গাজায় মানবিক বিরতির পক্ষে অর্ধেকের বেশি ইসরায়েলি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক ডিসেম্বর ২, ২০২৩, ১১:০০ এএম

ঢাকাঃ ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় মানবিক বিরতি অব্যাহত রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন ৫৪ শতাংশ ইসরায়েলি। অতি সাম্প্রতিক এক জনমত জরিপে উঠে এসেছে এই তথ্য।

৭ দিনের যুদ্ধবিরতি শেষে শুক্রবার গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান ও স্থলবাহিনী দ্বিতীয় দফা অভিযান শুরু করার পর তাৎক্ষণিক এক জনমত জরিপ চালায় ইসরায়েলের থিঙ্কট্যাংক সংস্থা লাজার ইনস্টিটিউট। জরিপ থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি অব্যাহত দেখতে চান ৫৪ শতাংশ ইসরায়েলি। অন্যদিকে উপত্যকায় ইসরায়েলি অভিযান জারি রাখার মাধ্যমে জিম্মিদের মুক্তির পক্ষে রয়েছেন ইসরায়েলের ২৫ শতাংশ নাগরিক।

বাকি ২১ শতাংশ ইসরায়েলি এ প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। শুক্রবার বিকেলে জরিপের ফলাফল প্রকাশ করেছে ইসরায়েলি দৈনিক মারিভ।

গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে যুদ্ধ চলার পর জিম্মি-বন্দি বিনিময় এবং গাজায় মানবিক ত্রাণ প্রবেশের সুযোগ দিতে ২৫ নভেম্বর সাময়িক যুদ্ধবিরতি চুক্তি করে ইসরায়েল এবং গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাস। সেই বিরতি শেষ হয় শুক্রবার ভোরে উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান ও স্থলবাহিনীর অভিযান শুরুর মধ্যে দিয়ে। ২য় দফা অভিযানের শুরু থেকে এ পর্যন্ত গাজায় নিহত হয়েছেন ১৭৮ জন ফিলিস্তিনি।

শুক্রবার ভোরের দিকে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর হিলোটের বাসিন্দারা সাইরেনের শব্দে জেগে ওঠেন। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানায়, গাজা থেকে রকেট ছোড়া হয়েছিল এবং ক্ষেপণাস্ত্র সুরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে সেই রকেট আঘাত হানার আগেই তা ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে।

এই ঘটনার পর এক তাৎক্ষণিক বিবৃতিতে গাজায় ফের অভিযান শুরুর ঘোষণা দেয় আইডিএফ। গাজার হামাস নেতৃত্বাধীন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, উপত্যকার অন্তত ১০০টি স্থানে গোলা বর্ষণ করেছে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী।

গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা ইসরায়েলের ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালানোর পর ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী। পরে ১৬ অক্টোবর থেকে অভিযানে যোগ দেয় স্থল বাহিনীও।

ইসরায়েলি বাহিনীর টানা দেড় মাসের অভিযানে কার্যত ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে গাজা উপত্যকা, নিহত হয়েছেন ১৫ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। নিহত এই ফিলিস্তিনিদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি।

অন্যদিকে, হামাস যোদ্ধাদের হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয়েছিলেন ১ হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিক।

ইসরায়েলি ভূখণ্ডে হামলার চালানোর দিন এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে শত শত সামরিক-বেসামরিক মানুষকে হত্যার পাশাপাশি ২৪২ জনকে জিম্মি হিসেবে গাজায় নিয়ে গিয়েছিলেন হামাসের যোদ্ধারা। এই জিম্মিদের মধ্যে ইসরায়েলিদের সংখ্যা ১০৪ জন। বাকি ১৩৮ জনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড, জার্মানি, ফ্রান্স, আর্জেন্টিনা, রাশিয়া ও ইউক্রেনের নাগরিকরা রয়েছেন।

দেড় মাসেরও বেশি সময় যুদ্ধের পর অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে নতি স্বীকার করে গত ২৫ নভেম্বর অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ এবং হামাস। গত নভেম্বরের মাঝামাঝি যুদ্ধের অন্যতম মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতারের মাধ্যমে ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা বরাবর একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছিল হামাসের হাইকমান্ড।

সেই প্রস্তাবে গোষ্ঠীটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ইসরায়েল যদি গাজা উপত্যকায় চার দিনের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে, রাফাহ ক্রসিংয়ে অপেক্ষারত ত্রাণ, জ্বালানি ও মানবিক সহায়তা পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে প্রবেশ করতে দেয় এবং ইসরায়েলি কারাগারগুলো থেকে অন্তত ১৫০ জন বন্দিকে মুক্তি দেয়, তাহলে নিজেদের হাতে থাকা জিম্মিদের মধ্যে থেকে ৫০ জনকে ছেড়ে দেবে হামাস।

সেই প্রস্তাব মেনে নিয়ে ২৫ নভেম্বর চার দিনের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে ইসরায়েল। পরে যুক্তরাষ্ট্র, কাতার, মিসর, ইউরোপ ও অন্যান্য মধ্যস্থতাকারীদের তৎপরতায় যুদ্ধবিরতির মেয়াদ আরও তিন দিন বাড়ানো হয়।

যুদ্ধবিরতির ৬ দিন ২৫-৩০ নভেম্বর পর্যন্ত মোট ৯৪ জন জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। বিপরীতে ইসরায়েলের বিভিন্ন কারাগার থেকে ১৮০ জনকে ছেড়ে দিয়েছে ইসরায়েলও।

আনাদোলু এজেন্সি

এমআইসি