পনা রয়েছে কিনা? 

গৌতম কুমার চাকমা: (ক) পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির আলোকে আইন-শৃংখলার ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান শ্রী জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২১ তারিখে মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে অনুষ্ঠিত বৈঠকে মতামত জ্ঞাপন করেছেন। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির সভায় যথারীতি অংশগ্রহণ করে চলেছেন। চুক্তির বিধানাবলী বাস্তবায়নের অনুকলেই পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমিতির অবস্থান।

(খ) কোনো দিন চলে গেলে আর ফিরে আসে না। তাই, কেউ চাইলেও পুরণো দিনে ফিরে যেতে পারে না।


    
আগামী নিউজ:  দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাঙামাটি ২৯৯নং আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী (পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি সমর্থিত- হাতি মার্কা) হিসেবে সংসদ সদস্য থাকাকালীন পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস) কতটুকু ভূমিকা রেখেছিলেন?

গৌতম কুমার চাকমা:   (ক) জাতীয় সংসদের মূল কাজ হলো আইন প্রণয়ন এবং রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। সংসদ সদস্য হিসাবে শ্রী উষাতন তালুকদার দশম জাতীয় সংসদ অধিবেশনে যথাসম্ভব উপস্থিত ছিলেন। তিনি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বক্তব্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।

(খ) তিনি সংসদের বাইরে মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাথে মত বিনিময় করেছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিস্থিতি ও চুক্তির বিধানাবলী বাস্তবায়ন বিষয়ে। 

আগামী নিউজ:   পার্বত্য চট্টগ্রামের বসবাসরত সকল পাহাড়ি-বাঙ্গালী সম্প্রদায়ের পার্বত্য শান্তি চুক্তির ফলে শান্তিতে বসবাস করুক এই প্রত্যাশা রেখেই আগামী নিউজকে মূল্যবান সময় দেয়ায় আপনাকে আগামী নিউজের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ।

গৌতম কুমার চাকমা:    পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস) চাই সম্প্রীতি। সুতরাং সকল সম্প্রদায় পার্বত্য অঞ্চলে শান্তিতে বসবাস করুক সেটাই সবারই কাম্য। আগামী নিউজের সকল কলাকৌশলীদের প্রতি আশা রাখবো পার্বত্য অঞ্চলের বসবাসরত পাহাড়ি জনগোষ্ঠীদের অবহেলিত জাতিসত্ত্বাদের অধিকারের কথা দেশ-বিদেশের প্রচার ও পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীদের সুখ-দুঃখের কথা তুলে ধরা ও প্রচেষ্টার জন্য আগামী নিউজকে অনেক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আপনিও ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ।