ঢাকা : ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২১ নং ওয়ার্ডের নব নির্বাচিত কাউন্সিলর মো. আসাদুজ্জামান আসাদ। এই ওয়ার্ডে ভোটার ১৯ হাজার হলেও মানুষ বসবাস করে দুই লাখের বেশি। নিজের ওয়ার্ডকে ঢেলে সাজাতে নিয়েছেন নানা পরিকল্পনা। আগামীনিউজ ডটকমের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় জানিয়েছেন সেসব পরিকল্পনার কথা। পাঠকদের জন্য সেই আলাপচারিতার অংশ বিশেষ তুলে ধরছেন আরিফুর রহমান।
আগামীনিউজ : ২১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হিসেবে শপথ গ্রহণ করায় আগামীনিউজ ডটকমের পক্ষ থেকে আপনাকে অভিনন্দন।
আসাদ : ধন্যবাদ আগামীনিউজকে।
আগামীনিউজ : ২১ নং ওয়ার্ডকে আপনি কীভাবে সাজাতে চান?
আসাদ : আমি নির্বাচনের আগে একটি ইশতেহার দিয়েছিলাম, যার নাম হচ্ছে ‘স্বপ্নযাত্রা’। সেখানে অনেকগুলো বিষয়ের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। আমি অ্যাপের মাধ্যমে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ করতে চাই।
আগামীনিউজ : অ্যাপটি কীভাবে কাজ করবে?
আসাদ : এখন তো প্রায় সবার হাতেই স্মার্টফোন রয়েছে। যদি আমার ওয়ার্ডের ভেতরে কোথাও ময়লা পড়ে থাকতে দেখেন, ছবি তুলে অ্যাপে আপলোড করে দিলেই আমরা চেষ্টা করবো ৩০ থেকে ৪৫ মিনিটের মধ্যে তা পরিস্কার করে ফেলতে। এছাড়া প্রতিটা বাসায় আমি ময়লার জন্য দুটি করে ব্যাগ দিবো। একটি পছনশীল বর্জ্য ফেলা হবে অন্যটিতে অপচনশীল ময়লা ফেলবে এলাকাবাসী।
আগামীনিউজ : মশা নিয়ন্ত্রণে আপনি কী কাজ করবেন?
আসাদ : ডেঙ্গুর মৌসুম প্রায় শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমাদের মেয়র দায়িত্ব নেবেন মে মাসের ১৬ তারিখ। এরপর থেকেই আমরা অফিসিয়ালি কাজ শুরু করতে পারবো। এর আগে আমরা কাজ শুরু করতে পারছি না। তারপরেও আমি যেহেতু জনপ্রতিনিধি হওয়ার আগে থেকেই বিভিন্ন স্যোশাল ওয়ার্ক করেছি, সে হিসেবে আমি একটি প্ল্যান করেছি। তা হলো, সিটি কর্পোরেশনে জনবলের পাশাপশি আমি চারটি গ্রুপে ১১জন করে মোট ৪৪ জন স্বেচ্ছাসেবী নিয়ে কাজ শুরু করবো। তাদের নিয়ে আমার ওয়ার্ড এলাকায় চারটি ব্লকে ভাগ হয়ে বিকাল চারটা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ডেঙ্গু প্রতিরোধে কাজ করবো।
আগামীনিউজ : ওয়ার্ডের উন্নয়নে তরুণদের কীভাবে কাজে লাগাবেন?
আসাদ : আমার গ্রুপের সবাই তরুণ ও শিক্ষার্থী। তাদের দিয়ে আমি যেখানে মশা বংশ বিস্তার করে সেই জায়গাগুলো পরিস্কার করতে পারবো। যেখানে ময়লা হয়ে থাকে সেখানে কীটনাশক ও ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে দিবো। ঝোপঝাড় পরিস্কার করে রাখবো। অর্থাৎ যতটা সম্ভব মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংস করে দিবো।
আগামীনিউজ : ফুটপাত দখলমুক্ত করতে কী পদক্ষেপ নিতে পারেন?
আসাদ : আসলে একটা ওয়ার্ডের ফুটপাত যখন দখল হয়ে যায়, তখন সেই ব্লেমটা ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের উপরে আসে। আমার ওয়ার্ডের এই ব্লেম আমি নিতে পারবো না। আমি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই দোকানদারদেরকে বুঝাচ্ছি যে ভাই ফুটপাততো আপনার না। অতএব এটা পরিস্কার রেখে ব্যবসা করুন। অন্যথায় আপনাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবো। এতটুকু বলার পরেই আমি দেখেছি দোকানদাররা এখন আর ফুটপাতে মালামাল রাখেন না। আবার অনেকেই দোকানের ময়লা রাস্তায় ফেলেন, আমি এ ব্যাপারেও কঠিন হুঁশিয়ারি দিয়েছি।
আগামীনিউজ : এলাকার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কী পদক্ষেপ নেবেন?
আসাদ : আমি যথাযথ ফান্ডিং পেলে পুরো ওয়ার্ডকেই সিসি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসতে চাই। এটা আসলে দেখার বিষয় সিটি কর্পোরেশন আমাকে কতটুকু ফান্ডিং দিতে পারে। তারপরেও আমি চেস্টা করবো যতটা সম্ভব সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা। এছাড়া যেসব স্থানগুলো রাতে অন্ধকার হয়ে থাকে অর্থাৎ পর্যাপ্ত লাইট নেই সেসব জায়গাগুলো আমি লাইটিংয়ের ব্যবস্থা করতে চাই। যাতে করে মাদক ও ছিনতাই রোধ করা সম্ভব হয়।
আগামীনিউজ : আপনার ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্নতায় কী করবেন?
আসাদ : শাহবাগ থেকে পরিবাগ একটা রাস্তা আছে, এটাকে আমরা নালির পাড় রোড বলি, এই রোডটাতে গাড়ি চলাচল কম করে। আমি এই রোডের ফুটপাতে পাঁচশ ফুলের গাছ বা টপের ব্যবস্থা করবো। এখানে আলোকসজ্জা করবো, বুক সেলফ থাকবে। যাতে করে মানুষজন একটু স্বস্তিতে চলাফেরা করতে পারে। এছাড়া ঢাকা ইউনিভার্সিটির বড় বড় গাছগুলোর নিচে ফোকাস লাইটের ব্যবস্থা করবো। গাছগুলোকে সংরক্ষণ করার চেষ্টা করবো। অন্যদিকে ফুটপাতগুলোতে যাতে মানুষ মলত্যাগ করতে না পারে সে জন্য ফুটপাতগুলোকে পরিস্কার ও পাবলিক টয়লেটের ব্যবস্থা করবো। আমার নির্বাচনী ইশতেহারেই রয়েছে ঢাকা ইউনিভার্সিটির টিএসসিতে একটি পাবলিক টয়লেট স্থাপন করা। কেননা বিশেষ দিনসহ প্রতিদিনই এখানে অনেক মানুষ আসেন। তাদের কথা চিন্তা করেই আমি এখানে পাবলিক টয়লেট করতে চাই।
আগামীনিউজ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়েই আপনার আলাদা পরিকল্পনা রয়েছে?
আসাদ : আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলাম। এই বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের ইতিহাসের সাথে জড়িত। আপনি দেখে থাকবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়ালে বিভিন্ন ধরনের আলপনা বা লেখা থাকে এটা আমাদের এক ধরনের ট্র্যাডিশন। আবার অনেকেই এই দেয়ালগুলো পাশেই প্রাকৃতিক কাজ সম্পন্ন করে। আমি চেষ্টা করবো এগুলো বন্ধ করতে। এছাড়া ক্যাম্পাসের যেসব এলাকায় লাইট নেই আমি বিশ্ববিদ্যালয় ও সিটি কর্পোরেশনকে বলবো লাইটের ব্যবস্থা করতে। যদি তা না হয় আমি ব্যক্তি উদ্যোগেই তা করবো। আমি মনে করি একজন কমিশনার যদি চান তাহলে তিনি তার এলাকাকে সুন্দর করে সাজাতে পারেন।
আগামীনিউজ : দায়িত্ব পালনে কোনো সীমাবদ্ধতা অনুভব করছেন কি না?
আসাদ : আসলে এখনো তো অফিসিয়ালি দায়িত্ব গ্রহণ করি নি। মে মাসের ১৭ তারিখ থেকে দায়িত্ব শুরু হবে। তবে এর মধ্যেই আমার ওয়ার্ডের এলাকাবাসীরা যারা বিভিন্ন কাগজপত্র যেমন জন্ম নিবন্ধন, চারিত্রিক সার্টিফিকেট নিতে আসেন তাদের কাজগুলোও করতে পারছি না। এই জায়গাটিতে একটু অসুবিধা হচ্ছে।
আগামীনিউজ : আগামী নিউজের পক্ষ থেকে আপনার জন্য শুভ কামনা। ধন্যবাদ আগামীনিউজকে সময় দেয়ার জন্য।
আসাদ : আমার পক্ষ থেকেও আগামীনিউজকে ধন্যবাদ।
আগামীনিউজ/আরিফ/মাসুম/মামুন